শুটিংয়ের ব্যস্ততা কমলেই ঘুরতে বেরিয়ে পরেন ঋষি কৌশিক। যেমন সম্প্রতি বারাণসী এবং অযোধ্যা ঘুরে এসেছেন তিনি। রোড ট্রিপে সাধারণত অনেকেই বাহন হিসাবে চারচাকা পছন্দ করেন। কিন্তু কৈশোর থেকেই ঋষি কৌশিকের সঙ্গী হল মোটরবাইক।
দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততা থেকে মুখ ঘোরাতেই ভ্রমণ। ঘুরতে গিয়ে নিজেকেও নতুন করে চেনার সুযোগ থাকে। অভিনেতা ঋষির ক্ষেত্রেও একাধিক বার তা ঘটেছে। তবে তাঁর ক্ষেত্রে এ সবটাই বাইক নির্ভর।
আরও পড়ুন:
বাইকের প্রতি আলাদা ভাল লাগা রয়েছে ঋষির। তাই গাড়িতে ঘুরলেও, তাঁর পছন্দ মোটরবাইক। বলছিলেন, ‘‘গাড়ির তুলনায় বাইক অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। বাইকে বন্ধুদের সঙ্গে বহু ট্যুর করেছি। আগে প্রচুর ঘুরতে যেতাম। অতিমারির পর থেকে সে ভাবে নিয়মিত ঘুরতে যেতে পারিনি।’’
সপ্তাহান্তে সময় পেলে শহরের কাছেই ঘুরতে বেরিয়ে পরেন ঋষি। তালিকায় রয়েছে শান্তিনিকেতন, তাজপুর, চিল্কার মতো একাধিক পর্যটনকেন্দ্র। কিন্তু সেগুলিকে তিনি ‘ট্রিপ’ বলতে নারাজ। ২০০৭ সালে বাইক নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে প্রথম শঙ্করপুর গিয়েছিলেন ঋষি। তিনি বললেন, ‘‘সেই যে মজা পেয়েছিলাম, সেটা আজও একই রয়ে গিয়েছে।’’ একটা সময়ে তাই সপ্তাহান্তে ওড়িশাই ছিল তাঁর অন্যতম প্রিয় গন্তব্য। হেসে বললেন, ‘‘দু’দিন ছুটি পেলেই বালেশ্বরের পঞ্চলিঙ্গেশ্বর মন্দিরে চলে যেতাম। সে সব দিনগুলো খুব মিস্ করি।’’

মোটরবাইকে ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন ঋষি কৌশিক। ছবি: সংগৃহীত।
সময়ের সঙ্গে মোটোরবাইকে ঋষি সিকিম, ভুটান, গোয়া বাইকে চষে ফেলেছেন। তিনি বললেন, ‘‘নানা রকমের অভিজ্ঞতার সাক্ষী থেকেছি। স্বল্প পরিসরে বলে শেষ করতে পারব না।’’ কিন্তু ২০১০ সালে লে-লাদাখ সফর তাঁর মনে এখনও বিশেষ জায়গা জুড়ে রয়েছে। দুর্গম পথে নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি। বললেন, ‘‘পানিপথের কাছে ক্লাচ কেব্ল কেটে গিয়েছিল। পরে রাস্তায় টায়ার পাংচার হয়েছে। কিন্তু সে বার আমরা সঙ্গে এক জন মেকানিক নিয়ে গিয়েছিলাম বলে দ্রুত সমস্যা মিটে যায়।’’
ঋষির মতে, এক দিন চায়ের কাপে আড্ডা দিয়ে বাইক সফরের জন্য বন্ধু চেনা মুশকিল। অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কথা প্রসঙ্গে লাদাখ সফরেরই এক অন্য অভিজ্ঞতা শোনালেন ঋষি। সফর শুরু করেছিলেন ৭ জন। কিন্তু পথে এক জন দুর্ঘটনার সম্মুখীন হন। ফলে পাঁচ জন ট্যুর শেষ না করেই কলকাতা ফিরে আসেন। ঋষি বললেন, ‘‘লাদাখ তো বার বার যাওয়া হয় না। আমি আর এক জন বন্ধু ফিরতে রাজি হইনি। আমরা কিন্তু ট্যুর শেষ করেই ফিরেছিলাম। তাই এই ধরনের ট্যুরের ক্ষেত্রে সাহসেরও প্রয়োজন রয়েছে।’’ ঋষির মতে, লে-লাদাখ সফর তাঁকে শিখিয়েছিল সহ-পর্যটক বাছতে।
ঋষি যে সময়ে বাইকে দূর দূরান্তে ভ্রমণে যেতেন, তখন মোবাইলের প্রযুক্তির সুবিধা ছিল না। জানালেন, তখন নতুন জায়গায় সঙ্গে রাখতে হত ম্যাপ। গন্তব্য পথে কোথায় কোথায় বাইকের সার্ভিসিং সেন্টার রয়েছে, তার তথ্য আগাম জেনে রাখতে হত। ঋষি বললেন, ‘‘এখন তো ভাল ভাল গ্যাজেট এবং গিয়ার পাওয়া যায়। ইন্টারনেটের জন্য সময় বাঁচে। বাইকে দূরপাল্লার সফরে তাই আরোহীরা এখন অনেকটাই সুরক্ষিত।’’

লাদাখের পথে ঋষি কৌশিক। ছবি: সংগৃহীত।
বাইকে সফরের ক্ষেত্রে, নতুন জায়গার ট্যুর ম্যাপ সম্পর্কে আগে থেকে ধারণা থাকাটা জরুরি বলেই মনে করেন ঋষি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সফর করে, তার পর সে দিনের মতো নাইট স্টে করার চেষ্টা করেন তিনি। নিজের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গেই বললেন, ‘‘লে থেকে ফেরার সময়ে ভেবেছিলাম কার্গিলে রাত্রে থাকব। দেখলাম দুপুরেই কার্গিল পৌঁছে গেলাম। সন্ধ্যা ছ’টায় আমি তখন সোনমার্গে।’’ দিনের আলো শেষ হয়ে আসছে। এ দিকে অমরনাথ যাত্রার মরসুম। সেনা কার্ফু শুরু হবে। ঋষির কথায়, ‘‘এক জন সেনা আধিকারিক শ্রীনগর চলে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। ফলে অনেকটাই সুবিধা হল। রাত ন’টায় শ্রীনগরে সে দিনের মতো বিশ্রাম।’’
তবে সময়ের সঙ্গে বন্ধুদেরও ব্যস্ততা বেড়েছে। তাই আগের মত এখন ঘোরার জন্য সকলে সময় বার করতে পারেন না। ঋষি বললেন, ‘‘বাইক ট্রিপ সকলের সঙ্গে করাও যায় না। আমারও এখন কয়েক জনই মাত্র পরিচিতেরা রয়েছেন। সময় পেলে তাঁদের সঙ্গেই বেরিয়ে পড়ি।’’
ঋষির মতে, নিজেকে নতুন করে যদি কেউ খুঁজে পেতে চায়, তা হলে ভ্রমণ তার অন্যতম মাধ্যম। বললেন, ‘‘একটা অচেনা রাস্তায় আমি বাইকে একা। নিজের সঙ্গেই তখন নানা কথা বলি। নিজেকে অন্য ভাবে চিনতে পারি। সেই অনুভূতি আমি ভাষায় ব্যক্ত করতে পারব না। সেটা একান্তই পর্যটকের নিজস্ব।’’

ঋষি বিশ্বাস করেন, বাইকে একা সফরের সময় নিজেকে নতুন করে চেনা সম্ভব। ছবি: সংগৃহীত।
বাইকে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ঋষির পরামর্শ
১) নতুন হোক বা পুরনো, ভ্রমণের আগে থেকে বাইকের প্রয়োজনীয় সার্ভিসিং করিয়ে রাখা উচিত। তা হলে পথে সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা কম থাকে।
২) বাইক মেরামত সম্পর্কে অল্পবিস্তর জ্ঞান থাকলে সুবিধা হয়। সঙ্গে পাংচার কিট, ফিউজ় এবং ক্লাচ কেবল রাখা উচিত।
৩) ছিঁড়ে গেলে সব বাইকের ক্লাচ কেবল নিজের হাতে বদলানো সম্ভব নয়। তাই রাস্তায় কোথায় কোথায় সার্ভিস সেন্টার এবং পেট্রল পাম্প রয়েছে, জেনে রাখলে সুবিধা হবে।
৪) পথের আবহাওয়া এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা জরুরি।
৫) বাইকে ঘুরতে হলে খুব বেশি জিনিসপত্র নেওয়া সম্ভব নয়। তাই চট জলদি শুকিয়ে যায় এবং বার বার ব্যবহার করা যায়, এ রকম পোশাক নেওয়া উচিত। সঙ্গে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রও রাখা দরকার।
৬) গাড়ির থেকে বাইকের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি। তাই ভাল হেলমেট, গ্লাভস্, নি-ক্যাপ এবং জুতো ব্যবহার করা জরুরি। বাইক চালানোর নিয়ম লঙ্ঘন করা উচিত নয়। কোনও রকম ‘স্টান্ট’ থেকে দূরে থাকতে হবে।
৭) দীর্ঘ রাস্তা হলে ১০০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার অন্তর বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। ক্লান্তি এড়াতে দিনে ৮ ঘণ্টার বেশি বাইক না চালানোই ভাল।
৮) ফোন, ক্যামেরা বা জিপিএস নির্ভর অন্যান্য ডিভাইসের জন্য সঙ্গে পাওয়ার ব্যাঙ্ক থাকলে বিনা সমস্যায় গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়।
৯) কোনও দুর্ঘটনার সম্মুখীন হলে বা অন্য যে কোনও সমস্যায় অবিলম্বে স্থানীয় হাসপাতাল এবং প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।