উত্তর পূর্ব ভারতের নাগা জঙ্গিদের একাংশের কাছ থেকে অস্ত্র এনে দার্জিলিং পাহাড়ে অশান্তির ছক কষা হয়েছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে অসম ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছে। কারণ, অসমে অস্ত্র নিয়ে ধৃত দুই ব্যক্তির মধ্যে একজন, উমেশ শর্মা, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গী সংগঠন গোর্খাল্যান্ড পার্সোনেল (জিএলপি)-র প্রথম সারির প্রশিক্ষিত সদস্য বলে জানা গিয়েছে। উমেশ দার্জিলিঙে এক বড় মাপের মোর্চার নেতার গাড়ি চালাতেন। ইদানীং তিনি অসম, নাগাল্যান্ডে যাতায়াত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। বেআইনি অস্ত্রের কারবারের সঙ্গে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার যুব সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক সঞ্জয় ঠুলুঙ্গের যোগসাজশ কতটা, তা নিয়ে পুলিশ এখনও ধন্দে।
রবিবার রাত থেকে কয়েক দফায় টুলুঙ্গের দুটি বাড়ি ও কয়েকটি এলাকায় তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। কিন্তু, ওই মোর্চা নেতা তথা জিটিএ-র তাকদা এলাকার সদস্য ঠুলুঙ্গকে ধরা যায়নি। তাঁর স্ত্রী ও ভাইকে পুলিশ জেরা করে ছেড়ে দিয়েছে। ঠুলুঙ্গের বাড়ি থেকে একটি ক্যামেরা, অ্যালবাম ও মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, “সঞ্জয় ঠুলুঙ্গকে খোঁজা হচ্ছে।”
মোর্চার কালিম্পঙের বিধায়ক হরকাবাহাদুর ছেত্রী বলেছেন, “সঞ্জয় ভাল ছেলে বলেই জানি। অসমে যে দু’জন ধরা পড়েছেন তাঁরা কেন ওঁর নাম বললেন জানি না। এখনও তো সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে কোনও তথ্য মেলেনি।” হরকার অভিযোগ, মোর্চার বদনাম করার জন্য ঠুলুঙ্গের নাম জড়ানো হতে পারে।
আশির দশকে সুবাস ঘিসিঙ্গ-এর আন্দোলনের সময়ে কয়েকজন কট্টরপন্থী পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া রাইফেল ব্যবহার করেছিলেন বলে অভিযোগ। ২০০০-এ কালিম্পঙের তিনকাটারি এলাকায় নাগা জঙ্গিদের এনে অস্ত্র প্রশিক্ষণের ঘটনা সামনে আসে। পরে ঘিসিঙ্গের উপরে জঙ্গি হামলা হয়। ওই সময়ে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে সশস্ত্র লড়াইয়ের ডাক দেওয়া নেতা ছত্রে সুব্বা গ্রেফতার হন। দীর্ঘ ১০ বছর জেলে থাকার পরে তিনি ছাড়া পান। বৃদ্ধ ছত্রে এখন রাজনীতি করেন না বলে পুলিশ সূত্রের খবর। কিন্তু, তাঁর ছেলে সশস্ত্র লড়াইয়ের চেষ্টা করেছিলেন বলে পুলিশের অভিযোগ। ছত্রের ছেলের সঙ্গে মোর্চার কট্টরপন্থীদের কারও তলে তলে যোগাযোগ হয়েছে কি না, তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে। ইতিমধ্যেই দার্জিলিং পুলিশ জেনেছে, মাস দুয়েক আগে নাগাল্যান্ডের দু’জন সন্দেহভাজনকে দার্জিলিঙের কয়েকটি এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছিল।
মোর্চার অন্দরের খবর, দলের যুব সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক ঠুলুঙ্গ-এর বয়স প্রায় ৪০ বছর। তিনি মোর্চার হয়ে লেখালেখি করতেন। দলীয় মুখপত্রেও লিখতেন। যুব সংগঠনে থাকার সুবাদে ভোটে দাঁড়িয়ে জিটিএ সদস্য নির্বাচিত হন। অতীতে কোনদিন ঠুলুঙ্গের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেনি। কখনও গ্রেফতার হননি।
মোর্চা নেতারা অস্বীকার করলেও উমেশ কামি যে জিএলপি-র সঙ্গে যুক্ত ছিল সে দাবি করেছেন তাঁর পরিবারের লোকজন। গত শনিবার অসমের চিরাং জেলায় পুলিশ প্রচুর অত্যাধুনিক অস্ত্র বোঝাই গাড়ি-সহ পুলিশ উমেশ ও গণেশ ছেত্রীকে গ্রেফতার করে। উমেশের বাড়ি ডুয়ার্সের বীরপাড়া থানা এলাকার ভুটান লাগোয়া লঙ্কাপাড়া চা বাগানে। এক সময় বাগানে চা শ্রমিকের কাজ করতেন। ২০০৯-এ আলাদা রাজ্যের দাবিতে মোর্চা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। বাড়ি ছেড়ে বিমল গুরুঙ্গের ডাকে সাড়া দিয়ে জি এল পি তে যোগ দেন উমেশ। পাঁচ বছর ধরে তিনি বাড়ি ছাড়া।
টানা এক বছর গরুবাথানানে জি এল পি-র প্রশিক্ষণ শিবিরে কাটাবার পর উমেশ দার্জিলিঙে চলে যান। সেখানে সে জি এল পি-র সদস্য হিসাবে কাজ করার পাশাপাশি মোর্চার এক নেতার গাড়ি চালাতেন বলে তার পরিবারের লোকজনের দাবি। উমেশের পরিবার ও প্রতিবেশীরা অস্ত্র-সহ তাঁর গ্রেফতার হওয়ার খবর পেয়ে বিস্মিত। কাঞ্ছা মোকতানের কথায়, “উমেশ জিএলপি করত জানি। বেশ কয়েক বছর ধরে সে বাড়িতে আসত না। তবে ও যে এই ভাবে গাড়িতে অস্ত্র আনার কাজ করছে, বা কোন জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে, তার কোনও আঁচ আমরা পাইনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy