মহাকুম্ভমেলায় সঙ্গমক্ষেত্রে স্নানে হাজির নাগাসাধু। ছবি: পিটিআই।
প্রয়াগরাজে ১৪৪ বছর পরে বসেছে মহাকুম্ভমেলা। সাধারণ কুম্ভমেলার সঙ্গে এর তফাৎ হল এই মেলা একাধারে পূর্ণকুম্ভমেলা যেটি প্রতি ১২ বছর অন্তর প্রয়াগরাজে হয়। তার উপর এর সঙ্গে জুড়েছে একটি বিশেষ যোগ। সেই যোগই পূ্র্ণকুম্ভমেলাকে ‘মহাকুম্ভ’ বানিয়েছে।
প্রয়াগতীর্থের শহর প্রয়াগরাজ যা আগে পরিচিত ছিল ইলাহাবাদ নামে, সেখানে ১৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে সেই মহাকুম্ভের মেলা। মেলা চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সাধু-সন্ন্যাসীরা তো বটেই, বিদেশ থেকেও বহু মানুষ যাবেন, যাচ্ছেন কুম্ভমেলা দেখতে। যাচ্ছেন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের সাধারণ মানুষও। বাংলা থেকেও ইতিমধ্যেই বহু মানুষ কুম্ভমেলায় গিয়েছেন, অনেকেরই যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে মেলায় গিয়ে যাতে কোনওরকম সমস্যায় না পড়তে হয়, সে জন্য যাওয়ার আগে কয়েকটি বিষয় জেনে নিলে ভাল।
অভিনেতা এবং সমাজমাধ্যম প্রভাবী যবিন শুক্ল গত কয়েক দিন ধরেই কুম্ভমেলা থেকে নিয়মিত ভিডিয়ো পোস্ট করছেন। একই সঙ্গে কোথায় কী সুবিধা, কোথায় গেলে অসুবিধা হতে পারে, তা-ও জানাচ্ছেন তিনি। এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যবিন তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন কুম্ভে আসতে ইচ্ছুক পর্যটকদের।
১। বোঝা কমান: কয়েক দিনের জন্য কোথাও ভ্রমণে এলে লটবহর থাকেই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, মাথাপিছু একাধিক ব্যাগের বোঝাও বইতে হচ্ছে। কুম্ভে গেলে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যে হেতু যানবাহন পাওয়ার সমস্যা থাকবে, তাই নিজে যতটুকু ভার বইতে পারবেন, ততটাই ভারী করুন ব্যাগ।
২। হাঁটতে হবে: যদি ট্রেনে আসেন, তবে অন্তত ৬-৮ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে আসতে হতে পারে। ১০ কিলোমিটার রাস্তাও হাঁটতে হতে পারে। আর সেটা হাঁটতে হবে সঙ্গে থাকা মালপত্র নিয়েই।
৩। যান বন্ধ: কুম্ভমেলা চলাকালীন পুণ্যস্নানের পর্ব থাকে মোট ছ’টি, যাকে বলা হয় শাহী স্নান। তার মধ্যে দু’টি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়ছে। বাকি আছে আরও চারটি। আগামী ২৯ জানুয়ারি মৌনী অমাবস্যার দিন যে শাহী স্নানটি হবে তার দু’দিন আগে এবং পরের দু’দিন অর্থাৎ ২৭ থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রয়াগরাজে যানবাহন চলবে না বলে খবর। একই ভাবে বসন্ত পঞ্চমী অর্থাৎ সরস্বতী পুজোর দিনও যে শাহী স্নান হবে, তার দু’দিন আগে থেকে পরবর্তী দু’দিন ১-৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যানবাহনের সমস্যা থাকবে। কারণ, ওই সময়ে প্রয়াগরাজে ভিড় বেশি থাকবে। তাই নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মাঘী পূর্ণিমা এবং শিবরাত্রির দিনও শাহী স্নান চলবে। তবে সেই সময়ের যান চলাচল নিয়ে এখনও কোনও নির্দেশিকা দেওয়া হয়নি প্রশাসনের তরফে।
৪। স্টেশন বন্ধ: শাহী স্নানের দু’দিন আগে বন্ধ করে দেওয়া হবে প্রয়াগরাজ সঙ্গম স্টেশনও। এটিই কুম্ভমেলায় আসার নিকটতম স্টেশন। তবে প্রয়াগ জংশন এবং ঝূঁসি স্টেশন খোলা থাকবে। সেখান থেকেও যাতায়াত করা যাবে।
৫। অটো, টোটো বা অ্যাপ ক্যাব নেই: যবিন জানাচ্ছেন, মহাকুম্ভ মেলাক্ষেত্র তো বটেই, তার সংলগ্ন এলাকাগুলিতেও অটো, টোটো পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। অ্যাপ মারফত ট্যাক্সি সংরক্ষণেরও সুবিধা নেই।
৬। লকার বা ক্লোকরুম নেই: যদি ভেবে থাকেন, স্টেশনের লকার বা ক্লোকরুম নিয়ে জিনিসপত্র রেখে যাবেন, তবে সেই সুবিধাও মিলবে না বলে জানাচ্ছেন যবিন।
৭। নরম আরামদায়ক জুতো পরুন: যে হেতু হাঁটাহাঁটি করেই এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যেতে হবে, যানবাহন পাওয়ার সম্ভাবনা কম, তাই এমন জুতো পরুন, যা পায়ের পক্ষে আরামদায়ক এবং বেশি হাঁটলেও অসুবিধা না হয়।
৮। আরামদায়ক পোশাকও পরুন: যে হেতু বাইরেই বেশি ক্ষণ থাকতে হবে, হাঁটাহাঁটিও করতে হবে, তাই এমন পোশাক পরুন, যা কোনও অস্বস্তির কারণ না হয়। পোশাক জলেও ভিজে যেতে পারে। তাই হালকা, ঢিলেঢালা এবং সহজে শুকিয়ে যাবে, এমন পোশাক পরুন। তবে ইলাহাবাদে ঠান্ডা রয়েছে। সে কথাও মাথায় রাখবেন।
৯। মোবাইল নেটওয়ার্ক: মোবাইলের নেটওয়ার্ক পেতে সমস্যা হতে পারে। তাই একটি না কাজ করলে অন্য সিম কার্ড যাতে ব্যবহার করা যায়, তার জন্য প্রস্তুতি আগে থেকে নিয়ে রাখতে পারেন। যদি সম্ভব হয়, দু’রকম নেটওয়ার্কের সিম সঙ্গে রাখুন।
১০। হারিয়ে গেলে: মহাকুম্ভের মেলাক্ষেত্র ঘিরে ১০টি ওয়াচ টাওয়ার বা নজরমিনার আছে। হারিয়ে গেলে ওই নজরমিনার থেকে নাম ঘোষণা করানোর ব্যবস্থা আছে। মূল সঙ্গমক্ষেত্রের জন্য যেতে হবে ১ নম্বর মিনারে।
১১। শৌচালয়: শহর জুড়ে ২ লক্ষ শৌচালয় রয়েছে। সঙ্গমক্ষেত্রের যেখানে সংবাদমাধ্যমের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা করা রয়েছে, তার পিছন দিকেই পরিচ্ছন্ন ৫০টি শৌচালয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মহিলাদের শৌচালয়ের রং গোলাপি এবং পুরুষদের শৌচালয়ের রং নীল।
১২। ভিড় : ভিড়ের মুখে পড়লে সমস্যা হতে পারে। সঙ্গী বা সঙ্গীদের থেকে ছাড়াছাড়ি হওয়ার আশঙ্কাও থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে চিনে নেওয়ার ব্যবস্থা আগে থেকে করে রাখতে পারেন। মাথায় একই রঙের টুপি পরুন। অথবা হাতে রাখুন এক রঙের ছোট পতাকা। যাতে ভিড়ের মধ্যেও তা থেকে সঙ্গীকে বা সঙ্গীদের খুঁজে নিতে পারেন।
১৩। পাওয়ার ব্যাঙ্ক: মোবাইলের চার্জ ফুরিয়ে গেলে পথে তা দেওয়ার সুযোগ নেই। তাই সঙ্গে পাওয়ার ব্যাঙ্ক রাখুন।
১৪। জল: সারা দিন বাইরে থাকলে এবং হাঁটলে শরীরের আর্দ্রতা কমে যাওয়ার ভয় থাকেই। বিশেষ করে বয়স্কদের। তাই সব সময় সঙ্গে জলের বোতল রাখুন। মিনারেল ওয়াটার খেতে থাকুন।
১৫। খাবার: মহাকুম্ভক্ষেত্রের চারপাশেই বহু লঙ্গরখানা তৈরি হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন স্বাদের খাবার পাওয়া যায়। বাইরে নানা রকম খাবারের দোকানও আছে। তবে খাবার পছন্দ করুন বুঝেশুনে। শরীর খারাপ হতে পারে, এমন খাবার যেমন ভাজাভুজি বা মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলাই ভাল।
এ ছাড়াও আরও কয়েকটি বিষয় মনে রাখা জরুরি। যেমন—
ক) জরুরি কাগজপত্র সামলে রাখুন। দামি গয়না পরে না যাওয়াই ভাল।
খ) অচেনা লোকজনের উপর চট করে ভরসা করবেন না। যাচাই করে নিন।
গ) 'স্নানের ক্ষেত্র' বলে চিহ্নিত নয়, এমন জায়গায় স্নান করবেন না।
ঘ) রাস্তাঘাটে যার তার কাছ থেকে প্রসাদ খাবেন না।
ঙ) রাস্তার ধারের স্টলের খাবার এড়িয়ে চলাই ভাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy