নির্মীয়মাণ অতিথিশালা।—নিজস্ব চিত্র।
এমনিতেই কাজ হচ্ছিল ঢিমে তালে। এর মধ্যে নদীমুখো ঘর তৈরি হয়ে যাওয়ার পরে কর্তাদের খেয়াল হল, জানলাগুলো আরও নামানো দরকার, যাতে পর্যটকেরা ঘরে বসে বা শুয়েই নদী দেখতে পারেন।
শুধু কি এই? যে মাপের যতগুলি ঘর হবে বলে আগে ঠিক হয়েছিল, সেই হিসেবও বদলাচ্ছে। কিছু ঘর ভেঙে তৈরি করা হচ্ছে স্যুইট। সব মিলিয়ে ডায়মন্ড হারবারে রাজ্য পর্যটন দফতরের অতিথিশালা তৈরির খবর তো বেড়েইছে, সময়সীমাও পিছিয়ে চলেছে। নির্মাণের দায়িত্বে থাকা পূর্ত দফতরে অফিসারেরা এর কোনও দায় নিতে তো চাইছেনই না, বরং ঠারেঠোরে পর্যটন দফতরের ‘খামখেয়াল’কেই দায়ী করছেন।
ডায়মন্ড হারবারে তাদের অতিথিশালা ‘সাগরিকা’র ঠিক পাশে আর একটি চারতলা অতিথিশালা তৈরির পরিকল্পনা বছর দুই আগেই করে ফেলেছিল পর্যটন দফতর। ঠিক হয়, তাদের তরফে সেটি তৈরি করবে পূর্ত দফতর। কিন্তু নানা কারণে কাজ চলে ঢিমেতালে। রাজ্যের পর্যটন সচিব অজিতরঞ্জন বর্ধন পদস্থ অফিসারদের নিয়ে এ ব্যাপারে এক বৈঠকে বসেন। নির্মাণ-নকশার ব্যাপারে প্রকাশ্যে ক্ষোভও জানান তিনি।
পুরনো অতিথিশালা। —নিজস্ব চিত্র।
এর পরেই ঠিক হয়েছে, চারতলার ছ’টি ঘর ভেঙে ফেলে তিনটি প্রশস্ত স্যুইট করা হবে। এর আগে ঠিক ছিল, দোতলা থেকে চারতলা পর্যন্ত প্রতিটি তলে ছ’টি করে সমান মাপের ঘর অর্থাৎ মোট ১৮টি ঘর তৈরি হবে। এখন তা বদলে যাচ্ছে ১২টি ঘর এবং তিনটি স্যুইটে। সব ঘরের মোহনামুখী জানালা প্রায় আড়াই ফুট নিচু করে দেওয়া হবে। তার জন্য সামনের দিকের প্রতিটি জানলার নীচের অংশও বেশ কিছুটা করে ভাঙতে হচ্ছে।
অজিতবাবুর বক্তব্য, “ঘরে বসে বা শুয়ে মোহনা দেখার সুযোগ না দিলে লোকে আসবে কেন?” পর্যটন দফতরের এক পদস্থ অফিসারের মন্তব্য, “কীসের জন্য প্রকল্পটি হচ্ছে, নকশা তৈরি ও নির্মাণের সময় সেটা তো অনুভব করতে হবে!” অর্থাৎ ইঙ্গিতটা কার্যত পূর্ত ইঞ্জিনিয়ারদের দিকেই। প্রকল্পের নকশার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক ইঞ্জিনিয়ার পাল্টা বলেন, “ঠিক কোথায়, কী মাপের ভবন তৈরি হবে, পর্যটন উন্নয়ন নিগম সেটা জানানোর পরেই নকশা তৈরি হয়েছিল। সেই মতোই নির্মাণ হয়েছে।”
বরং পূর্তকর্তাদের মতে, জানলা না নামালেও ঘর থেকে মোহনা দিব্যি দেখা যেত। আর নিচু জানলা বা স্যুইট যদি করতেই হত, তা আগেই করা উচিত ছিল। তাতে সময় কম লাগত, খরচও অন্তত চার লক্ষ টাকা কম হত। ভাঙাভাঙির জন্য অতিরিক্ত সময় ও অর্থ যাবে, তা স্বীকার করেও পর্যটন সচিব অবশ্য বলেন, “কী বলব বলুন! এত টাকার প্রকল্প! পর্যটকদের আকৃষ্ট করার দিকটা তো নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই নিশ্চিত করতে হবে!”
প্রকল্পটির পরিকল্পনা হয়েছিল বিক্রম সেন পর্যটন সচিব থাকাকালীন। তিনি অবসর নিয়েছেন বেশ কিছু দিন হয়ে গেল। কী সমস্যা দেখা দিয়েছিল বা কেন প্রকল্পটি এখনও হয়নি, তা তিনি জানাতে পারেননি। তবে পূর্ত দফতরের জেনারেল ম্যানেজার (টেকনিক্যাল) প্রবীর সিংহ বলেন, “নির্দিষ্ট কিছু কারণে ঠিক সময়ে কাজ শেষ করা যায়নি। তার উপরে ফের বদল বা ভাঙাভাঙি করতে হবে।”
প্রকল্পটি কত টাকার? প্রবীরবাবু বলেন, “আগের তুলনায় খরচ একটু বেড়েছে। এখন হয়েছে ১ কোটি ৮৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।” তবে তাঁর মতে, নতুন করে ভাঙাভাঙি এবং কিছু বাড়তি গাঁথনির জন্য খুব বেশি খরচ হবে না। পর্যটন দফতর তো নয় হালে কিছু বদল চেয়েছে। এর আগে দেরি হল কেন? প্রবীরবাবু বলেন, “বাড়িটিতে বাড়তি বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সাবস্টেশন তৈরির কথা হচ্ছিল। নানা কারণে সেটি করা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত বিদ্যুৎ পর্ষদ থেকে দু’টি ট্রান্সফরমার মিলেছে। নয়া সাবস্টেশন ছাড়াই কাজ চলে যাবে।” নতুন অতিথিশালার দোতলা থেকে পাশে ‘সাগরিকা’-র সংযোগকারী বারান্দা কোথায় তৈরি হবে, তার সঠিক স্থান নির্বাচনে ঐকমত্য আসতেও বাড়তি সময় লেগেছে বলে তাঁর দাবি।
নির্মীয়মান অতিথিশালার ঠিক পাশেই রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন নিগমের দু’টি পুরনো অতিথিশালা তালাবন্ধ হয়ে পড়ে আছে। সেগুলি সংস্কার করে কতটা মানোন্নয়ন করা সম্ভব, তা নিয়ে আতান্তরে পর্যটন অফিসারেরা। নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রজত বসু এ প্রসঙ্গে শুধু বলেন, “আমি নতুন দায়িত্বে এসেছি। আলোচনা করে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন।” প্রবীরবাবু বলেন, “প্রাথমিক ভাবে দেখা গিয়েছে, ওই দু’টি ভবন ‘কনডেমনড’ বা বিপজ্জনক। ওরই একটিকে ভেঙে সাবস্টেশন করার কথা হচ্ছিল। তবে পর্যটন নিগম যা করতে বলবে, আমরা ওখানে তা-ই করে দেব। আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে নতুন প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাবে বলেও তাঁর আশা।
সহ প্রতিবেদন শান্তশ্রী মজুমদার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy