মুখ বন্ধ করার লক্ষণ তো নেই-ই, তৃণমূলের বিরুদ্ধে বরং ধাপে ধাপে সুর চড়াচ্ছেন দীনেশ ত্রিবেদী।
দশ দিন আগে গুজরাতের কচ্ছে একটি অনুষ্ঠানে প্রথম বার মুখ খুলেছিলেন তিনি। সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন গুজরাতের একটি কাগজে। আজ খোদ রাজধানীতেই সংবাদমাধ্যমের কাছে নিজের দলের নীতির কঠোর সমালোচনা করলেন দীনেশ। জানালেন, তৃণমূল মোদীর নীতির বিরোধিতা করছে ঠিকই, কিন্তু তিনি নিজে ‘দেশের স্বার্থেই’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেন। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না-করে প্রাক্তন রেলমন্ত্রীর মন্তব্য, “কোনও ব্যক্তিবিশেষের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা নেই। আমি দায়বদ্ধ দেশের প্রতি!”
গত সপ্তাহে গুজরাতের মাণ্ডবীতে একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর দাদা সোমভাই মোদীর সঙ্গে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে নরেন্দ্র মোদীর গুণগান করেছিলেন দীনেশ। সেই সঙ্গে গুজরাতি কাগজে তিনি দলের নামে অভিযোগ করে বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে উন্নয়ন করা সোনার সুযোগ পেয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু তারা সেটা নষ্ট করেছে।
এই সব বিস্ফোরক কথাবার্তা যে তিনি একটা দিন কোনওক্রমে মুখ ফস্কে বলে ফেলেননি, সেটা আজ প্রমাণ করে দিয়েছেন দীনেশ। এ দিন আবার তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে মতাদর্শ নিয়ে চলছে, আমি তার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্নমত পোষণ করি।”
কেন এমন ধারাবাহিক ভাবে তোপ দাগছেন দীনেশ? রাজনৈতিক সূত্রে মনে করা হচ্ছে, দীনেশের মতো প্রবীণ এবং পরিচিত নেতাকে দিয়েই তৃণমূলের মধ্যে ভাঙন ধরানোর কৌশল নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। এই তালিকায় তৃণমূলের আরও বেশ কিছু নেতা রয়েছেন বলেও খবর। রাজ্যে আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে তৃণমূলকে যতটা সম্ভব হীনবল করে দেওয়াটাই লক্ষ্য বিজেপির। প্রথম আক্রমণটা দীনেশ গুজরাতের মাটিতে শানিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু তাঁর আসল মঞ্চ পশ্চিমবঙ্গ। বিশেষ করে ব্যারাকপুরের শিল্পাঞ্চল, যেখানে এখনও তৃণমূলের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত। ভবিষ্যতে সেখানেই দীনেশকে কাজে লাগাতে চায় বিজেপি। সেটা কী ভাবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই ভাবনাচিন্তা শুরু করে দিয়েছেন দলীয় নেতৃত্ব।
বিষয়টা যে তৃণমূল নেতৃত্ব বুঝছেন না, এমন নয়। দলের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা সাংসদের এই উল্টোসুরে নিশ্চিত ভাবেই বিচলিত তাঁরা। কিন্তু ইচ্ছে করেই মুখ খুলতে চাইছেন না কেউ। দলের এক শীর্ষ নেতা এ দিন বলেন, “দীনেশের কথাবার্তার উপরে আমরা বিলক্ষণ নজর রাখছি। নেত্রীর নির্দেশে যথাসময়ে দলের অবস্থান জানিয়ে দেওয়া হবে।”
এটা স্পষ্ট, যত দিন যাচ্ছে দীনেশের বিদ্রোহের সুর ততই চড়ছে। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে আগাগোড়া যে ভাবে সংসদীয় কাজকর্ম পণ্ড করে দিয়েছে তৃণমূল, আজ তার কঠোর সমালোচনা করেছেন দীনেশ। বলেছেন, “১৯৯০ থেকে আমি সংসদে রয়েছি। কিন্তু কখনও ওয়েলে গিয়ে হল্লা করিনি। সংসদ হল গণতন্ত্রের মন্দির! সেখানে এ ভাবে কাজ পণ্ড করাটাকে আমি সমর্থন করি না।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তৃণমূলের নাম না-করে আরও একটি বিষয় নিয়ে আজ সরব হয়েছেন দীনেশ। তিনি বলেন, ছাত্র আন্দোলনের নামে রাজ্যে যা চলছে, তা দেখে তাঁর তপন সিংহের ‘আপনজন’ সিনেমার কথা মনে পড়ে যায়। দীনেশ বলেন, “সেই নৈরাজ্য, সেই হিংসার দিন ফের যেন রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রকে গ্রাস করেছে।”
দীনেশের অভিযোগ, ৩৪ বছরের বাম অপশাসনের পর যে সুযোগ এসেছিল তাকে নষ্ট করা হচ্ছে। তৃণমূলের মোদী-বিরোধিতার লাইনও তিনি যে সমর্থন করেন না তা আজ বিশদে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায় “নরেন্দ্রভাই আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু। আমাদের মাঝে মাঝেই দেখা হয়। কথাও হয়। তবে তা হয় দেশের উন্নয়ন নিয়েই। এমনকী আবহাওয়ার কথা বলেও সময় নষ্ট করি না আমরা!” মোদীর স্বচ্ছ ভারত অভিযান, মেক ইন ইন্ডিয়া, বিশ্বের দরবারে ভারতকে তুলে ধরার প্রচেষ্টা নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ দীনেশ। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় এই প্রশস্তি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কানে গেলে কী হবে?
সাংসদের জবাব আসে, “আমি বেআইনি কিছু করছি না যে ভয় পাব। তা কে জানল, কে জানল না এ সব নিয়ে ডরাই না।” অর্থাৎ প্রকারান্তরে দীনেশ বুঝিয়েই দেন, তিনি তৃণমূলের সঙ্গ ত্যাগ করতে পিছপা নন।
রাজনৈতিক সূত্রে এ-ও বলাবলি হচ্ছে যে, দীনেশ সম্ভবত চাইছেন তাঁর লাগাতার বোমা বর্ষণে ক্রুদ্ধ হয়ে তৃণমূল নেতৃত্বই তাঁকে বহিষ্কার করুন। তা হলে দলত্যাগের তকমা তাঁর গায়ে লাগবে না। আর এই উদ্দেশ্যটি বুঝতে পেরেই তৃণমূল নেতৃত্বও তাঁকে এখনই প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না।
দীনেশকে প্রশ্ন করা হয়, এটা কি সুযোগসন্ধানী রাজনীতি নয়? দীনেশ বলেন, “একেবারেই নয়। মোদীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলাটাকে আমি রাজ্যের পক্ষে একটা মস্ত সুযোগ বলে মনে করি। রাজ্যের উন্নয়ন চাইলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচিত সে সুযোগ গ্রহণ করা।”
নরেন্দ্র মোদী যদি তাঁকে কোনও দায়িত্ব দেন তা হলে তিনি কী করবেন? দীনেশের উত্তর, “দেশের জন্য যদি প্রধানমন্ত্রী আমাকে কিছু করতে বলেন, তাতে সমস্যা কী? সেটা ইতিবাচক হলে পিছপা হব কেন?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy