জুটি: রেকর্ডের দুই কারিগর তনুশ্রী ও প্রিয়ঙ্কা। —নিজস্ব চিত্র।
রান তাড়া করার বিশ্বরেকর্ড গড়ে বাংলাকে সেমিফাইনালে তুলেছেন তাঁরা। এক জন সদ্য রেলওয়েজ ছেড়ে বাংলায় যোগ দিয়েছেন। অন্য জন ২০২১ সালে রেলওয়েজ থেকে বাংলায় ফিরে এসেছেন। তাঁরা— তনুশ্রী সরকার ও প্রিয়ঙ্কা বালা। পাড়ায় টেনিস বল ও প্লাস্টিক বলের ক্রিকেট খেলেই উত্থান দুই বঙ্গকন্যার।
তনুশ্রীর বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরে। ছোটবেলায় পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে বিকেলে টেনিস বলের ক্রিকেট খেলতেন। প্লাস্টিক বলে খেলতেও দ্বিধাবোধ করতেন না। হঠাৎই পাড়ার এক কাকু তাঁর খেলা দেখে তনুশ্রীর বাবাকে পরামর্শ দেন, ‘‘মেয়েকে ক্রিকেটে ভর্তি করিয়ে দাও। শ্যামনগরে যুগের প্রতীক ক্লাবে যত্ন করে ক্রিকেট শেখানো হয়। তোমার মেয়ের হাতে খেলা আছে।’’ ব্যস! জীবন পাল্টে যায় তনুশ্রীর।
প্রিয়ঙ্কার গল্পটাও অনেকটা একই রকম। পাড়াতেই বন্ধুদের সঙ্গে প্লাস্টিক বলে খেলতেন। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভক্ত বরাবরই চাইতেন উইকেটকিপিং করবেন। পাড়ার মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে খেলতে বুঝতে পারেন, ক্রিকেটে তাঁর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। নদীয়া জেলার বেতাল-এ উত্তম মণ্ডলের কাছে ভর্তি হয়ে যান প্রিয়ঙ্কা। শুরু হয় তাঁর ক্রিকেট যাত্রা। কে জানত, এক দিন ডব্লিউপিএল-এ মুম্বই ইন্ডিয়ানসের হয়ে খেলবেন। ড্রেসিংরুম ব্যবহার করবেন হরমনপ্রীত কউরদের সঙ্গে।
সোমবার হরিয়ানার বিরুদ্ধে ৩৯০ রান তাড়া করতে নেমে ১১৩ রান করার পাশাপাশি তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হন তনুশ্রী। মাঝের সারিতে নেমে ম্যাচ জেতানোর দায়িত্ব নেন প্রিয়ঙ্কা। ৮১ বলে ৮৮ রানে অপরাজিত থাকেন। ডব্লিউপিএল-এ এ বার মুম্বই ইন্ডিয়ানস তাঁকে দলে রাখেনি। কিন্তু সেই দলের অন্দরমহলে খবর, প্রিয়ঙ্কার ব্যাটিংয়ে নজর রেখেছে মুম্বই ম্যানেজমেন্ট। ধারাবাহিক ভাবে রান করতে থাকলে তাঁর জন্য আবারও খুলে যেতে পারে মুম্বইয়ের দরজা।
শেফালি বর্মার তাণ্ডবের পরে কী ভাবে ঘুরে দাঁড়াল বাংলা? কখন মনে হল এই ম্যাচ জেতা সম্ভব? তনুশ্রী বলছিলেন, ‘‘স্কোরবোর্ড দেখে খেলছিলাম না। হরিয়ানার ইনিংস শেষ হওয়ার পরেই বৈঠকে আলোচনা হয়েছিল, পিচটা ব্যাটিংয়ের জন্য আদর্শ। এখানে টিকে থাকলে রান আসবেই। আমরা সেই চেষ্টাই করেছি। বলের মান অনুযায়ী ব্যাট করেছি।’’ প্রিয়ঙ্কার কথায়, ‘‘বোর্ডে যখন দেখলাম আর ১০০ রান বাকি, তখন কিছুটা চাপ অনুভব করছিলাম। আরও সচেতন হয়ে ব্যাট করেছি।’’
দু’বছর মুম্বই ইন্ডিয়ানসে ছিলেন প্রিয়ঙ্কা। এ বার ডব্লিউপিএল-এর নিলামে অবিক্রিত। আক্ষেপ থাকলেও তা প্রকাশ করতে চাইলেন না। বলছিলেন, ‘‘মুম্বই ইন্ডিয়ানস থেকে অনেক কিছু শিখেছি। অনেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটারেরা ছিলেন। তাদের পরামর্শ পেয়েছি। সেই অভিজ্ঞতা এখন কাজে লাগছে।’’ যোগ করেন, ‘‘ভারতীয় দলে খেলার লক্ষ্য তো থাকবেই। তবে এখন প্রত্যেকটি ম্যাচ ধরে এগোতে চাইছি। যে ম্যাচই খেলি, দলকে যেন জেতাতে পারি।’’
তনুশ্রী ও প্রিয়ঙ্কার সাফল্যে মুগ্ধ বাংলার মেন্টর ঝুলন গোস্বামী। বলছিলেন, ‘‘দু’জনেই রেলওয়েজ থেকে বাংলায় এসেছে। তনুশ্রী রেলওয়েজে সাফল্য পাচ্ছিল না। ওর যেখানে ব্যাট করা উচিত, সেখানে খেলার সুযোগ পাচ্ছিল না। ও ক্লাসিক্যাল ব্যাটার। বাংলার হয়ে তিন নম্বরে ব্যাট করার সুযোগ পাচ্ছে। যা ওকে সফল হতে সাহায্য করেছে।’’ যোগ করেন, ‘‘প্রিয়ঙ্কাও অসাধারণ ক্রিকেটার। পাওয়ারহিটার। তবে মরসুমের শুরুর দিকে রান পাচ্ছিল না। কোয়ার্টার ফাইনালে ছন্দে ফিরেছে। আশা করব, শেষ দু’টি ম্যাচেও নিজের ছন্দ ধরে রাখুক।’’
রেলওয়েজ থেকে বাংলায় এসে সফল হয়েছেন দুই বঙ্গকন্যা। তাঁদের প্রাক্তন দলের বিরুদ্ধেই বাংলার সেমিফাইনাল। মেয়েদের জাতীয় ক্রিকেটে সব চেয়ে শক্তিশালী দল রেলওয়েজ। স্নেহ রানা, ডি. হেমলতা, নুজ়হাত পারভিনের মতো ক্রিকেটারেরা রয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে বাংলা কি জিততে পারবে? প্রিয়ঙ্কা বলে দিলেন, ‘‘চ্যাম্পিয়ন হয়েই ফিরব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy