চলছে টাউন হলের নির্মাণ। যা নিয়ে ‘ঢিলেমির’ অভিযোগ তুলেছেন শহরবাসী।
আশায় বুক বেঁধেছেন গোবরডাঙার বাসিন্দারা। শহরের টাউন হল তৈরির কাজ শুরু হয়েছে ১৮ অক্টোবর থেকে। পাঁচ কোটি টাকা খরচ করে পুরসভা কাজটি করছে, বিধায়ক, সাংসদদের তহবিল থেকেও অনুদান মিলেছে। স্থানীয় বাসিন্দারও দান করেছেন অকাতরে। কবে শেষ হবে নির্মাণের কাজ, কবে নয় দশক প্রাচীন টাউন হলের শূন্যস্থানে মাথা তুলবে নতুন টাউন হল, দিন গুণতে শুরু করেছেন নাট্যপ্রেমীরা।
নাট্যপ্রেমীদেরই তো শহর গোবরডাঙা। ‘ভিলেজ অফ থিয়েটার’ বলে পরিচিত উত্তর ২৪ পরগনার এই মফস্সল শহরে নাট্যচর্চার ইতিহাস ১৪০ বছরের। এই শহরকে বাদ দিয়ে রাজ্যের থিয়েটারের ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যায়। ‘আর্যরঙ্গভূমি’ দলটি দিয়ে সেই ইতিহাস শুরু। তারপর যুক্ত হয় ‘গোবরডাঙা কানাই নাট্যশালা।’ ক্রমে তৈরি হয় প্রগতি সংসদ, ডায়মণ্ড ক্লাব, রূপক-এর মতো নাটকের দলগুলি। এরা এখন আর না থাকলেও, গোবরডাঙায় নাট্যচর্চার ভিতটি তৈরি করে দিয়ে গিয়েছে।
ছোট-বড়, পেশাদার-অপেশাদার মিলিয়ে এখন নাটকের দলের সংখ্যা প্রায় ২৫টির মতো। এর মধ্যে পাঁচটি দলকে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সাহায্য পেয়ে থাকে। ‘শিল্পায়ন’, ‘নকশা’, ‘কথাপ্রসঙ্গ’, ‘রূপান্তর’, ‘স্বপ্নচর’, ‘চিত্রপট’, ‘রবীন্দ্র নাট্যসংস্থা’ শহরের নাট্যদলগুলির মধ্যে প্রথম সারিতে জায়গা করে নিয়েছে।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় থেকে দেবশঙ্কর হালদার, কে না অভিনয় করেছেন গোবরডাঙায়? বিভাস চক্রবর্তী (কাল বা পরশু), সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (প্রাণতপস্যা), রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত (আন্তিগোনে), দেবশংকর হালদার (উইংকল টুইংকল), ব্রাত্য বসু (ব্যোমকেশ) অভিনয় করে গিয়েছেন গোবরডাঙায়।
প্রায় ৩৫ বছরের পুরনো ‘শিল্পায়ন’-এর কর্ণধার আশিস চট্টোপাধ্যায় ‘কর্নেলকে কেউ চিঠি লেখে না’ নাটকের জন্য নির্দেশনায় পশ্চিমবঙ্গ নাট্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন। চৌত্রিশ বছরের নাট্যদল ‘নকশা’-র নাটক ‘খড়ির গণ্ডি’ সাড়া ফেলেছিল। শুধু নাটক মঞ্চস্থ করাই নয়, নাট্য উৎসব, কর্মশালারও আয়োজন করা হয়। কর্মশালাগুলিতে শুধু এলাকারই নয়, হুগলি, চন্দননগর, হালিশহর, নৈহাটি-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকেও ছেলেমেয়েরা যোগ দেন। নাট্যচর্চাকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পথশিশু, বস্তি ও রেল কলোনি পরিবারের ছেলেমেয়েদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নাট্যচর্চা করে আসছে ‘রবীন্দ্র নাট্য সংস্থা।’ নাটকের মাধ্যমে স্কুলছুটদেরও সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হয়েছে। নাটকের দলগুলিকে উৎসাহ দিতে পুরসভার তরফে নাট্য উৎসবের আয়োজন সম্ভবত গোবরডাঙাতেই প্রথম।
অস্থায়ী মঞ্চেই নাট্যাভিনয়।
নাটক-অন্ত-প্রাণ এই শহরে দীর্ঘদিনের চাহিদা নিয়মিত নাট্যচর্চার জন্য আধুনিক, স্থায়ী মঞ্চ। ২০০০ সালের বন্যায় ৯০ বছরের পুরনো, জীর্ণ টাউন হল কার্যত ধূলিসাৎ হয়ে পড়ে। সেটি ভেঙে পূর্ণাঙ্গ অডিটোরিয়াম তৈরির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন শহরবাসী। ২০১০ সালে বাম আমলে নতুন করে তা নির্মাণের জন্য শিলান্যাসও হয়। কিন্তু কাজ আর এগোয়নি। রাজ্যে ক্ষমতা বদলের পরে ফের আর এক বার শিলান্যাস হয়। দীর্ঘ টালবাহানার পরে কাজ শুরু হলেও তা চলছে ঢিমেতালে। তা নিয়ে নতুন করে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। স্থায়ী মঞ্চ না থানায় এখন অস্থায়ী মঞ্চ গড়া হয় গোবরডাঙা মনসাবাড়ির কাছে গোবরডাঙা সংস্কৃতি কেন্দ্র, কিংবা গড়পাড়া বিধান স্মৃতি ক্লাবের মাঠে।
টাউন হলের নির্মাণ নিয়ে রাজনীতির অভিযোগও তুলেছেন অনেকে। ২০১০ সালে তৎকালীন বাম পরিচালিত পুর বোর্ড নতুন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরিতে উদ্যোগী হয়। ২০১০ সালের ১০ এপ্রিল রাজ্যের তৎকালীন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য নতুন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের শিলান্যাস করেন। কিন্তু ওই বছরেই পুর নির্বাচনে বামেরা হেরে যায়। তৃণমূল তারা ক্ষমতায় এসে ১৮ মার্চ ২০১২ সালে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মুকুল রায়কে দিয়ে ফের একবার ওই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের শিলান্যাস করায়। তারপরও কাজ শুরু হয়নি দীর্ঘদিন।
সম্প্রতি অবশ্য টাউন হল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা প্রাক্তন পুর চেয়ারম্যান, সিপিএমের বাপি ভট্টাচার্য বলেন, “পাঁচ বছরের মধ্যে টাউন হল তৈরির কাজ শেষ করবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড। কিন্তু তা পারেননি।’ কী বলছেন চেয়ারম্যান সুভাষ দত্ত? তাঁর কথায়, “প্রস্তাবিত সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি তৈরি করতে ৫ কোটি টাকা খরচ। ওই ব্যয়ভার একা পুরসভার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়।”
তবে গোবরডাঙার আশঙ্কা, ২০১৫ সালে ফের পুরসভার নির্বাচন। গত পাঁচ বছরে কাজ শেষ হল না। পরবর্তী ভোটে কী রাজনৈতিক সমীকরণ দাঁড়াবে, তার উপরও টাউন হলের ভাগ্য ঝুলে থাকবে অনেকটাই।
ছবি: শান্তনু হালদার।
(শেষ)
কেমন লাগছে আমার শহর?
আপনার নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ।
Subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-গোবরডাঙা’।
অথবা চিঠি পাঠান, ‘আমার শহর’, হাওড়া ও হুগলি বিভাগ, জেলা দফতর,
আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা- ৭০০০০১
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy