তৃণমূল সরকার জমি অধিগ্রহণ না করার নীতি নেওয়ায় তার খেসারত দিতে হচ্ছে তিস্তা সেচ প্রকল্পকেও। জমি পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার জেরে প্রকল্পের পরিধিই কাটছাঁট করছে সেচ দফতর।
সেই ২০০৯ সালেই কেন্দ্র জানিয়ে দিয়েছিল, তিস্তা সেচ প্রকল্পকে ২০১৫ সালে শেষ করতে হবে। বাম আমলে ঢিমেতালে হলেও কাজ এগোচ্ছিল। তৃণমূল জমানায় কিন্তু এতটুকুও জমি নেওয়া হয়নি। জলপাইগুড়ি থেকে কোচবিহার, শিলিগুড়ি থেকে উত্তর দিনাজপুরের অনেক এলাকায় সেচ খাল তৈরির কাজ তাই থমকে রয়েছে। তাই এখন প্রকল্প সঙ্কোচন করতে চায় সেচ দফতর। তাতে অন্তত ৭০ হাজার হেক্টর জমি প্রকল্পের আওতার বাইরে চলে যাবে। বেসরকারি হিসেবে বাদ যাওয়া জমির পরিমাণ ১ লক্ষ হেক্টর ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সেচ দফতর সূত্রের খবর, কোথাও এখনও জমি নেওয়া হয়নি, কোথাও জমি দিতে আপত্তি করছেন চাষিরা। ওই সব এলাকাই প্রকল্প এলাকা থেকে বাদ দেওয়া হবে। এই প্রকল্পের বরাদ্দের ৯০ শতাংশই কেন্দ্রীয় কোষাগার থেকে আসে। সে কারণে প্রকল্পের ‘কমান্ড এরিয়া’র পরিবর্তন করতে হলে দিল্লির অনুমতি প্রয়োজন। বুধবার শিলিগুড়িতে তিস্তা প্রকল্পের দফতরে এক বৈঠকের পরে সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, প্রকল্পের নয়া নকশা অনুমোদনের জন্য দ্রুত দিল্লিতে পাঠানো হবে।
মূল প্রকল্পে লক্ষ্য ছিল ৯ লক্ষ হেক্টর জমিতে জল দেওয়া হবে। রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে প্রকল্প শেষ করার সময়সীমা দু’বছর বাড়ানোর আর্জি জানানো হয় দিল্লিকে। তবে ২০১৫ সালের মধ্যেই প্রাথমিক ভাবে ৩ লক্ষ ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের জল পৌঁছে দেওয়া হবে বলেও কেন্দ্রকে জানায় সেচ দফতর। যদিও সেই কাজটুকু করতে গেলেও এখন অন্তত সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে রাজ্য সরকারকে। সেই সঙ্গে আদালতে জমে থাকা ৪৯টি মামলার মীমাংসা হতে হবে। তাই এখন সরকারি ভাবে আরও ৭০ হাজার হেক্টর এলাকা প্রকল্প থেকে কমাতে চাইছে রাজ্য।
তবে দফতরের তথ্য বলছে, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে প্রকল্পের জন্য জমি নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছিল। কিন্তু একাধিক সরকারি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বারবার ‘জোর করে’ জমি অধিগ্রহণ না করার নির্দেশ দেওয়ায়, জমি নিয়ে বিরোধ-আপত্তি মেটানোর প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যেতে আর ‘ভরসা’ পাননি আধিকারিকেরা।
সেচমন্ত্রীর অবশ্য দাবি, বাম আমলে এই প্রকল্পে এমন এলাকাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেখানে জলসেচের প্রয়োজনই নেই। যেখানে প্রয়োজন, সেখানে জল পৌঁছয়নি। সে কারণেই প্রকল্প পরিবর্তনের কাজ চলছে। জমি-জট প্রসঙ্গে মন্ত্রীর মন্তব্য “দীর্ঘদিন ধরেই কিছু এলাকায় জমি নিয়ে জটিলতা রয়েছে। জমি জটের কারণে পুরো প্রকল্প রূপায়ণে অনর্থক সময় লাগছে। তাই ওই এলাকাগুলিতে বিকল্প ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।” তাঁর দাবি, আগামী বছরেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
প্রকল্প সঙ্কুচিত হলে কোচবিহারের দিনহাটা, জামালদহ, হলদিবাড়ি, মেখলিগঞ্জ থেকে শুরু করে জলপাইগুড়ির মণ্ডলঘাট, বোয়ালমারি, উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর, চোপড়া ও মালদহের কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে সেচের জল পৌঁছবে না। চোপড়ার বাসিন্দা পেশায় কৃষক মুকুল সরকার বলেন, “প্রকল্প থেকে আমাদের বাদ দিয়ে দিলে, চাষ করে স্বনির্ভর হওয়ার পরিবর্তে মহাজনী ঋণের ভরসাতেই থাকতে হবে।” ক্ষুব্ধ প্রাক্তন সেচমন্ত্রীরাও। কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া বলেন, “যে তিস্তার জল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এত লড়াই করে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি আটকে দিয়েছেন, সেই তিস্তার জল এখন দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহার, মালদহে কেন যাবে না?” সেচ দফতরের বক্তব্য, প্রকল্প সঙ্কুচিত হলে বাদ পড়া এলাকাগুলিতে ক্ষুদ্র সেচের উপরে জোর দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy