Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

আলো জুগিয়েও বণ্টন সংস্থা সেই ঘাটতির তিমিরে

রাজ্যে লোডশেডিং প্রায় নেই। গ্রামীণ বিদ্যুদয়নের কাজ চলছে। গ্রাম ও শহরে বিপিএল এবং এপিএল গৃহস্থের বাড়িতে বিদ্যুৎ-সংযোগও দেওয়া হচ্ছে। এ-সব কাজের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসাও পেয়েছে বিদ্যুৎ দফতর। কিন্তু প্রদীপের নীচের অন্ধকার তাতে ঘোচেনি। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার মাথায় এখনও বিরাট রাজস্ব-ঘাটতির খাঁড়া ঝুলছে। চলতি অর্থবর্ষেও তাদের রাজস্ব-ঘাটতি অন্তত ১৮৬০ কোটি টাকা হবে বলে সংস্থার হিসেব।

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৫৯
Share: Save:

রাজ্যে লোডশেডিং প্রায় নেই। গ্রামীণ বিদ্যুদয়নের কাজ চলছে। গ্রাম ও শহরে বিপিএল এবং এপিএল গৃহস্থের বাড়িতে বিদ্যুৎ-সংযোগও দেওয়া হচ্ছে। এ-সব কাজের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসাও পেয়েছে বিদ্যুৎ দফতর। কিন্তু প্রদীপের নীচের অন্ধকার তাতে ঘোচেনি। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার মাথায় এখনও বিরাট রাজস্ব-ঘাটতির খাঁড়া ঝুলছে। চলতি অর্থবর্ষেও তাদের রাজস্ব-ঘাটতি অন্তত ১৮৬০ কোটি টাকা হবে বলে সংস্থার হিসেব।

ঘাটতির ভুলভুলাইয়া থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার তরফে চেষ্টার অবশ্য ত্রুটি নেই। ওই সংস্থা সূত্রের খবর, চলতি অর্থবর্ষের শুরুতে রাজস্ব-ঘাটতি ধরা হয়েছিল ২৫৬০ কোটি টাকা। গত কয়েক মাসে বিদ্যুতের বিল আদায়ে তৎপরতা, পরিকল্পনা করে সস্তায় বিদ্যুৎ কেনা এবং অন্যান্য খাতে আয় বাড়িয়ে ঘাটতি প্রায় ৭০০ কোটি টাকা কমানো গিয়েছে। এক বিদ্যুৎকর্তা জানান, বণ্টন এলাকার সর্বত্রই এখন ‘স্পট বিলিং’-এর ব্যবস্থা হয়েছে। অর্থাৎ গ্রাহকদের ঘরে গিয়ে মিটার দেখে সঙ্গে সঙ্গে বিল দিয়ে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়ে বিল আদায়ে জোর দেওয়া হচ্ছে প্রতি ডিভিশনেই। কোন ট্রান্সফর্মার থেকে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ দিয়ে কত টাকা আয় হচ্ছে, তারও অডিট হচ্ছে প্রতি মাসে। সেই সঙ্গে খুব প্রয়োজন না-হলে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করা হচ্ছে না। সব মিলিয়ে রাজস্ব-ঘাটতি কিছুটা হলেও কমানো গিয়েছে।

বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার পক্ষে এ কাজ উল্লেখযোগ্য, সন্দেহ নেই। কিন্তু সামগ্রিক বিচারে যতটুকু কাজ হয়েছে, তা আসলে সিন্ধুতে বিন্দু ছাড়া কিছু নয়। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পরিষেবা দেওয়ার জন্য যে-আর্থিক জোর দরকার, ওই সংস্থার কর্তৃপক্ষের তা নেই। সংস্থা চালানোর জন্য ফি-বছর এখনও তাঁদের ব্যাঙ্কঋণের উপরেই ভরসা করতে হয়। তাই সংস্থার পরিচালন পর্ষদ তাই ‘ক্রেডিট লিমিট’ বা ব্যাঙ্কঋণ নেওয়ার ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

সংস্থার চেষ্টা সত্ত্বেও ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন?

বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা এর দায় চাপাচ্ছে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতর এবং নানান সরকারি প্রতিষ্ঠানের উপরেই। ওই সংস্থার কর্তৃপক্ষের একাংশের বক্তব্য, রাজ্যের বিভিন্ন দফতরের কাছে কোটি কোটি টাকার বিল অনাদায়ি হয়ে পড়ে থাকার জেরেই ঘাটতি আকাশ ছুঁয়েছে। রাজ্যের কয়েকটি দফতরের কাছে বণ্টন সংস্থার বকেয়া রয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। সেই সঙ্গেই রয়েছে বিদ্যুৎ চুরির সমস্যা। বণ্টন সংস্থার নির্দিষ্ট এলাকায় ১০০টি গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে বিদ্যুৎ পরিষেবা দিয়ে ক্ষতি হচ্ছে ৬০ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ টাকার বিদ্যুৎ বিক্রি করে ৬০ টাকা লোকসান, ঘরে আসে মাত্র ৪০ টাকা। বণ্টন সংস্থার কর্তাদের অভিযোগ, ওই সব পরিষেবা কেন্দ্রে ব্যাপক হারে বিদ্যুৎ চুরি হয়। বিল জমা না-দেওয়ার প্রবণতা তো রয়েছেই। এ-সবের জেরেই লোকসান হচ্ছে বণ্টন সংস্থার। ফলে ঘাটতির পুরোপুরি মোকাবিলা করা তো যাচ্ছেই না। এমনকী কর্মীদের ডিএ বা মহার্ঘ ভাতাও বকেয়া পড়ে গিয়েছে সাত শতাংশ।

অন্য বিষয়গুলি:

loadshedding pdcl wbsecl pinaki bandyopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE