অন্য রাজ্যের পড়ুয়ারা বাংলায় এসে এমডি পাশ করে নিজের এলাকায় ফিরে যেতে পারেন, এটা অসম্ভব কিছু নয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের কোটায় এমডি পাশ করার পরে এখানকার বাসিন্দা হয়েও কোনও চিকিৎসক যে ভিন্ রাজ্যে বা ভিন্ দেশে পাড়ি দেবেন না, সেই নিশ্চয়তা আছে কি? প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আদালতের প্রশ্ন, পাশ করার পরে বাংলার ছেলেমেয়েদের এখানে ধরে রাখার সামর্থ্য সরকারের আছে তো?
এ রাজ্যে চিকিৎসকের ঘাটতি দীর্ঘদিনের। ডাক্তারের সেই অভাব মেটাতে বাংলার কোটায় শুধু এ রাজ্যের ছেলেমেয়েদেরই এমডি পড়ার বন্দোবস্ত করেছে তৃণমূল সরকার। তাদের আশা, অন্য রাজ্যের পড়ুয়াদের মতো বাংলার ছাত্রছাত্রীরা পাশ করে ঘরদোর, আত্মীয়স্বজন ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমাবেন না। এখানেই কাজ করবেন। অর্থাৎ আখেরে তাঁদের কাছ থেকে পরিষেবা পাবেন রাজ্যের বাসিন্দারাই। কিন্তু সরকারের এই উদ্দেশ্য কী ভাবে সফল হতে পারে, সেই প্রশ্নটাই তুলেছে হাইকোর্ট।
বাংলা থেকে এমবিবিএস পাশ করা ভিন্ রাজ্যের কোনও পড়ুয়া পশ্চিমবঙ্গের কোটায় এমডি পরীক্ষায় বসতে পারবেন না বলে সম্প্রতি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। সেই বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রায় ৩০০ পড়ুয়া হাইকোর্টে মামলা করেছেন। বুধবার তার শুনানিতেই বাংলার ডাক্তারদের এখানে ধরে রাখা সম্ভব কি না, সেই প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। তিনি জানতে চান, কোনও রাজ্যের বাসিন্দা-ডাক্তারেরা যে বরাবর নিজের রাজ্যেই থাকবেন এবং সেখানকার রোগীদেরই পরিষেবা দেবেন, সেটা জোর দিয়ে কী ভাবে বলা সম্ভব?
এত দিন পশ্চিমবঙ্গে এমবিবিএস এবং এমডি দু’টি পাঠ্যক্রমেই শুধু বাংলা নয়, অন্য রাজ্যের প্রার্থীরাও নির্দিষ্ট অনুপাতে সুযোগ পেতেন। আদালতে সেই অনুপাতের ব্যাখ্যা দেন আবেদনকারীদের আইনজীবী কৌশিক চন্দ। তিনি জানান, এ রাজ্যে এমবিবিএস পরীক্ষার ক্ষেত্রে মোট আসনের ৮৫% সংরক্ষিত থাকে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদের জন্য। বাকি আসন ভর্তি করা হয় সর্বভারতীয় স্তরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে। তাঁরা বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাংলায় পড়তে আসেন। এমডি-র ক্ষেত্রে নিয়ম ছিল, মোট আসনের ৫০% সর্বভারতীয় স্তরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের দিয়ে ভর্তি করতে হবে। বাকি ৫০% আসনে ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হবেন এ রাজ্যের কোটায়। রাজ্যের কোটার ৫০% আসনের ২০% বরাদ্দ ছিল কর্মরত চিকিৎসকদের জন্য।
আবেদনকারীদের কৌঁসুলি এ দিন আদালতে জানান, গত ১ ডিসেম্বর রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ বার থেকে ভিন্ রাজ্যের কোনও বাসিন্দা পশ্চিমবঙ্গের কোটার আসনে এমডি পড়তে পারবেন না। এমডি পরীক্ষায় বসতে হলে প্রার্থীকে প্রমাণ দিতে হবে যে, তিনি এ রাজ্যেরই বাসিন্দা। তা না-হলে সেই পরীক্ষার্থীকে বসতে হবে সর্বভারতীয় স্তরের পরীক্ষায়। চলতি বছরের এমডি পরীক্ষা আগামী ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে। সে-ক্ষেত্রে ভিন্ রাজ্যের যে-সব পড়ুয়া ওই পরীক্ষায় বসতে চান, তাঁরা যাতে পরীক্ষা দিতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করার জন্য মামলার আবেদনকারীদের তরফে হাইকোর্টে আর্জি জানান কৌশিকবাবু।
স্বাস্থ্য দফতর হঠাৎ এমন বিজ্ঞপ্তি জারি করল কেন?
সরকারি আইনজীবী প্রদীপ দত্ত এ দিন আদালতে জানান, বেশ কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে, ভিন্ রাজ্যের বাসিন্দারা এ রাজ্যের কোটায় এমডি পরীক্ষায় বসে উত্তীর্ণ হওয়ার পরে বাংলার মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করছেন না। তাঁরা বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন। অথবা নিজেদের রাজ্যে বা অন্য রাজ্যে চলে যাচ্ছেন। এমডি পাশ করে ছেলেমেয়েরা যাতে অন্যত্র চলে না-যান, সেই জন্যই এই ব্যবস্থা করতে হয়েছে সরকারকে।
মামলার আবেদনকারীদের আইনজীবী আদালতে জানান, যাঁরা এ রাজের কোটায় এমডি পাশ করেন, সরকারের কাছে তাঁদের প্রত্যেককেই তো তিন বছরের বন্ড দিতে হয়। এবং সেই বন্ডে বলা থাকে, অন্তত তিন বছর তিনি এ রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরে চাকরি করবেন। নইলে তাঁকে প্রতি বছরের জন্য ১০ লক্ষ টাকা জমা দিতে হবে সরকারি কোষাগারে। সরকারি আইনজীবী আদালতে জানান, ওই বন্ড মোটেই দীর্ঘমেয়াদি নয়। সেটা মাত্র তিন বছরের জন্য। ফলে পরবর্তী ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়।
এই বক্তব্য শুনেই বিচারপতি দত্ত সরকারি আইনজীবীর উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, যাঁরা এ রাজ্যের বাসিন্দা, তাঁরা যে তিন বছর পরে ভিন্ রাজ্যে বা অন্যত্র চলে যাবেন না, সেই ব্যাপারে সরকার নিশ্চিত হচ্ছে কী ভাবে?
আজ, বৃহস্পতিবার আবার এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy