জমায়েত বিজেপি কর্মীদের। রামপ্রসাদ সাউয়ের তোলা ছবি।
ভিক্টোরিয়া হাউসের ছায়া এ বার শালবনিতে জিন্দলদের প্রকল্প এলাকায়!
দ্রুত কারখানা চালুর দাবিতে শুক্রবার থেকে এলাকায় মঞ্চ বেঁধে অবস্থান শুরু করেছে তৃণমূল। আলাদা মঞ্চে জমিদাতাদের অবস্থানও চলছে। অথচ শনিবার থেকে বিজেপি কারখানার গেটে লাগাতার অবস্থান করতে চাইলেও পুলিশ-প্রশাসনের অনুমতি মেলেনি। অগত্যা এ দিন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। সেই মিছিলও আটকে দেয় পুলিশ।
এই ঘটনায় ক্ষুদ্ধ বিজেপি চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছে। দলের পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের আটকাতে তৃণমূল ও পুলিশ জোট বেঁধে পথে নেমেছে। তাই শনিবার থেকে বিক্ষোভ-অবস্থানে বসার অনুমতি চেয়ে থানায় গেলে পুলিশ আবেদনপত্র পর্যন্ত নেয়নি। এ দিন মিছিলও আটকে দিয়েছে।” তুষারবাবুর সাফ কথা, “আমরা পুলিশকে জানিয়ে দিয়েছি, তৃণমূলের অবস্থান সাত দিন চলবে। তারপর আমাদেরও অনুমতি দিতে হবে। না হলে জোর করে যাব।” পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ অবশ্য দাবি করেন, “কর্মসূচির জন্য বিজেপি কোনও লিখিত আবেদন করেনি।”
গত রবিবার জিন্দল গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর সজ্জন জিন্দল শালবনির ইস্পাত প্রকল্প স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করার পরে অবশ্য সোমবার বিজেপি-র প্রথম কারখানার গেটে বিক্ষোভ দেখায়। মঙ্গলবার এলাকায় মিছিল করে ডিওয়াইএফ। বৃহস্পতিবার জমিদাতাদের অরাজনৈতিক বিক্ষোভে তৃণমূলের ব্লক নেতাদের দেখা যায়। আর শুক্রবার থেকে দলীয় পতাকা নিয়ে তৃণমূলের জেলা নেতারা একেবারে মঞ্চ বেঁধে অবস্থান-আন্দোলন শুরু করেন।
এখন প্রশ্ন তৃণমূলের আগে অবস্থানের জন্য অনুমতি চেয়েও বিজেপি পেল না কেন?
বিজেপি সূত্রের খবর, শালবনি থানা তাদের থেকে জানানো হয়, শনিবার কোনও আন্দোলনের অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, ওই দিন পুলিশের উদ্যোগে আয়োজিত জঙ্গলমহল কাপের চূড়ান্ত খেলা রয়েছে। ফলে পুলিশ ব্যস্ত থাকবে। বিজেপি-র জেলা সভাপতি তুষারবাবু মতে, “পুলিশ আমাদের রবিবার থেকে অবস্থান করার অনুমতি দিতে পারত। কিন্তু তা করেনি। তৃণমূলের হয়ে পুলিশই যে এখন প্রচারে নেমেছে।” এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “বিজেপি-র কর্মসূচিতে অনুমতি না দেওয়ার বিষয়ে আমাদের কিছুই জানা নেই। আমরা আমাদের মতো আন্দোলন করছি। বাকি বিষয় প্রশাসন জানে।”
লাগাতার অবস্থানের অনুমতি না মিললেও এ দিন দুপুরে শালবনিতে জিন্দলদের কারখানার গেটের সামনে হাজির হন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। সেখানে আলাদা মঞ্চে তৃণমূল এবং জমিদাতাদের সংগঠন ‘শালবনি জেএসডব্লিউ বেঙ্গল স্টিল লিমিটেড ল্যান্ড লুজার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর অবস্থানও এ দিন চলেছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এলাকায় পৌঁছয় পুলিশও। কারখানার গেট থেকে কিছুটা দূরে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়। বিজেপি মিছিল করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। ব্যারিকেডে আটকায় মিছিল। এ দিন বিজেপি-র বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন জেলা যুব মোর্চার সভাপতি শুভজিত্ রায়, মেদিনীপুর শহর বিজেপি-র সভাপতি অরূপ দাস ও দলের শালবনি ব্লক সভাপতি মুক্তিনাথ ঘোষ। শুভজিত্বাবু বলেন, “পুলিশ অনুমতি না দেওয়ায় অবস্থানে বসতে পারিনি। তবে আমরা জমিদাতাদের পাশে রয়েছি। পুলিশ ও শাসকদল যতই বাধা দেওয়ার চেষ্টা করুক না কেন, আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
বিজেপি-র কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া নিয়ে এই জেলায় আগেও জটিলতা হয়েছে। গত ২৭ অগস্ট মেদিনীপুরে সভা করার কথা ছিল বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের। কিন্তু পুলিশ অনুমতি না দেওয়ায় সেই সভা হয়নি। পরিবর্তে সে দিন মিচিল করেছিলেন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিজেপি কর্মীরা। সম্প্রতি কলকাতায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে অমিত শাহের সভার অনুমতি পেতেও বিজেপি নেতৃত্বকে নাকাল হতে হয়। শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের নির্দেশে হয়েছে সেই সভা। ২৪ ডিসেম্বর ফের মেদিনীপুরে বিজেপি-র সভায় আসার কথা রাজ্য সভাপতির। আবারও কি অনুমতি পাওয়া নিয়ে সমস্যা হবে? বিজেপি-র জেলা সভাপতি তুষারবাবুর জবাব, “তিন দিন হল অনুমতির চেয়ে আবেদন জানিয়েছি। আশা করছি, আর আদালতে যাওয়ার দরকার হবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy