থানায় এক ধৃত। নিজস্ব চিত্র
ঘটকপুকুরের ময়লা খাল থেকে মাসখানেক আগে এক যুবকের পচাগলা দেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। তদন্তে নেমে জানা যায়, তঁার নাম সাদ্দাম মোল্লা (২৯)। বাড়ি ভাঙড় থানার চন্দনেশ্বরের জালালাবাদ এলাকায়। ত্রিকোণ প্রেমের জেরেই খুন করা হয়েছিল সাদ্দামকে, দাবি পুলিশের। এক তরুণী-সহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার তাদের ধরা হয় ভাঙড়ের চন্দনেশ্বর ও কলকাতার কাঁকুড়গাছি থেকে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম মীর শরিফুল ওরফে হাসা, রাকিবুল সাঁফুই, কাজল রজত। প্রথমজনের বাড়ি ভাঙড়ের কাশীনাথপুর, দ্বিতীয়জনের বাড়ি ভাঙড়ের রাজাপুর এবং তৃতীয়জনের বাড়ি কলকাতার কাঁকুড়গাছিতে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সাদ্দাম রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতেন। সম্প্রতি কাঁকুড়গাছি এলাকায় কাজে গিয়েছিলেন। সেখানেই পরিচয় হয় কাজল রজত নামে এক তরুণীর সঙ্গে। ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে।
হাসা কলকাতার একটি দোকানে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করে। একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় সাদ্দামের সঙ্গে শরিফুলের বন্ধুত্ব ছিল। মদের ঠেকে বসে সাদ্দাম ফোনে কাজলের সঙ্গে গল্প করছিলেন। কাজলের সঙ্গে আলাপ করতে চায় শরিফুল।
সাদ্দামের ফোন থেকে শরিফুলের সঙ্গে কথা হয় কাজলের। পুলিশ জানতে পেরেছে, দু’জনেই নিজেদের ভুয়ো পরিচয় দিয়েছিল কাজলকে। সাদ্দাম নিজের নাম বলেছিল কৃষ্ণ, শরিফুল নিজেকে আরিয়ান নামে পরিচয় দেয়।
সাদ্দামের সঙ্গে কাজলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ দিকে, শরিফুলও কাজলকে পছন্দ করত। ত্রিকোণ প্রেমের সম্পর্কে জটিলতা ঘনিয়ে আসে। সাদ্দাম ও শরিফুলের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। তদন্তকারীদের দাবি, শরিফুল সাদ্দামকে খুনের পরিকল্পনা করে।
২৪ সেপ্টেম্বর কাজ সেরে বাড়ি ফেরেন সাদ্দাম। ওই সন্ধ্যায় কয়েকজন বন্ধু তাঁকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। তারপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন সাদ্দাম। পরিবারের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। ছেলে ফিরে আসবে মনে করে পুলিশের দ্বারস্থ হননি তাঁরা।
২৭ সেপ্টেম্বর পাগলাহাটের কাছে বাসন্তী হাইওয়ের পাশে ঘটকপুকুর কাটাখাল থেকে এক যুবকের পচাগলা দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের মনে হয়েছিল, জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে যুবকের।
ঘটনার পরে স্থানীয় নারায়ণপুর পঞ্চায়েতের এক সদস্য ভাঙড় থানায় লিখিত অভিযোগে জানান, তাঁর এলাকায় অজ্ঞাতপরিচয় যুবককে খুন করে ফেলে যাওয়া হয়েছে। পরে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে দেখা যায়, যুবককে গুলি করা হয়েছিল।
এরপরেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ।
তদন্তে নেমে বাসন্তী হাইওয়ে-সহ বিভিন্ন এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয়। এই খবর বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সংবাদমাধ্যমের ছবিতে ছেলের পোশাক দেখে চিনতে পারেন পরিবারের লোকজন। সাদ্দামের পরিবার ভাঙড় থানায় যোগাযোগ করেন। পরিচয় জানা যায় নিহত যুবকের।
এ দিকে, বিভিন্ন সূত্র থেকে এবং ফোনের কললিস্ট দেখে পুলিশ মীর শরিফুল ও কাজলের যোগসূত্র খুঁজে পায়। নিখোঁজ হওয়ার দিন সাদ্দামকে চন্দনেশ্বরের একটি ফাঁকা মাঠে ডেকে নিয়ে গিয়ে মদের আসর বসানো হয়েছিল বলে জানতে পারে পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, সেখানেই শরিফুল গুলি করে খুন করে সাদ্দামকে। পরে বন্ধু রাকিবুলের মিনি ট্রাকে করে সাদ্দামের দেহ পাগলাহাটের কাছে ঘটকপুকুর খালে ফেলে দিয়ে আসে শরিফুল।
পুলিশের দাবি, জেরায় শরিফুল খুনের কথা স্বীকার করেছে। যদিও কাজল জানিয়েছে, সে কোনও ভাবেই এই খুনের সঙ্গে জড়িত নয়। ধৃতদের বুধবার বারুইপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক ৬ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy