অবসর: গোয়ার জনপ্রিয় পালোলেম বিচ
বেড়ানোর পরিকল্পনার প্রথম ধাপ যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নীরস পিডিএফ ডাউনলোড করা হতে পারে, কস্মিনকালেও কেউ ভেবেছিল? সত্যি, অতিমারি রোজ কত কী শেখাচ্ছে! নিয়মাবলি খুঁটিয়ে পড়ে জানা গেল, আপাতত বেড়াতে যাওয়ার পক্ষে সবচেয়ে ঝক্কিহীন জায়গা গোয়া। হেলথ স্ক্রিনিং বা কোয়রান্টিনের ব্যাপার নেই, স্মার্টফোনে আরোগ্য সেতু অ্যাপ থাকলেই হল।
তার পরেও এই গোয়া অচেনা। শীতকালের সৈকত রাজ্যে সব কিছুর দাম যেমন আকাশছোঁয়া, ভিড়ের চোটে ঠাঁই পাওয়াও তেমনই কঠিন। এ বার সার্জ প্রাইস তো নেই, বিচ রিসর্টেও ডিসকাউন্ট। মাণ্ডবী নদীর ক্রুজ়ও আগে থেকে বুক করতে হল না। মোদ্দা কথা, সব টুরিস্ট স্পটই অস্বাভাবিক ফাঁকা। তাই বেড়ানোও হল একেবারে নিজস্ব শর্তে।
ব্যক্তিগত মত, পানাজি শহরে থাকতে গেলে ঠিকানা ফনটেনহাস হওয়াই উচিত। প্রাচীন পর্তুগিজ় পাড়া, সব স্থাপত্য সে রকম। সরু রাস্তাগুলো যেন ছবিতে আঁকা, যেমন দেখা যায় ইউরোপের নানা শহরে। পুরনো ভিলা বা ছোট বাড়িগুলোর টানা ঝুলবারান্দা, হলুদ সবুজ নীল রঙে চোখ জুড়িয়ে যায়। পর্তুগিজ় ঐতিহ্যে রঙিন এই পাড়া ইউনেস্কো হেরিটেজ জ়োন। সকালবেলার আলোয় পায়ে হেঁটে ফনটেনহাসের অলিগলিতে ঘুরে না বেড়ালে গোয়া দেখা অসম্পূর্ণ। ক্রিসমাসের সময় তা আবার বাহারিআলোয় সেজে ওঠে।
ধারাপাত: দুধসাগর ফলস
পানাজি থেকে গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম নর্থ গোয়া আর ওল্ড গোয়া। বাঁধা সাইটসিইং নয়, পড়াশোনা করে রুট বানিয়েছিলাম। অতিমারির বাজারে পর্যটকের মর্জিমাফিক ঘুরতে আপত্তি করল না কোনও গাড়িই। প্রাচীন পর্তুগিজ় ঘাঁটি আগুয়াড়া দুর্গ এবং ‘দিল চাহতা হ্যায়’-খ্যাত ভগ্নপ্রায় চাপোরা দুর্গে ইচ্ছেমতো হাঁটা গেল, বসা গেল, ছবি তোলা গেল। আঞ্জুনা এবং সিঙ্কেরিম বিচে নিশ্চিন্তে সময় কাটানো গেল। এখানকার আলডোনা গ্রামটা যেন পটে আঁকা। স্থাপত্য আর প্রকৃতির সৌন্দর্য হাত ধরাধরি করে মিলেমিশে আছে। আবহাওয়ার কারণেই এটা গোয়া ভ্রমণের পিক সিজ়ন। কিন্তু না আছে ঠেলাঠেলি, না আছে আগুন দাম। হাত-পা ছড়িয়ে ঘোরার এই সুযোগ আর কোনও দিন আসবে না।
ওল্ড গোয়ায় ভিড় কিছু বেশি। সে ক্যাথিড্রাল, ক্যাথলিক চার্চ অব সেন্ট ফ্রান্সিস অব আসিসি, ব্যাসিলিকা অব বম জিসাস-এর চার্চ-কনভেন্ট চত্বরে অল্পবয়সি পর্যটকের ভিড়। এই অঞ্চলের স্থাপত্যগুলোও ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট।
সাউথ গোয়ার অন্যতম সেরা বিচ পালোলেম। প্রাকৃতিক ভাবেও, সাজানোর দিক থেকেও। সারি দিয়ে রিসর্ট, বিচের উপরে কাফে, কটেজে থাকার ব্যবস্থা। সমুদ্রস্নান তো করাই যায়, আছে হরেক ওয়াটার স্পোর্টসও, নয়তো কাফেতে বসে গোয়ান ফুড। সদ্য ধরা সামুদ্রিক মাছ, কাঁকড়া, স্কুইড সাজানো রয়েছে। বেছে নিলেই গোয়ান মশলায় রান্না হয়ে চলে আসবে পাতে। সমুদ্র দেখতে দেখতে কিংফিশ রাওয়া ফ্রাই বা ভাত আর ম্যাকারেল কারি খাওয়ার মতো আলস্যযাপন আর কীই বা হতে পারে? রাত নামলে বিচের উপর টেবিল পেতে দেওয়া হয়, জ্বলে ওঠে মোমবাতি। সেই স্বর্গীয় অভিজ্ঞতা বর্ণনা করার ধৃষ্টতা আর নাই বা দেখালাম!
সাউথ গোয়ায় চান্দোর বা বেনোলিমের মতো গ্রামগুলো নিজের রূপেই অপরূপ। ঘন সবুজ প্রকৃতি আর তার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো বাড়ি-রাস্তাঘাট মুগ্ধ করবেই। উপরি পাওনা, কয়েকশো বছরের পুরনো ব্রেগানজ়া হাউস বা ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা গোয়া চিত্রা নৃতাত্ত্বিক মিউজ়িয়ামে ঢুকতে পারার সুযোগ। মেনেজ়েস ব্রেগানজ়া পরিবারের সদস্যেরাই তাঁদের বাড়ির কিছুটা অংশ ঘুরিয়ে দেখান। চোখ ধাঁধিয়ে যায় প্রাসাদোপম বাড়ির ঐশ্বর্যের ভাণ্ডার দেখে। দাম জানা নেই, কিন্তু অ্যান্টিক ভ্যালু নিশ্চিত ভাবেই মারাত্মক।
এই পর্বে গিয়েছিলাম দুধসাগর ফলস। পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা গোয়ার পূর্বাঞ্চল একেবারে অন্য রকম। পায়ে হেঁটে যখন জলপ্রপাতের কাছে পৌঁছলাম, ঘাড় তুলে চোখ ধাঁধিয়ে গেল। কোন উঁচু থেকে দুধসাদা জলধারা নেমে আসছে, ঠাহর করা যায় না। তার ফাঁক দিয়েই চলে গিয়েছে কোঙ্কন রেলের লাইন।
প্রকৃতি আর মানুষ, দুইয়েরই বিস্ময় গোয়া!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy