Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

মনিরুল-মামলায় আজ কোর্টে তলব তদন্তকারীকে

বীরভূমের লাভপুরে সালিশিসভায় তিন ভাইকে পিটিয়ে মারার ঘটনায় পুলিশ আদৌ কোনও তদন্ত করেছে কি না, বৃহস্পতিবার সে সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করল কলকাতা হাইকোর্ট। মামলাটিতে অন্যতম মূল অভিযুক্ত হলেন লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম, যাঁকে বুধবার বর্ধমানে মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী সভার মঞ্চে দেখা গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৫০
Share: Save:

বীরভূমের লাভপুরে সালিশিসভায় তিন ভাইকে পিটিয়ে মারার ঘটনায় পুলিশ আদৌ কোনও তদন্ত করেছে কি না, বৃহস্পতিবার সে সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করল কলকাতা হাইকোর্ট।

মামলাটিতে অন্যতম মূল অভিযুক্ত হলেন লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম, যাঁকে বুধবার বর্ধমানে মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী সভার মঞ্চে দেখা গিয়েছে। এ দিন হাইকোর্টে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত নির্দেশ দিয়েছেন, চার বছর আগের ওই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত পুলিশ কী ভাবে করেছে, তদন্তকারী অফিসার (আইও)-কে তা নিজের মুখে জানাতে হবে তাঁর এজলাসে দাঁড়িয়ে। বস্তুত এ জন্য হাইকোর্ট আজ, শুক্রবারই তদন্তকারী অফিসারকে তলব করেছে। শুনানির সময় রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলকেও এজলাসে হাজির থাকতে বলেছে হাইকোর্ট।

লাভপুরের গ্রামে সালিশিসভায় ডেকে এনে তিন ভাইকে পিটিয়ে মারার ঘটনাটি ২০১০-এর। অন্যতম অভিযুক্ত মনিরুলের বিরুদ্ধে চার বছর বাদেও কেন চার্জশিট দেওয়া হল না, এর আগে হাইকোর্ট সেই প্রশ্ন তুলেছিল। এ দিন পুলিশের তরফে তারই ব্যাখ্যা দেওয়ার কথা ছিল আদালতের সামনে। সেই মতো পুলিশ এ দিন বিচারপতি দত্তের এজলাসে যে রিপোর্ট পেশ করেছে, আদালতের কাছে তা আদৌ গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। কেন?

লাভপুর-হত্যায় তদন্তের অগ্রগতি সংক্রান্ত সরকারি কৌঁসুলির পেশ করা এ দিনের রিপোর্টটিতে পুলিশের দাবি: যে ৯ জনের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে, সকলে মনিরুলকে নির্দোষ বলে অভিহিত করেছেন। রিপোর্টের প্রেক্ষিতে বিচারপতি দত্ত জানতে চান, পরিবারটির চতুর্থ ভাইও তো ঘটনাস্থলে ছিলেন! পুলিশ তাঁর জবানবন্দি নিয়েছে কি? রিপোর্টে চতুর্থ ভাইয়ের জবানবন্দির কোনও উল্লেখ নেই জেনে বিচারপতির মন্তব্য, “মনে হচ্ছে, কোনও তদন্তই হয়নি! যাঁর ভাইদের পিটিয়ে মারা হল, তাঁর জবানবন্দি কোথায়?”

এবং কী ভাবে ওঁর জবানবন্দি ছাড়া রিপোর্ট তৈরি হল, আদালত তা জানতে চেয়েছে। বিচারপতি দত্তের নির্দেশ, চতুর্থ ভাই তথা হত্যাকাণ্ডের অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দি পুলিশ কী কারণে নিল না, মামলার আইও’কে আজই তা এজলাসে এসে জানাতে হবে, স্বয়ং অ্যাডভোকেট জেনারেলের উপস্থিতিতে। উপরন্তু লাভপুরের তিন ভাইকে ‘পায়ে পিষে মেরে ফেলা’র কথা ২০১৩-র ২১ জুলাই তৃণমূলের এক কর্মিসভায় মনিরুল নিজের মুখেই জানিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এ দিন আইও-কে হাইকোর্টের নির্দেশ: সেই কর্মিসভার সিডি-ও তিনি যেন আজ আদালতে নিয়ে আসেন।

লাভপুরের সালিশিসভায় গণপিটুনিতে নিহত তিন ভাইয়ের চতুর্থ সহোদর হলেন সানোয়ার শেখ, যাঁর জবানবন্দি পুলিশ না-নেওয়ায় হাইকোর্ট প্রশ্ন তুলেছে। আর ঘটনার এত দিন পরেও মনিরুলের বিরুদ্ধে পুলিশ চার্জশিট না-দেওয়ায় সানোয়ারই এখন হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁর দায়ের করা এই মামলাটি গত ৩১ মার্চ বিচারপতি দত্তের আদালতে শুনানির জন্য উঠেছিল। ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে সানোয়ারের কৌঁসুলি সুব্রত মুখোপাধ্যায় সে দিন আদালতকে জানিয়েছিলেন, ২০১০-এর ৩ জুন মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে জনা পঞ্চাশেক সশস্ত্র লোক সানোয়ারদের বাড়িতে আসে। জমি-বিবাদ সংক্রান্ত এক সালিশিসভায় সানোয়ার-সহ চার ভাইকে ডেকে পাঠানো হয়।

মামলায় অভিযোগ: সালিশিতে কথাবার্তা চলার মাঝেই মনিরুলের নেতৃত্বে চার ভাইকে মারধর শুরু হয়। দু’ভাই ঘটনাস্থলে মারা যান, তৃতীয় জনের মৃত্যু হয় হাসপাতালের পথে। চতুর্থ ভাই, অর্থাৎ সানোয়ার দীর্ঘ দিন চিকিৎসা করিয়ে বেঁচে ফেরেন। পুলিশ ওঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে মনিরুলকে গ্রেফতার করেছিল। তিনি জামিন পেয়ে যান।

এর পরে কেটে গিয়েছে প্রায় চার বছর। পুলিশ এখনও মামলার চার্জশিট তৈরি করে উঠতে পারেনি। “মনিরুল ইসলামই এখন এলাকায় শাসকদলের বিধায়ক! স্বভাবতই পুলিশ সময় নষ্ট করছে। তথ্য-প্রমাণ ও সাক্ষ্য নষ্ট হচ্ছে।” সওয়ালে অভিযোগ করেছিলেন সুব্রতবাবু। এ দিন হাইকোর্টের নির্দেশ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে টেলিফোনে মনিরুল অবশ্য বলেন, “আমি দোষী নই। আইন আইনের পথেই চলবে।”

আজ মামলার কেস ডায়েরিও সঙ্গে আনতে তদন্তকারী অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

অন্য বিষয়গুলি:

monirul
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE