Advertisement
০২ জানুয়ারি ২০২৫
Pandua Travel

ইতিহাসের অলিন্দে এক বেলা, শীতের মরসুমে ভ্রমণ তালিকায় থাক পাণ্ডুয়া

পাণ্ডুয়ার মেলাপাড়ায় রয়েছে প্রাচীন মসজিদের ধ্বংসাবশেষ, সুউচ্চ মিনার। ইতিহাসে আগ্রহ থাকলে কোনও এক সকালে বেরিয়ে ঘুরে নিতে পারেন প্রাচীন এই জনপদ।

ইতিহাসের সন্ধানে। পাণ্ডুয়ায় ঘুরে নিন।

ইতিহাসের সন্ধানে। পাণ্ডুয়ায় ঘুরে নিন। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:৩৯
Share: Save:

হাওড়া থেকে বর্ধমান মেন লাইনের ট্রেনে চেপে বসলে মাঝে পড়বে ১৮টি স্টেশন। ১৯তম স্টেশনটির নাম পাণ্ডুয়া। এক সময়ের গ্রামেই এখন শহুরে ছাপ।

পাণ্ডুয়া নামকরণ পাণ্ডু নামে কোনও রাজা বা রাজত্বের নাম থেকেই কি না, তা স্পষ্ট জানা যায় না। কেউ বলেন, পাণ্ডুয়ার পূর্ববর্তী নাম ছিল পাণ্ডুনগর। তবে এখানে এখনও রয়ে গিয়েছে প্রাচীন মসজিদের ধ্বংসাবশেষ। সেখান থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে মিনার। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ জায়গাটির তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে বোর্ড ঝুলিয়ে, সাবধানবাণী জানিয়েছে। ঐতিহাসিক স্থানটি সংরক্ষিত, ক্ষতি করা যাবে না ইত্যাদি।

তবে ইতিহাসের বিশদ বিবরণ তারা দেয়নি। আশপাশে ঘরবাড়ি, তারই মধ্যে অনাদরে পড়ে রয়েছে মসজিদের ধ্বংসাবশেষ। বেশ কয়েক বছর আগেও শীতের দিনে সেখানে স্থানীয়েরা বসে রোদ পোহাতেন, শুকোতে দিতেন কম্বল, শাড়ি। এখনও সেই একই ছবির পুনরাবৃত্তি হয় কি না, জানা নেই। তবে উঁচু মিনার ঘেরা হয়েছে তারের বেড়াজালে। দূর থেকেই তা দেখে সন্তুষ্ট হতে হয়।

পাণ্ডুয়ার এই মসজিদ বড়ি মসজিদ বা বাইশ দরওয়াজা মসজিদ নামে পরিচিত। ভেঙে পড়া নির্মাণশৈলী আজও বিস্ময়ের উদ্রেক করে। কেউ কেউ বলেন, মসজিদে ২৭টি খিলান রয়েছে। তার মধ্যে পাঁচটি ইটের গাঁথনি দিয়ে বন্ধ। তা থেকেই ‘বাইশ দরওয়াজা’ নামকরণ। আবার কেউ বলেন, এখানে ২২টি খিলানই রয়েছে, তা থেকেই এমন নাম। পোড়া ইট বা টেরাকোটার যে সমস্ত মসজিদ বঙ্গে রয়েছে, তার মধ্যে এটিও একটি। ভেঙে পড়া মসজিদগাত্রে এখনও রয়ে গিয়েছে টেরাকোটার নকশার অবশিষ্টাংশ।

নির্মাণশৈলী বলছে, আয়তক্ষেত্রাকার মসজিদে এ কসময় ছিল তিনটি প্যাসেজ বা করিডর। ৬৩টি গম্বুজ। যার কোনওটিই বর্তমানে আর নেই। পড়ে রয়েছে ৪২টি ব্যাসল্ট পাথরের স্তম্ভের কয়েকটির ধ্বংসাবশেষ। মনে করা হয়, গম্বুজগুলির ভারবহনে সেগুলি তৈরি করা হয়েছিল। মসজিদের মধ্যবর্তী অংশে রয়েছে কালো ব্যাসল্ট পাথরের সিংহাসন।

পাণ্ডুয়ার ইতিহাস নিয়ে যাঁরা চর্চা করেছেন, তাঁদের অনেকের মতেই মসজিদের বিভিন্ন অংশে দেখা মেলে হিন্দু স্থাপত্যরীতির অংশবিশেষের। তা নিয়ে বিতর্ক। কারও মতে, এই মসজিদ হিন্দু আমলের কোনও নির্মাণের উপর স্থাপিত। ঠিক কবে এই মসজিদ তৈরি হয়েছিল তার কোনও সঠিক হিসাব ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ দেয়নি। তবে নির্মাণশৈলী এবং আনুষঙ্গিক নিদর্শন দেখে ইতিহাসবিদদের অনুমান, চতুর্দশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এটি তৈরি হতে পারে।

পাণ্ডুয়ার পুরনো মসজিদ।

পাণ্ডুয়ার পুরনো মসজিদ। ছবি: সংগৃহীত।

ভেঙে পড়া মসজিদ থেকেই সামান্য দূরে রয়েছে মিনার। জানা যায়, পাঁচ তলা মিনারটি ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পরবর্তীতে তা সংস্কার করা হয়। পাঁচ তলা মিনারের প্রথম তলার ব্যাস ৬০ ফুট, সবচেয়ে উপরের তলার মিনারটির ব্যাস ১৫ ফুট। ভিতরে উঠেছে ঘোরানো সিঁড়ি। প্রতিটি তলায় রয়েছে চাতাল এবং ঘুলঘুলি। তবে সিঁড়ির দরজা তালাবন্ধ থাকে। বেশ কয়েক বছর হল মিনারের কাছে যাওয়ারও অনুমতি মেলে না।

মিনারটি ঠিক কত বছরের পুরনো, তারও নির্দিষ্ট হিসাব নেই। অনুমান, ফকির শাহ সুফিউদ্দিন দিল্লির সুলতানের সহায়তায় পাণ্ডুয়ার হিন্দু রাজাকে পরাস্ত করে বিজয় স্মারক হিসেবে সেটি নির্মাণ করান। আবার কেউ কেউ মনে করেন, হিন্দু রাজারাই এটি তৈরি করিয়েছিলেন।

পাণ্ডু রাজা, ইতিহাস নিয়ে যেমন বিতর্ক রয়েছে, তেমনই রয়েছে নানা কাহিনি। তার কোনটি সত্য, আর কোনটি নয়, আজ আর তা স্পষ্ট ভাবে জানা যায় না। তবে যদি শীতের মরসুমে ইতিহাসের টানে বেড়িয়ে পড়তেই হয়, তবে পাণ্ডুয়া রাখতেই পারেন তালিকায়।

কী ভাবে যাবেন?

হাওড়া-বর্ধমান লোকালে (মেন) চেপে পৌঁছনো যায় পাণ্ডুয়া স্টেশনে। হাওড়া-পাণ্ডুয়া লোকালও আছে। স্টেশন সেখান থেকে অটো বা টোটো ধরে মেলাতলা। সেখানেই দেখতে পাবেন মসজিদের ধ্বংসাবশেষ এবং মিনার। কলকাতা থেকে দিল্লি রোড ধরেও পাণ্ডুয়ায় আসতে পারেন। দূরত্ব মোটামুটি ৭০ কিলোমিটার। ঘণ্টাখানেকেই এই চত্বর ঘুরে নিতে পারবেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Travel Pandua
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy