Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪

নারী দিবসের পদযাত্রাতেও প্রচার দু’পক্ষের

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মিশে গেল ভোটের বাদ্যি! নারীর অধিকার বা মর্যাদা আদায় ও নির্যাতন রোধ নিয়ে অন্যান্য বছরও মিটিং-মিছিল-অনুষ্ঠান হয় এই দিনটিতে। এ বার কিন্তু ভোটের মুখে এমন একটি দিন পেয়ে সেটাকে পুরো দস্তুর জনসংযোগের কাজে লাগানোর চেষ্টা করলেন রাজ্যে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল ও বিরোধী পক্ষের বাম নেতা-নেত্রীরা।

পদযাত্রায় মুখ্যমন্ত্রী। ধর্মতলায়। —নিজস্ব চিত্র।

পদযাত্রায় মুখ্যমন্ত্রী। ধর্মতলায়। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৪ ০৩:১৭
Share: Save:

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মিশে গেল ভোটের বাদ্যি! নারীর অধিকার বা মর্যাদা আদায় ও নির্যাতন রোধ নিয়ে অন্যান্য বছরও মিটিং-মিছিল-অনুষ্ঠান হয় এই দিনটিতে। এ বার কিন্তু ভোটের মুখে এমন একটি দিন পেয়ে সেটাকে পুরো দস্তুর জনসংযোগের কাজে লাগানোর চেষ্টা করলেন রাজ্যে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল ও বিরোধী পক্ষের বাম নেতা-নেত্রীরা। না, ভোট দিন বলে স্লোগান তোলা না হলেও নির্বাচনী-রাজনীতির তরজাটা কিন্তু প্রকট হয়ে উঠল উভয় পক্ষের পদযাত্রায়, প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন-ব্যানারে এবং মিছিল শেষের সভায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাঁটলেন যে মিছিলে, তাতে দেখা গেল রাজ্য সরকার গত আড়াই বছরে নারী-কল্যাণে কী কী করেছে, তারই খতিয়ান। আর বামেদের মিছিলে প্ল্যাকার্ড-ব্যানারে ছিল রাজ্যে নারী নির্যাতন বেড়ে যাওয়া ও তার প্রতিকারহীনতার অভিযোগ। লোকসভার ভোট ঘোষণার অনেক আগে থেকেই এই সব প্রসঙ্গে রাজ্য সরকার ও বিরোধীদের দাবি ও অভিযোগে সরব হতে দেখা গিয়েছে সভার মঞ্চ ও মিছিল। শনিবার নারী দিবসেও চলল সেই তরজাই।

তৃণমূল নেত্রী মমতা এ দিন পদযাত্রা করলেন কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত। দলের মন্ত্রী ও তৃণমূলের মহিলা সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মন্ত্রী শশী পাঁজা, সাবিত্রী মিত্র ছাড়াও ছিলেন দলের তিন মহিলা প্রার্থী। বারাসতের কাকলি ঘোষ দস্তিদার, আসানসোলের দোলা সেন এবং ঝাড়গ্রামের উমা সোরেন। এ দিন থেকেই ভোটের প্রচার শুরু করল বিরোধী চার বামপন্থী মহিলা সংগঠন। বালিগঞ্জ ফাঁড়ি এবং রামলীলা পার্ক থেকে বামপন্থী মহিলাদের দু’টি মিছিল বার হয়ে পার্ক সার্কাসে মিলিত হয়। বাম মহিলাদের মিছিলেও ছিলেন তিন মহিলা প্রার্থী। কলকাতা-উত্তরের রূপা বাগচি, কলকাতা-দক্ষিণের নন্দিনী মুখোপাধ্যায় এবং ব্যারাকপুরের সুভাষিনী আলি।

কলকাতা পৌঁছলেন সুভাষিনী আলি। শনিবার।—নিজস্ব চিত্র।

রাস্তার দু’ধারের মানুষকে নমস্কার করতে করতে মিছিলে হাঁটেন মমতা। আকারে বিশাল মমতার মিছিল কলেজ স্ক্যোয়ার থেকে ধর্মতলায় পৌঁছতে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় নেয়। মিছিলের শুরুতে বা শেষে মমতা কোনও বক্তৃতা দেননি। কিন্তু তাঁর মিছিলে মহিলাদের হাতে-হাতে ছিল অসংখ্য প্ল্যাকার্ড। যাতে তুলে ধরা হল কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করা, ডায়মন্ড হারবারে মহিলাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়, পঞ্চায়েতে ৫০% আসন সংরক্ষণ করা ইত্যাদি মমতা-সরকারের নানা সাফল্যের কথা।

কিছু প্ল্যাকার্ডে স্লোগান, “নতুন সরকারের ৩৩ মাস, বাংলার মেয়েদের স্বস্তির আশ্বাস।” সন্দেহ নেই নারী দিবসে তৃণমূলের এই পদযাত্রা শুধু ভোটের প্রচার নয়, এটা তাদের সাংগঠনিক শক্তির প্রদর্শনও। চন্দ্রিমা বা দোলারা অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছেন, নারী-কল্যাণকে কেন্দ্র করে তাঁরা প্রতি বারই নারী দিবসে বিভিন্ন কর্মসূচি নেন। এ বারের পদযাত্রা তারই অঙ্গ, ভোটের প্রচার নয়। দোলা, কাকলিরা জানান, আজ, রবিবার থেকে তাঁদের কেন্দ্রে পুরোদমে শুরু হবে প্রচারের কাজ।

বাম মহিলারা শনিবার সরব ছিলেন মমতা সরকারের আমলে নারী নির্যাতন নিয়ে। দু’টি মছিলের শেষে পার্ক সার্কাসে তাঁরা সভা করেন। গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদক মিনতি ঘোষ অভিযোগ করেন, “তৃণমূল আমলে রাজ্যে নারী নির্যাতন বাড়ছে। ধর্ষণে এই রাজ্য দেশে শীর্ষস্থানে।” তাঁর আরও অভিযোগ, রাজ্য সরকার অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেই মহিলাদের উপরে অপরাধ বাড়ছে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও প্রার্থী সুভাষিনী বলেন, “বাম আমলেও বানতলার মতো ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে অপরাধীদের দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা হয়েছে।” এখন ধর্ষণে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশ সময় মতো কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন ব্যারাকপুর লোকসভা আসনের এই বাম প্রার্থী।

সব মিলিয়ে অভিযোগ ও দাবির এই চাপান-উতোরে নারী দিবসও কার্যত দু’ভাগ হয়ে রইল ভোট-রাজনীতির দুই শিবিরে।

অন্য বিষয়গুলি:

mamata tmc rally esplanade
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE