Advertisement
০৪ জানুয়ারি ২০২৫
Kaikhali Nimpith

কলকাতা থেকে ঘণ্টা তিনেকের পথ, সাগর অভিসারী মাতলার কাছে যাবেন নাকি?

কলকাতার অদূরে মাতলার রূপদর্শনে ঘুরে নিতে পারেন কৈখালি। সঙ্গে জুড়ে নিন নিমপীঠ। দেড় দিনেই সুন্দরবন ছুঁয়ে আসতে পারবেন।

মাতলার বুকে ভেসে বেড়াতে চান?

মাতলার বুকে ভেসে বেড়াতে চান? ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:৫৩
Share: Save:

পুরী, দিঘা, দার্জিলিং তো হল। কিন্ত ওই যে কথায় আছে, ‘‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’’— ঘরের কাছের তেমনই এক জায়গা কৈখালি।

উচ্ছল মাতলা, শান্ত নিমানিয়ার সঙ্গমস্থল। বাদাবন, বিস্তৃত জলরাশি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে এমন এক জায়গা যে কলকাতার অদূরে থাকতে পারে, বোঝাই দায়। সময়ের হিসাবে স্থানটির দূরত্ব কলকাতা থেকে প্রায় ঘণ্টা তিনেকের। শিয়ালদহ থেকে ট্রেন ধরে জয়নগর-মজিলপুর ১ ঘণ্টা ১২ মিনিট। তার পর সেখান থেকে নিমপীঠ ছুঁয়ে অটোয় একটানা কৈখালি চলে গেলে গেলে কমবেশি ঘণ্টা দেড়েক লাগবে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার কৈখালিকে সুন্দরবনের অংশবিশেষ বললেও অত্যুক্তি হয় না। মাতলা পার হলেই ঝড়খালি। সেখানেই ব্যাঘ্র পুনবার্সন কেন্দ্র। বরাত ভাল হলে, সেখানে গিয়ে রয়্যাল বেঙ্গলের হুঙ্কার শুনতে পাবেন।

তবে কৈখালি যাওয়ার আগে ছুঁয়ে যেতে পারেন নিমপীঠ রামকৃষ্ণ আশ্রম। জয়নগর-মজিলপুর স্টেশন থেকে টোটো, অটো ধরে স্বল্প সময়েই পৌঁছনো যায় সেখানে। এক সময়ের গ্রামে এখন শহুরে ছাপ। তাই নিমপীঠের পথে সে ভাবে সবুজ আর চোখে পড়ে না। বরং রাস্তার দু’পাশে শুধু ছোট-বড় দোকান, বিক্রেতাদের হাঁকডাক, টোটো, অটোর দর কষাকষি।

তবে নিমপীঠ রামকৃষ্ণ আশ্রমে পা দিলেই মন শান্ত হয়ে যায়। পরিচ্ছন্ন চত্বর, যত্নে লাগানো গাছ। সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেলে মার্বেলের মন্দিরে শ্রীরামকৃষ্ণের মূর্তি। বিবেকানন্দ, সারদাদেবীর ছবি। মন্দিরের গঠনশৈলীতে বেলুড় মঠের সঙ্গে কিছুটা মিল পাওয়া যায়।

নিমপীঠের রামকৃষ্ণ আশ্রমের মধ্যস্থিত মন্দির।

নিমপীঠের রামকৃষ্ণ আশ্রমের মধ্যস্থিত মন্দির। ছবি: সংগৃহীত।

কৈখালি যাওয়ার সময় নিমপীঠ হয়ে যাওয়ার আর একটি কারণ রয়েছে। কৈখালিতে যে পর্যটক আবাস রয়েছে, সেটি নিমপীঠ রামকৃষ্ণ মিশন দ্বারা পরিচালিত। আগাম বুকিং করা হলেও, এখানে এসে এক বার মহারাজের সঙ্গে কথা বলে যেতে হয়। সেই সঙ্গে আবাসে আসা অতিথিরা মধ্যাহ্নভোজন সারেন প্রসাদ খেয়ে। এক-দুই পদ নয়। এখানে অতিথি আপ্যায়ণে কার্যত পঞ্চব্যাঞ্জন সাজিয়ে দেওয়া হয়।

এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নিমপীঠ আশ্রমের বিশেষ ভূমিকা আছে। আশ্রমের দু’পাশে হাঁটলে দেখা যায় তাদের বিশাল কর্মকাণ্ড। ছেলেমেয়েদের স্কুল, মাটি পরীক্ষাকেন্দ্র, কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, আরও কত কী!

নিমপীঠে খানিক জিরিয়ে, দুপুরের আহার সেরে অটো নিয়ে সোজা চলে যেতে পারেন কৈখালি। এই পথে অবশ্য যতই এগোনো যায়, ততই ঘন হয় সবুজ। মাঝেমধ্যে গাঁ-গঞ্জ। আবার কিছুটা শুনশান। অটো থামে বাঁধরাস্তার মুখে। সেখানেই রয়েছে পর্যটন আবাস। খাওয়া-থাকা নিয়ে মাথাপিছু খরচ ধার্য।

আবাসের সামনেই বাদাবন। মাতলার উত্তাল হাওয়া আটকাতেই সেখানে বনসৃজন করা হয়েছে বলে অনুমান। কারণ, ঘূর্ণিঝড় এলে ম্যানগ্রোভের সেই জঙ্গলই হয়ে উঠবে ঢাল। রক্ষা পাবে পর্যটন আবাস। বাদাবনকে বাঁয়ে রেখে চওড়া বাঁধ পথে এগোলেই ধরা দেয় মাতলা। সাগর-অভিসারী মাতলার তেজ সমুদ্রের চেয়ে কম নয়।

বিকেলবেলা পৌঁছে গেলে মোটরচালিত নৌকো ভাড়া করে বরং নদীবক্ষে বেরিয়ে পড়ুন। এক দিকে মাতলা, অন্য দিকে নিমানিয়া। দুই নদীর দুই রূপ। নিমানিয়া শান্ত। তার বুকে ভেসে পৌঁছনো যায় অন্য জনপদ, ঘাটগুলিতে। রক্তিম আভা ছড়িয়ে সুয্যি যখন পাটে যায়, সেই রূপ বিভোর হয়ে দেখার মতো।

এমন সময় নৌকো জেটিঘাটে ভিড়লে শুনতে পাবেন ঘণ্টাধ্বনি। শঙ্খের শব্দ। ওই স্থানেই রয়েছে রামকৃষ্ণ আশ্রম পরিচালিত আর একটি মন্দির। প্রতি সকাল এবং সন্ধ্যায় সেখানে নিয়ম করে আরতি হয়। সেখান থেকে বাঁধরাস্তার দূরত্ব মিনিট দুয়েকের। সন্ধ্যার কৈখালি দেখলে দিঘা বলে ভ্রম হতে পারে। ঝালমুড়ি, আলুকাবলি, ফুচকা নিয়ে সেখানে হাজির হয়ে যান দোকানিরা।

কৈখালিতে মিলেছে দুই নদী। নদীবক্ষে ভেসে যাওয়া যায় অনেক দূর।

কৈখালিতে মিলেছে দুই নদী। নদীবক্ষে ভেসে যাওয়া যায় অনেক দূর।

চাইলে ঠোঙায় ঝালমুড়ি নিয়ে মাতলার বাঁধানো পারে গোটা সন্ধ্যাই কাটিয়ে দিতে পারেন। যদি পূর্ণিমা দেখে কৈখালি যাওয়ার পরিকল্পনা করেন, তা হলে দেখতে পাবেন জ্যোৎস্নামাখা আলোয় মাতলার রূপ।

একটি রাত কৈখালিতে থেকে গেলে পরের দিন সকালবেলায় চলে যেতে পারেন ঝড়খালি। নদীপথে ঝড়খালি যেতে ঘণ্টা দুই থেকে আড়াই সময় লাগে। যাওয়ার পথেই কোথাও কোথাও চোখে পড়বে ম্যানগ্রোভের জঙ্গল জাল দিয়ে ঘেরা। বাঘ যাতে নদীতে সাঁতরে না চলে আসে, সেই জন্যই নাকি সতর্কতা!

ঝড়খালিতে অসুস্থ, বয়স্ক বাঘেদের উদ্ধার করে রাখা হয়। চিকিৎসা করানো হয়। কেউ চাইলে কৈখালির বদলে ঝড়খালিতেও থাকতে পারেন। ম্যানগ্রোভের অরণ্যে ঘেরা এই স্থানটিও মনোরম। দূরদূরান্ত পর্যন্ত দেখার জন্য রয়েছে নজর মিনার। দিন দুয়েক হাতে থাকলেই নিমপীঠ-কৈখালি ঘোরা হয়ে যায়।

কী ভাবে যাবেন?

শিয়ালদহ থেকে নামখানা লোকালে চেপে জয়নগর-মজিলপুর স্টেশন। সেখান থেকে অটো ভাড়া করে রামকৃষ্ণ আশ্রম এবং কৈখালি যাওয়া যায়। গাড়ি নিয়ে আসতে পারেন। গাড়িতে বারুইপুর কাছারিবাজার হয়ে এলে কুলপি রোড ধরতে হব।

কোথায় থাকবেন?

কৈখালিতে থাকার জন্য পর্যটক আবাস রয়েছে। সেটি নিমপীঠ রামকৃষ্ণ আশ্রমের সাহায্যে বুকিং হয়। এ ছাড়া সেখানে থাকার জন্য আরও একটি বেসরকারি হোটেল রয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Kaikhali Travel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy