Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

বিধি বাম, প্রভাস-ক্ষিতির কিল খেয়ে হজম কারাটের

হাতি যখন গর্তে পড়ে, তখন কী হয়? আলিমুদ্দিনে কয়েক ঘণ্টার জন্য এসে টের পেলেন প্রকাশ কারাট! প্রথমে এলেন প্রভাস ঘোষ। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের মুখোমুখি বসে তিনি বলে গেলেন, বাম জমানায় কারাটের দল অ-বাম এবং জন-বিরোধী অনেক কাজ করেছে। সিপিএমের হাতেই এসইউসি-র ১৬১ জন কর্মী-সমর্থক খুন হয়েছেন। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর কাছে নালিশ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি! নিজের দলের বিরুদ্ধে হিংসার রাজনীতি এবং বাম নীতি-বিচ্যুত হওয়ার অভিযোগ শুনেও কারাট তখন নীরব! মুখ বন্ধ পাশে বসা বিমানবাবুরও।

আলিমুদ্দিনে প্রভাস ঘোষের সঙ্গে প্রকাশ কারাট। রয়েছেন বিমান বসু। ছবি: শৌভিক দে।

আলিমুদ্দিনে প্রভাস ঘোষের সঙ্গে প্রকাশ কারাট। রয়েছেন বিমান বসু। ছবি: শৌভিক দে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:০৭
Share: Save:

হাতি যখন গর্তে পড়ে, তখন কী হয়? আলিমুদ্দিনে কয়েক ঘণ্টার জন্য এসে টের পেলেন প্রকাশ কারাট!

প্রথমে এলেন প্রভাস ঘোষ। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের মুখোমুখি বসে তিনি বলে গেলেন, বাম জমানায় কারাটের দল অ-বাম এবং জন-বিরোধী অনেক কাজ করেছে। সিপিএমের হাতেই এসইউসি-র ১৬১ জন কর্মী-সমর্থক খুন হয়েছেন। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর কাছে নালিশ জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি! নিজের দলের বিরুদ্ধে হিংসার রাজনীতি এবং বাম নীতি-বিচ্যুত হওয়ার অভিযোগ শুনেও কারাট তখন নীরব! মুখ বন্ধ পাশে বসা বিমানবাবুরও।

এর পরে এলেন ক্ষিতি গোস্বামী। প্রভাসবাবুর কাছে যদি জয়নগর-কুলতলির উদাহরণ থেকে থাকে, আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদকের কাছে তা হলে ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনারই গোসাবা-বাসন্তী। কারাটের মুখোমুখি বসার সুযোগ পেয়ে ক্ষিতিবাবুও তা-ই শুনিয়ে দিয়েছেন, বাম জমানাতেই শাসক সিপিএমের হাতে বাম সরকারেরই শরিক আরএসপির কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন। শরিক আরএসপি-র বহু নীতিগত আপত্তি সরকার চালানোর সময় কানেই তোলেনি সিপিএম! তার পরেও আরএসপি কিন্তু বামফ্রন্টে থেকে গিয়েছে! প্রভাসবাবুর তুলনায় ক্ষিতিবাবু বেশি ‘ঘরের লোক’ বলেই হয়তো এ বার একটু মুখ খুলেছিলেন কারাট। বলেছিলেন, অতীত নিয়ে আর ঘাঁটাঘাঁটি না করাই ভাল। নাছোড় ক্ষিতিবাবু বলে এসেছেন, অতীত কিন্তু ইতিহাস! যা মনে রাখাই ভাল!

প্রভাস-ক্ষিতি দুই নেতাই বৃহস্পতিবার আলিমুদ্দিনে কারাটের সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন বৃহত্তর বাম ঐক্য নিয়ে। সেই সুযোগেই দু’জনে সিপিএমের কর্ণধারকে তিক্ত প্রসঙ্গ মনে করিয়ে এসেছেন। রাজ্যে ক্ষমতা হারিয়ে, গোটা দেশে নির্বাচনী বিপর্যয়ের মুখে পড়ে এবং সাগঠনিক ভাবে বিপন্ন হয়ে কারাটও শুনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। আর বৈঠকের পরে তাঁকে হাসি মুখে বলতে হয়েছে, “মোদীর আমলে সাম্প্রদায়িকতার বিপদ বাড়ছে। বৃহত্তর বাম ঐক্য গড়েই এর প্রতিবাদ প্রয়োজন।”

কলকাতায় এসে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক যে ভাবে এসইউসি-র সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা সেরেছেন, সাম্প্রতিক কালেতা প্রথম দৃষ্টান্ত। সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি এবং জন-বিরোধী অর্থনীতির মোকাবিলায় যৌথ লড়াইয়ের জন্য সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এসইউসি-র সমর্থন চেয়েছেন কারাট। কর্মী মহলে তিক্ততার কথা মনে করিয়ে দিয়েও প্রভাসবাবু ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। বৈঠকের পরে কারাট জানিয়েছেন, বৃহত্তর বাম ঐক্যের লক্ষ্যেই আগামী ১ নভেম্বর দিল্লির এ কে জি ভবনে আরও সবিস্তার আলোচনা হবে।

তবে তত্ত্বগত ভাবে বৃহত্তর বাম ঐক্যের কথা বলা আর বাস্তবে তার রূপায়ণের পথ কত কঠিন, এ দিন প্রতি পদে টের পেয়েছেন কারাট! তাঁকে প্রভাসবাবু কথা দিয়েছেন, বিজেপি ক্ষমতায় আসার ফলে দেশ জুড়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির যে বাড়বাড়ন্ত হয়েছে, তার বিরুদ্ধে যৌথ আন্দোলনে তাঁরা থাকবেন। কিন্তু সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি কেরলে সিপিএম ভেঙে তৈরি হওয়া আরএমপি-র সঙ্গে তারা জোটে আছে বলে এসইউসি জানিয়েছে, সেখানে কারাটদের সঙ্গে একত্রে কর্মসূচিতে যাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। রাজ্যে নিচু তলায় কর্মীদের মধ্যে সিপিএম সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন আছে বলেই ধীরে ধীরে এগোতে হবে। তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধেও এসইউসি নিজেদের মতো আন্দোলন করবে, তা-ও জানিয়ে দিয়েছেন প্রভাসবাবু। তাঁর সঙ্গেই বৈঠকে ছিলেন দলের আর এক পলিটব্যুরো সদস্য রণজিৎ ধর।

পরে প্রভাসবাবু বলেন, “দু’দলের কর্মীদের মধ্যেই তিক্ততা আছে। তাই সর্বভারতীয় স্তরে যে ভাবে ঐক্য হবে, এখানে সেই ভাবে হবে না। কিছু নির্দিষ্ট প্রশ্নে ধীরে ধীরে এগিয়েই ঐক্য দৃঢ় হবে।” শুধু সাম্প্রদায়িকতা এবং জন-বিরোধী অর্থনীতির বিরুদ্ধে আলোচনা, কনভেনশন করেই হবে না, জোরদার শ্রেণিগত ও গণআন্দোলন চাই এবং আঞ্চলিক, জাতপাত-ভিত্তিক কোনও দলের সঙ্গে সমঝোতা চলবে না এই দু’টি বিষয়ও কারাটকে স্পষ্ট জানিয়েছেন প্রভাসবাবু। এর মধ্যে কারাটদের এক টুকরো স্বস্তি দিয়ে ফ ব-র সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস বিবৃতি দিয়েছেন, তৃণমূল এখন দেশ-বিরোধী শক্তির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। তার ফায়দা নিয়ে বিজেপি-ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করছে। এর মোকাবিলায় বাম ঐক্যই সঠিক পথ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy