Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Travel

বারো বছর পরে আবার শিলং পাহাড়ে

উৎসবমুখর গির্জা দেখে সামনে ঘাসজমির ওপর পাতা বেঞ্চে বসে পড়লাম ছবি আঁকতে।

পুলিশ বাজার

পুলিশ বাজার

দেবাশীষ দেব
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৯ ১৬:৩৫
Share: Save:

প্রায় বারো বছর পর শিলংয়ে এলাম। গণ্ডগোল কম বলে এ দিকে আজকাল টুরিস্টের ভিড় বেড়েছে, শিলং-ও আর আগের মতো ফাঁকা ফাঁকা নেই। যখন শিলংয়ে পা দিলাম তখন ‘অফ সিজন’, তা-ও শহরে ঢোকার মুখে যানজটের ধাক্কায় প্রাণ যায় যায় অবস্থা হল। ছোটবেলার বন্ধু অজয়ের এককালে শিলংয়ে খুব যাতায়াত ছিল, ওর কাছেই শুনেছিলাম ‘আর্ল হলিডে হোম’-এর কথা। ইন্টারনেটে খাড়া গম্বুজওয়ালা সাহেবি আমলের কাঠের বাড়িটার ছবি দেখে ম্যানেজারকে ফোনে ঘর রাখার কথা বলতে দেরি করিনি।

আর্ল হলিডে হোম

পুলিশ বাজার থেকে মিনিট পাঁচেকের হাঁটা, পাঁচিল ঘেরা কম্পাউন্ডের মধ্যে মূল বাড়িটা চিনতে অসুবিধে হল না বটে, কিন্তু দেখলাম কয়েকটা অফিসঘর বাদে সবটাই থাকার অযোগ্য হয়ে পড়ে আছে। বেশ দমে গেলাম আরকি। পাশেই চারতলা পাকা বাড়ি, যেটা এদের সংযোজন বা ‘অ্যানেক্স’। বাক্সপ্যাঁটরা সমেত ওরই একটা ঘরে আমাদের ঢুকিয়ে দিল। ব্যবস্থা অবশ্য খুবই ভাল, দেখভালের এক জন লোক রয়েছে সঞ্জীব, হাওড়ার বাঙালি এবং যথেষ্ট বিনীত। জানা গেল, ওকে ডাকলেই পাশের ধাবা থেকে খাবারদাবার এনে দেবে। দারুণ ঝাঁ চকচকে এই ‘হাই হাট ধাবা’-র শিলংয়ে খুব নামডাক।

ওয়ার্ডস লেক

পর দিন সকালেই পায়ে হেঁটে চলে গেলাম ওয়ার্ডস লেক। দশ টাকা করে টিকিট, তাই বেশির ভাগ লোকই হাতে সময় নিয়ে এসে বেঞ্চ বা স্রেফ নরম ঘাসের ওপর শুয়ে-বসে কাটায় কিংবা দলবেঁধে বোটিং করে। আমিও বসে পড়লাম ছবি আঁকতে, তবে গত বারের দিকটা নয়, তার উল্টো দিকে। লেকের ধারে একটা রেস্তরাঁ হয়েছে, ‘ব্যাম্বু হাট’, বারান্দায় ছাতার তলায় বসে নুডলস আর মোমো দিয়ে লাঞ্চ সারতে সারতে দেখছিলাম শীতের শুরুতে সবার মনে কি ফূর্তি। লেকের আশপাশের রাস্তাগুলো হেঁটে বেড়াবার জন্য চমৎকার, খানিকটা উঠে গেলেই পাহাড়ের মাথায় সেই বিখ্যাত ‘পাইন উড’ হোটেল যা এখনও সেই সাহেবি মেজাজটাকে দিব্যি ধরে রেখেছে। শিলংয়ে খ্রিস্টান প্রচুর, ফলে ছোট-বড় গির্জাও রয়েছে দু’পা অন্তর। কম-বেশি ভিড় দেখলাম রয়েছে সর্বত্র এবং ছেলেমেয়ের দল গিটার বাজিয়ে জোর গানের আসর বসিয়েছে। আসলে এখানে এরা বড়দিনের এক মাস বাকি থাকতেই আগাম উৎসব শুরু করে দেয়।

আরও পড়ুন: হিমাচলের জালোরি পাস হয়ে অল্পচেনা রূপকথার সোজা গ্রামে

গির্জায় আগাম বড়দিনের উৎসব চলছে

হোটেলের কাছেই বড় রাস্তার ওপর এ রকম একটা উৎসবমুখর গির্জা দেখে সামনে ঘাসজমির ওপর পাতা বেঞ্চে বসে পড়লাম ছবি আঁকতে। আজ রবিবার, তাই দলে দলে অল্পবয়সি খাসি ছেলেমেয়ের দল সুন্দর সেজেগুজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরই মধ্যে এক তরুণ মিজো স্কুলশিক্ষক এসে আলাপ করল, পাশে দাঁড়িয়ে আঁকা দেখার অনুমতি চাইল। পরে ওকেও বসিয়ে স্কেচ করলাম। গির্জায় তখন সমবেত সঙ্গীত শুরু হয়েছে, দরজার কাছে যেতেই হাসিখুশি মিষ্টি মেয়েগুলো আপ্যায়ন করে ভেতরে নিয়ে গিয়ে বসাল।

তরুণ মিজো স্কুলশিক্ষক

শিলচরের ছেলে সুপ্রিয়র সঙ্গে চেনা ফেসবুক মারফৎ, আপাতত ও শিলংয়ে চাকরি করে। বিকেলে প্রায় দশ মাইল দূর থেকে পুলিশ বাজারে এল আমার সঙ্গে দেখা করতে। এক প্রস্থ আড্ডা দেওয়ার পর চা খাওয়াতে নিয়ে গেল পাশেই ‘দিল্লি চাট হাউস’-এ, সঙ্গে এল গরম গরম জিলিপি, শিঙাড়া। দুটো তলা মিলিয়ে দারুণ চালু দোকান, শো-কেসগুলোতে নানাবিধ মিষ্টি আর নোনতা খাবারে একেবারে উপচে পড়ছে। সন্ধে হতেই পুলিশ বাজারের মোড়ে খোলা জায়গায় উনুন বসিয়ে শিক কাবাবের দোকান জমে ওঠে। তন্দুর করা মুর্গির ঠ্যাং অথবা শুয়োরের মাংস দেদার বিক্রি হতে থাকে। এদের পান্ডা ‘এডি’র স্কেচ করলাম, দেখামাত্রই বলল, ‘‘স্যর, খাতাটা কাল আনবেন? ফটোকপি করাব।’’ সেইমতো গিয়েওছিলাম, কিন্তু ছেলেটার দেখা পাইনি।

আরও পড়ুন: সিকিমের নাথাং ভ্যালির পরনে যেন মেঘের পাগড়ি

ঝলসানো মাংস বিক্রি করছে ‘এডি’

আগে থেকেই ঠিক করেছিলাম এ যাত্রায় আসলি খাসি খাবার খেয়ে দেখতেই হবে। ওই পুলিশ বাজারেই ঘিঞ্জি দোকানগুলোর মধ্যে চোখে পড়ে গেল ‘ট্রাটোরিয়া’ রেস্তরাঁ। সাইনবোর্ড পড়েই মালুম হল খাসি খাবারের পিঠস্থান যাকে বলে, ভেতরটা ভিড়ে একেবারে গমগম করছে। কাউন্টারের মহিলাটি হাসিখুশি, আমাদের বলল ‘জাডো’ খেয়ে দেখো। প্রথমে এক প্লেট এল, মাঝখানে খিচুড়ি গোছের হলুদ সেদ্ধ ভাত, সঙ্গে চার-পাঁচ রকমের শুয়োরের মাংস আর মেটে। কোনওটা বড়া, কোনওটা মাখো মাখো তরকারি, কোনওটা আবার কাবাব, সঙ্গে নানা রকম আচার আর স্যালাড। দু’জনে মিলে চেটেপুটে খেলাম, মহিলা ভিড় সামলেও আমাদের দিকে ঠিক নজর রেখেছে। গিন্নির খাওয়ার ছবি তুলছি দেখে পাশে বসে পড়ল, কথায় কথায় নাম বলল ‘লাজারা’। শিলংয়ে গিয়ে এ বারেও আমরা গাড়ি নিয়ে চেরাপুঞ্জি ও তার আশপাশের ঝর্না, গুহা— কোনওটাই দেখতে বাদ রাখিনি। খুব ইচ্ছে ছিল গাছের শিকড় দিয়ে বানানো ব্রিজটায় ওঠার, আর একটা দিন লাগত বলে সেটা বাদ থেকে গেল। গিন্নিকে খুব আফশোস করতে দেখে বললাম, ‘‘আরে, পরের বার বলেও তো কিছু আছে, না কি?’’

অলঙ্করণ : লেখক

অন্য বিষয়গুলি:

Ananda Utsav 2019 Travel Shillong Tour
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy