রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের বিক্ষোভ-সমাবেশে যাচ্ছেন আব্দুল মান্নান (বাঁ দিকে) এবং সূর্যকান্ত মিশ্র। শুক্রবার। ছবি: সুমন বল্লভ।
সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারি এবং অন্যান্য বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের দাবি আগেই উঠেছে। এ বার দাবি উঠল, সুপ্রিম কোর্ট সহারা গোষ্ঠীর কর্ণধারের বিরুদ্ধে যে-ব্যবস্থা নিয়েছে, সারদা-সহ বিভিন্ন অর্থ লগ্নি সংস্থার ক্ষেত্রেও সেই ব্যবস্থা নেওয়া হোক। অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলির হাতে প্রতারিত আমানতকারী ও এজেন্টরা এই দাবি তুলেছেন। এবং তা সমর্থন করেছেন বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান-সহ বিরোধী নেতারা।
শুক্রবার ধর্মতলার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে আমানতকারী ও এজেন্টদের বিক্ষোভ-সমাবেশে রাজ্যের বিরোধী দলগুলির নেতারাও যোগ দেন। তাঁরা জানান, সর্বোচ্চ আদালত সহারা সংস্থার কর্ণধারকে কয়েক হাজার কোটি টাকা জমা রাখার নির্দেশ দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ এবং প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতে সারদা এবং অন্য যে-সব বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থা জনগণের টাকা আত্মসাৎ করেছে, তাদের বিরুদ্ধেও সহারা গোষ্ঠীর মতোই ব্যবস্থা নিতে হবে।
সহারার কর্ণধার সুব্রত রায় এখন তিহাড় জেলে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, সহারার আমানতকারীদের ২০ হাজার কোটি টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে। আর সুব্রতবাবুর জামিনের জন্য জমা রাখতে হবে নগদ পাঁচ হাজার কোটি টাকা। সেই সঙ্গে দিতে হবে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি। সহারা এখনও পর্যন্ত সেই টাকা জমা রাখার ব্যবস্থা করেনি। সারদার ভরাডুবিতে ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারী ও এজেন্টদের টাকা উদ্ধারের প্রসঙ্গে এ দিন ধর্মতলার সমাবেশে সহারার কথা বারবার ওঠে।
সারদা গোষ্ঠীর অসংখ্য ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারী এবং এজেন্টের মধ্যে খুব অল্প সংখ্যক প্রাপকেরই টাকা ফেরানোর ব্যবস্থা হয়েছে। বাকিরা কী ভাবে টাকা ফেরত পাবেন, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। এই প্রেক্ষিতেই রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু এ দিনের বিক্ষোভ-সমাবেশে বলেন, “সারদা-সহ বিভিন্ন বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থার কার্যকলাপ নিয়ে ২০১১ সালের অগস্টেই রাজ্য সরকারকে সতর্ক করেছিলাম। কিন্তু সরকার সতর্ক হয়নি।” বিরোধী দলনেতা জানান, সুপ্রিম কোর্ট বারবার রাজ্য সরকারকে বলছে, সারদা গোষ্ঠীর টাকা কোথায় গেল, তা জানাও। কিন্তু সরকার তা জানাতে পারছেন না বলে তাঁর অভিযোগ। সারদা কাণ্ডে কারা লাভবান হয়েছে, সেই বিষয়ে রাজ্যকে হলফনামা পেশের নির্দেশ দিয়েছিল সর্বোচ্চ আদালত। রাজ্য চলতি সপ্তাহেই সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে, সারদা কাণ্ডে কয়েক জন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-সহ বেশ কিছু রাজনৈতিক নেতার ভূমিকা নিয়ে তদন্ত হয়েছে। তাঁদের নাম মুখবন্ধ খামে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। শীর্ষ আদালতে সেই মামলার পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা ১৬ এপ্রিল।
সারদার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে কেন্দ্রীয় এনফোর্সমেন্ট দফতর (ইডি)। মামলা চলছে কলকাতা হাইকোর্টেও। তবে সহারার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা রাখার যে-নির্দেশ দিয়েছে, সারদা বা রাজ্যের অন্য অর্থ লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে তেমন কোনও ব্যবস্থা এখনও নেওয়া হয়নি। এ দিনের সভায় বিশেষ ভাবে ওই ব্যবস্থার উপরে জোর দেন বক্তারা।
সমাবেশে শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী আব্দুল মান্নান অভিযোগ করেন, আর্থিক কেলেঙ্কারি সঙ্গে রাজ্য সরকার জড়িত। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি এক কোটি ৮৬ লক্ষ টাকায় কিনলেন সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। কিন্তু সেই ছবি কোথায় গেল, তা কোনও পুলিশ অফিসার বলতে পারছেন না!”
প্রাক্তন আইপিএস অফিসার নজরুল ইসলামকে আমানতকারী ও এজেন্টদের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ-সমাবেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তিনি বলেন, “২০১২ সালের ১৩ জুলাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সবিস্তার নথিপত্র-সহ বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলির কার্যকলাপের কথা জানিয়েছিলাম। বলেছিলাম, ভারতীয় দণ্ডবিধিতেই প্রতারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
আমানতকারী ও এজেন্টদের সংগঠনের আহ্বায়ক প্রাক্তন নকশাল নেতা অসীম চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, রাজ্য সরকার তাঁদের দাবিমতো ব্যবস্থা না-নিলে তাঁরা ২ মে থেকে রেল ও রাস্তা অবরোধে নামবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy