প্রতিবাদী বাসিন্দারা। দেগঙ্গায় তোলা নিজস্ব চিত্র।
এক দিকে মদ বিক্রি ও জুয়ার আসরে নিঃস্ব হচ্ছেন গরিব মানুষ। অন্য দিকে, এলাকায় বাড়ছে দুষ্কৃতীদের উপদ্রব। দু’য়ে মিলে অতিষ্ঠ গ্রামের মানুষ। পুলিশ-প্রশাসনের উপরে ভরসা হারিয়ে এ বার নিজেরাই বেআইনি মদ এবং অনলাইন লটারির কারবারিদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু উল্টো দিক থেকেও হুমকি আসতে শুরু করেছে বলে অভিযোগ।
বুধবার রাতে বৈঠক করেন এলাকার বাসিন্দারা। সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেখানে। অবিলম্বে অসাধু ব্যবসায়ী এবং দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারেরও দাবি করা হয়েছে। গ্রামবাসীদের পাশে দাঁড়িয়ে বসিরহাটের সাংসদ ইদ্রিশ আলি বলেন, “কোনও রকম দুষ্কর্ম বরদাস্ত করা হবে না। অবিলম্বে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে।” পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, দেগঙ্গার বেড়াচাঁপা হয়ে হাড়োয়া যাওয়ার রাস্তার মধ্যে পড়ে হামাদামা বাজার। এলাকায় মেছোভেড়ি থাকায় এমনিতেই দুষ্কৃতীদের উপদ্রব আছে। তার উপরে বেশ কিছু দিন ধরে ওই বাজারের কয়েকটি চায়ের দোকানে অবৈধ ভাবে বিদেশি মদ বিক্রি শুরু হয়েছে। মদ কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে দুষ্কৃতীদের আনাগোনা। এলাকায় বাড়ছে চুরি-ছিনতাই। পুলিশ ইতিমধ্যেই গ্রামবাসীদের নিয়ে আরজি পার্টি তৈরি করেছে। তা সত্ত্বেও দুষ্কৃতীদের অত্যাচার বন্ধ হচ্ছে না বলে অভিযোগ। পুলিশকে জানিয়েও কাজ না হওয়ায় গত মঙ্গলবার রাতে ওই আরজি পার্টির সঙ্গে মিলে স্থানীয় বাসিন্দারা এলাকা থেকে মদ এবং জুয়া বন্ধের অভিযানে নামেন। রাত ৮টা নাগাদ হামাদামা বাজারের একটি চা বিক্রেতার দোকান থেকে চার পেটি বিদেশি মদের বোতল উদ্ধার হয়। বিক্ষোভকারীরা অনলাইন লটারির দোকান ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। খবর পেয়ে দেগঙ্গা থানার পুলিশ গিয়ে মদ এবং অনলাইন লটারির মেশিন আটক করে।
গ্রামবাসীদের দাবি, আপাতত একটি দোকানে মদ বিক্রি এবং অনলাইন লটারি খেলা বন্ধ হলেও পুলিশ অভিযুক্ত সব ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার না করায় তাদের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছে। গ্রামবাসীদের জানালেন, এলাকার একটা বড় অংশের মানুষ দরিদ্র সীমার নীচে বাস করেন। এই অবস্থার মধ্যে গ্রাম-সংলগ্ন বাজারে মদ এবং জুযার আসর বসায় সেখানে দিনের রোজগারের সর্বস্ব খুইয়ে আসছেন গ্রামের পুরুষেরা। মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরে মহিলা-শিশুদের অত্যাচার করছেন। এ সব বিষয়ে পুলিশকে জানিয়েও কোনও সুরাহা হচ্ছে না। উল্টে দুষ্কৃতীদের হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। বাসিন্দারা মিলিত ভাবে পোস্টার হাতে বিক্ষোভ দেখান।
জেলার মধ্যে প্রথম হয়ে পুরস্কার পেয়েছিল হামাদামা বাজার আরজি পার্টি। তার সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, “প্রশাসনের একাংশের মদতে এলাকায় মদ বিক্রি এবং অনলাইন লটারির নামে জুয়া খেলা বেড়েই চলেছে। সর্বস্ব খোওয়াচ্ছেন গরিব মানুষ। দুষ্কৃতীদের আনাগোনাও বাড়ছে।” তাঁর অভিযোগ, স্থানীয় তরফদারহাটি গ্রামে মদ খেয়ে এক যুবক পুকুরে পড়ে মারা গিয়েছেন। চাঁদপুর গ্রামে ভাইপোর হাতে খুন হয়েছেন কাকা। মন্দির, দোকান, বাড়িতে চুরি বেড়েছে। বাড়ছে নারীপাচার। রুহুল আমিন বলেন, “এ সবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য জেলাশাসক আমাদের আরজি পার্টিকে পুরস্কৃত করেছেন। তাই সামাজিক দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারি না। অপরাধীদের কার্যকলাপ বন্ধের জন্য এলাকার মানুষকে নিয়ে জুয়া এবং মদ বিক্রি বন্ধের অভিযানে নামা হয়েছে। কিন্তু বহু বিদেশি মদের বোতল এবং অনলাইন লটারির মেশিন পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ায় দুষ্কৃতীরা খুনের হুমকিও দিচ্ছে।” দেগঙ্গা থানার তরফে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা কমলা মণ্ডল, রুকসানা বিবিরা বলেন, “ভ্যান রিকশা টেনে স্বামীরা কোনও রকমে সংসার খরচের টাকা জোগাড় করতেন। অভাব থাকলেও শান্তিতে জীবন কাটছিল। কিন্তু মদ-জুয়ার রমরমা শুরু হওয়ার পর থেকে সংসারে অশান্তি লেগে রয়েছে। স্বামীরা দিনভর খেটে যা আয় করেন, তা জুয়া-মদে উড়িয়ে দিচ্ছেন। সংসার খরচের কথা বললে শুরু হচ্ছে অশান্তি, মারধর। ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করতে পারছে না। আমরা চাই, যে ভাবেই হোক জুয়া-মদ বন্ধ হোক।” প্রয়োজনে মহিলারা ফের রাস্তায় নেমে অবৈধ কারবারের প্রতিবাদ করবেন বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। এর আগেও কয়েকবার দেগঙ্গার বেড়াচাঁপা এলাকায় মদ-জুয়া রুখতে রাস্তায় নেমেছেন মহিলারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy