রাস্তায় বাস কম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার জন্য পথে বাস কম থাকায় দুর্ভোগে পড়েন নিত্যযাত্রীরা। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও বাস না মেলায় অটো-ট্রেকারে করেই গন্তব্যে পৌঁছতে বাধ্য হন অনেকে। মেদিনীপুর থেকে ঝাড়গ্রাম, খড়্গপুর থেকে ঘাটাল, সর্বত্রই দুর্ভোগের এই একই ছবি চোখে পড়ে। পথে যে অন্য দিনের চেয়ে অনেক কম বাস ছিল তা মানছেন বাস মালিক সংগঠনও। জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মৃগাঙ্ক মাইতি বলেন, “এ দিন খড়্গপুরে সভা ছিল। সভার জন্য বেশ কিছু বাস ভাড়া করা হয়। তাই পথে কম বাস ছিল। তবে পরিবহণ ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েনি। বেশ কিছু এলাকায় সমস্যা হয়। বুধবার থেকে পরিবহণ ব্যবস্থা পুরোপুরি সচল থাকবে।”
মঙ্গলবার খড়্গপুরে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংগঠনিক সভা ছিল। সভার জন্য প্রতি ব্লক থেকেই দলের কর্মীরা গিয়েছেন। বেশির ভাগ কর্মীই বাস ভাড়া করে গিয়েছেন। সোমবারও পথে বাস ছিল অনান্য দিনের থেকে কম। কারণ, ওই দিন মেদিনীপুরে জঙ্গলমহল কাপের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠানে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী। জঙ্গলমহল এলাকার খেলোয়াড়দের বাস করেই মেদিনীপুরে আনা হয়। জানা গিয়েছে, জঙ্গলমহলের প্রায় ৩৪ হাজার খেলোয়াড় ওই দিন মেদিনীপুরে আসেন। এঁদের মধ্যে প্রায় ১৬ হাজার জনই পশ্চিম মেদিনীপুরের। জেলার জঙ্গলমহলের এই সংখ্যক খেলোয়াড়দের আনার জন্য প্রায় ৪৫০টি বাস ‘বুক’ করা হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের উপর দিয়ে প্রতিটি প্রায় ৮০০টি বাস চলাচল করে। এরমধ্যে জেলার জঙ্গলমহল এলাকার উপর দিয়ে প্রায় ৫০০টি বেসরকারি বাস চলাচল করে। বাস মালিক সংগঠন সূত্রে খবর, তৃণমূলের সভার জন্য অধিকাংশই বাসই এদিন পথে বেরোতে পারেনি। কয়েকটি বাস আবার সকালের দিকে চলেছে। তারপর ভাড়ায় চলে গিয়েছে। পথে বাস কম থাকায় এদিন জেলার বিভিন্ন রুটের অটো- ট্রেকারে ভীড় ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকে বাদুরঝোলা হয়ে যাতায়াত করেছেন। বহু যাত্রী আবার বাসের জন্য এসে দীর্ঘক্ষণ মেদিনীপুর- খড়্গপুরের মতো বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করেছেন। জেলা তৃণমূলের এক নেতা অবশ্য বলেন, “পথে বেরিয়ে যাঁরা সমস্যায় পড়েছেন, তাঁদের কাছে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। তবে এত বড় সভা হলে তো কিছু বাস নিতেই হয়। না হলে দলের কর্মীরা সভায় আসবেন কী করে? বাস তুলে নিলে যে সমস্যা হয়, সেটা আমরা জানি। তাই কর্মীদের ট্রেকার-পিক আপ ভ্যান- ছোট লরি ভাড়া করে সভায় আসার কথাও বলা হয়েছিল।”
অন্য দিকে, মঙ্গলবার খড়্গপুরে তৃণমূলের কর্মিসভার জন্য ঝাড়গ্রামের লোধাশুলিতে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে তৃণমূল কর্মীরা বাসের দখল নেন বলে অভিযোগ। এমনকী কর্মিসভায় যাওয়ার জন্য শাসক দলের লোকজনও এ দিন বেশ কিছু ছোটগাড়িও দখল করে নেন বলে অভিযোগ। এর ফলে, কাজের দিনে বাস ও যানবাহনের অভাবে ভীষণই সমস্যায় পড়েন আমজনতা। বাসের অভাবে এ দিন জঙ্গলমহলের যাত্রীবাহী ট্রেকারগুলিতে ছিল অত্যাধিক ভিড়। কয়েকটি জায়গায় সুযোগ বুঝে পিক আপ ভ্যান ও ছোট গাড়িগুলি দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি ভাড়ায় যাত্রী পরিবহণ করেছে।
মৃগাঙ্ক মাইতি বলেন, “জেলায় বেসরকারি বাসের সংখ্যা আটশো। পুলিশ-প্রশাসন গত দু’দিনে মোট সাড়ে ছ’শো বাস নিয়েছিল। ফলে, গত দু’দিন খুবই কম বাস চলেছে। এ জন্য যাত্রীদের সমস্যা হয়েছে।” মঙ্গলবার খড়্গপুরে মুখ্যমন্ত্রীর দলীয় কর্মিসভায় যোগ দেওয়ার জন্য কত বাস নিয়েছে তৃণমূল? ইতস্তত হয়ে মৃগাঙ্কবাবু বলেন, “রাজনৈতিক দলের (তৃণমূল) কর্মসূচির জন্য কত বাস নেওয়া হয়েছে, সেই তথ্য এখনও সংগ্রহ করা হয় নি।” বাস মালিক সংগঠনের নেতা মৃগাঙ্কবাবু যাত্রী-দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, “এ দিন জেলার অন্যত্র কিছু বাস চললেও, জঙ্গলমহলে খুবই কম সংখ্যায় বাস চলেছে।” যাত্রী নামিয়ে বাস দখলের অভিযোগ প্রসঙ্গে মৃগাঙ্কবাবুর জবাব, “এমন ঘটনার অভিযোগ কেই করেননি।”
এ দিন কিছু দূরপাল্লার কিছু বাস চললেও ঝাড়গ্রাম, বিনপুর, শিলদা, বেলপাহাড়ি ও নয়াগ্রামের রাস্তায় সে ভাবে যাত্রীবাহী বাসের দেখা মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy