গত বছর প্রথম। আর এ বার দ্বিতীয়। রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্ক ও রাজ্য সমবায় ইউনিয়ন ঘোষিত পুরস্কার প্রাপকের তালিকায় কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের এই এক ধাপ নেমে যাওয়াটা কিছুতেই মানতে নারাজ ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান বয়কট করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। শুভেন্দুর দাবি, “পরিসংখ্যান ও পরিষেবায় আমরাই সেরা। তা-ও দ্বিতীয় পুরস্কার দিয়ে আমাদের অপমান করা হয়েছে। ঘৃণার সঙ্গে পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করছি।”
রাজ্য জুড়ে সমবায় সপ্তাহ উদ্যাপন শুরু হয়েছে। এই উপলক্ষে রামনগরের এক সভায় শনিবার শুভেন্দু দাবি করেছিলেন, কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কই রাজ্যের মধ্যে সেরা। এ নিয়ে রবিবার জিজ্ঞাসা করা হলে প্রতিবেদককে তিনি পুরস্কার প্রত্যাখ্যানের কথা জানান। তৃণমূলের অন্দরের খবর এর পিছনে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরে দলের গোষ্ঠী কোন্দল। রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী, পটাশপুরের বিধায়ক জ্যোতির্ময় কর জেলার রাজনীতিতে বরাবরই ‘অধিকারী পরিবারের’ বিরোধী বলে পরিচিত। তা ছাড়া, তিন দফায় প্রায় ন’বছর কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। ২০০৯ সাল থেকে সেই পদে রয়েছেন শুভেন্দু। গত জুলাইয়ে মন্ত্রী হন জ্যোতির্ময়বাবু। তাঁর আমলে এটাই প্রথম সমবায়ের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। ১৮ নভেম্বর কলকাতায় মন্ত্রীরই পুরস্কার দেওয়ার কথা। ‘বিরোধী’ জ্যোতির্ময়বাবুর থেকে দ্বিতীয় স্থানাধিকারীর পুরস্কার নেওয়ার সেই ‘অস্বস্তি’ এড়াতেই শুভেন্দু অনুষ্ঠান বয়কটের ডাক দিয়েছেন বলে তৃণমূলেরই একটি সূত্রের খবর।
পুরস্কার প্রত্যাখ্যানের কথা জানেন না বলে দাবি করেছেন জ্যোতির্ময়বাবু। তাঁর যুক্তি, “এটি রাজ্য সরকারের নিজস্ব ব্যাপার নয়। পুরস্কার কারা পাবেন তা ঠিক করে রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্ক ও রাজ্য সমবায় ইউনিয়ন। মন্ত্রী শুধু পুরস্কারটা দেন।” তবে প্রশাসন সূত্রের খবর, রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্ক ও রাজ্য সমবায় ইউনিয়ন সমবায় দফতর দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত।
সমবায় সপ্তাহে আমানত, ঋণদান, ঋণ আদায় ইত্যাদি নানা মাপকাঠিতে সমবায় ব্যাঙ্কগুলিকে পুরস্কার দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় (মূলত গ্রামীণ কৃষি ব্যাঙ্ক) ও শহরাঞ্চলীয় এই দু’টি বিভাগে পুরস্কার দেওয়া হয়। ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে শহরাঞ্চলীয় বিভাগে প্রথম হয়েছিল কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্ক। এ বার অবশ্য ওই বিভাগে প্রথম হয়েছে হাওড়ার ব্যাঁটরা সমবায় ব্যাঙ্ক। আর কেন্দ্রীয় বিভাগে প্রথম হয়েছে কাঁথি মহকুমারই মুগবেড়িয়া সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক। ওই ব্যাঙ্কের সভাপতি তথা তৃণমূল বিধায়ক অর্ধেন্দু মাইতিরও অভিযোগ, কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্ককে বঞ্চিত করা হয়েছে। অর্ধেন্দুবাবু ‘অধিকারী ঘনিষ্ঠ’ বলেই পরিচিত। তাই মুগবেড়িয়ার পুরস্কার প্রাপ্তিকে স্বাগত জানান শুভেন্দুও। তাঁর বক্তব্য, “মুগবেড়িয়া ব্যাঙ্ক নিজেদের যোগ্যতায় সেরার স্বীকৃতি আদায় করেছে। কারও দাক্ষিণ্যে নয়।”
পুরস্কার প্রত্যাখ্যানের ক্ষেত্রে গোষ্ঠী কোন্দলের ছায়া প্রকাশ্যে এলেও শুভেন্দু কিন্তু জোর দিচ্ছেন পরিষেবা ও পরিসংখ্যানের নিরিখে তাঁর ব্যাঙ্কের যোগ্যতার উপর। তমলুকের তৃণমূল সাংসদ জানান, কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কে ৭৫ হাজারের বেশি সভ্য রয়েছেন, আমানতের পরিমাণ প্রায় ৮০০ কোটি টাকা, ঋণদানের পরিমাণ ৫২৫ কোটি টাকা আর ঋণ আদায় হয়েছে ৯৩.৪২ শতাংশ। শুভেন্দুর আরও দাবি, “রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সার্বিক বিচারে শুধু রাজ্য নয়, গোটা পূর্বাঞ্চলে প্রথম স্থানে রয়েছে কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্ক।” রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অবশ্য সমবায়ের কোনও র্যাঙ্কিং করে না। তবে সমবায় ব্যাঙ্কগুলি কেমন কাজ করছে তাতে নজরদারি চালায়। ঘাটতি মেটাতে প্রয়োজনীয় পরামর্শও দেয়।
তৃণমূল সূত্রের খবর, সমবায়কে কেন্দ্র করে অধিকারীদের সঙ্গে জ্যোতির্ময়বাবুর টানাপড়েন অনেক দিনের। জ্যোতির্ময়বাবু প্রথমে সমবায় দফতরের পরিষদীয় সচিব ছিলেন। গত জুলাইয়ে তিনি মন্ত্রী হন। তৃণমূলের একাংশের মতে, শুভেন্দু যেখানে দুই মেদিনীপুরের একাধিক সমবায়ের চেয়ারম্যান, সেখানে জ্যোতির্ময়বাবুকে দফতরের মন্ত্রী করে কার্যত নজরদারি চালানোরই ব্যবস্থা করা হয়েছে। সমবায় পুরস্কার ঘিরে দুই শিবিরের সেই বিরোধই ফের প্রকাশ্যে এল।
জ্যোতির্ময়বাবুর নাম না করেই শুভেন্দু এ দিন বলেন, “বর্তমানে রাজ্যের সমবায় চালাচ্ছেন এমন অনেকেরই সমবায় নিয়ে কোনও স্পষ্ট ধারণা নেই। এমনকী অনেকে নিজের যোগ্যতায় সমবায় সমিতির প্রতিনিধি নির্বাচনেও জিততে পারেন না।” তৃণমূলের একাংশের ধারণা, এ ক্ষেত্রে খোঁচাটা জ্যোতির্ময়বাবুকেই। কারণ, ২০০৯ সালে কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন রাজ্যের বর্তমান সমবায় মন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy