রণথম্ভোর জাতীয় উদ্যানের রাস্তায় পায়চারি করছেন বাঘমামা। ছবি: সংগৃহীত
বাঘের হুঙ্কারে যতই পিলে চমকে উঠুক না কেন, চোখের সামনে জাতীয় পশু দেখা নিয়ে বাঙালির উৎসাহ-উদ্দীপনার শেষ নেই। চিড়িয়াখানায় খাঁচার মধ্যে বাঘ দেখা আর খোলা জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো বাঘ দেখার অভিজ্ঞতা এক নয়। ভারতে বেশ কিছু জাতীয় উদ্যান, ‘টাইগার রিজার্ভ ফরেস্ট’ রয়েছে, যেখানে ঘুরতে গেলে বাঘ দেখা যায় হামেশাই। তবে বর্ষাকাল অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সব জঙ্গল বন্ধ থাকে। অনেকেই বলেন, এই সময়েই বন্যপ্রাণদের প্রজননের পক্ষে আদর্শ। সে কথা মাথায় রেখেই এই নির্দিষ্ট সময়টুকু জঙ্গলে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। ঠিক পুজোর আগে খুলে দেওয়া হয় সর্বসাধারণের উদ্দেশে। তবে পুজোর সময় বা শীতকালে বাঘ দর্শন করতে চাইলে তার সমস্ত ব্যবস্থা কিন্তু করে রাখতে হবে এখন থেকেই। কিন্তু ভারতের কোন কোন জাতীয় উদ্যানে গেলে বাঘের সঙ্গে সাক্ষাৎ হতে পারে, তা জানেন কি?
১। রণথম্বর জাতীয় উদ্যান, রাজস্থান
শিয়ালদহ, হাওড়া, কলকাতা থেকে জয়পুরগামী ট্রেন রয়েছে। হাতে সময় কম থাকলে বিমানেও পৌঁছে যেতে পারেন জয়পুর। সেখান থেকে অন্য একটি ট্রেনে সওয়াইমাধপুর যেতে হয়। সময় লাগে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার মতো। এখানে ছোট-বড় বিভিন্ন দামের এবং মানের হোটেল রয়েছে। এখান থেকে রণথম্বর জাতীয় উদ্যানের সাফারি শুরু হয়।
রণথম্বর জাতীয় উদ্যানে বন্যপ্রাণী দেখার জন্য সাধারণত দিনে দু’টি সাফারি হয়। একটি ভোরে, অন্যটি বিকেলে। সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় বুঝে সাফারির সময় একটু এ দিক-ও দিক হয়। কম সদস্যের পর্যটকদের জন্য রয়েছে মাথা খোলা জিপসি। এবং তুলনায় বেশি সংখ্যক পর্যটকদের জন্য রয়েছে ক্যান্টার (বাস)। জিপসিতে খরচ সামান্য বেশি। তবে এই ক্যান্টার কিন্তু জঙ্গলের সব জ়োনে প্রবেশ করতে পারে না। তার নির্দিষ্ট রুট আছে। একটা গোটা দিন জুড়ে সাফারি করবেন না কি শুধুমাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য গাড়ি বুক করবেন, খরচ তার উপরেও অনেকটা নির্ভর করে।
এই রণথম্বরে ১০টি জ়োন আছে। বাঘ দেখা যদিও ভাগ্যের ব্যাপার। তবু এখানে এলে বাঘ দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কলকাতা থেকে অনলাইনে সাফারি বুকিং করে রাখা যায়। সময় থাকতে বুকিং না করলে কিন্তু জায়গা পাওয়া মুশকিল। তবে যে জঙ্গলেই ঘুরতে যান না কেন, সঙ্গে পরিচয়পত্র রাখা আবশ্যিক।
২। বান্ধবগড় জাতীয় উদ্যান, মধ্যপ্রদেশ
হাওড়া থেকে ট্রেনে সাতনা হয়ে গাড়িতে করে প্রথমে খাজুরাহো পৌঁছতে হবে। সেখান থেকে যেতে হবে বান্ধবগড়। অবশ্য অনেকেই উমারিয়া স্টেশনে নামেন। কারণ বান্ধবগড় জঙ্গলের সবচেয়ে কাছে এই রেলস্টেশন। চাইলে আকাশপথেও খাজুরাহো পৌঁছনো যায়। এখানে থাকার অজস্র হোটেল আছে। তবে পিক সিজ়নে আগে থেকে বুকিং না করলে কোথাও জায়গা পাওয়া যাবে না।
বান্ধবগড়ের জঙ্গলকে ভাল ভাবে উপভোগ করতে হলে দু’টি রাত থাকতেই হবে। সাতপুরা পাহাড়ের কোলে অবস্থিত বান্ধবগড় ন্যাশনাল পার্ক। এখানে বাঘের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বনাঞ্চলের ১১৩১ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে ৬৯৪ বর্গ কিলোমিটার কোর এলাকা এবং ৪৩৭ বর্গ কিলোমিটার বাফার জ়োন হিসাবে চিহ্নিত। এখানেও বিভিন্ন পয়েন্ট আছে, যেখান থেকে বাঘ দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। দিনে দু’টি সাফারি হয়। একটি ভোরে এবং একটি বিকেলে। বর্ষাকালটুকু বাদ দিলে প্রায় সারা বছরই বান্ধবগড়ে বাঘের সন্ধানে যান পর্যটকেরা।
মধ্যপ্রদেশের সরকারি ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে সাফারি এবং হোটেল দুটোই বুক করা যায়। তাই মাস দুয়েক আগে থেকে সব কিছু ঠিক করে রাখাই ভাল।
৩। জিম করবেট ন্যাশনাল পার্ক, উত্তরাখণ্ড
হাওড়া থেকে দিল্লি হয়ে গাড়িতে পৌঁছতে হবে রামনগর। জিম করবেট জাতীয় উদ্যানের সবচেয়ে কাছের স্টেশন হল এই রামনগর। চাইলে আকাশপথে দেহরাদূন হয়ে পৌঁছনো যায় রামনগরে। এই জাতীয় উদ্যানের কাছাকাছি হোটেলে থাকা বেশ ব্যয়বহুল। তাই চাইলে রামনগরেও থাকতে পারেন। তবে সব ক্ষেত্রেই আগে থেকে বুকিং করে রাখা ভাল।
জিম করবেট জাতীয় উদ্যানে ঢোকার ৫টি আলাদা প্রবেশ পথ রয়েছে। যে কোনও একটি দিয়ে ঢোকার অনুমতি মিলবে এক বারই। এখানেও দিনে দু’টি সাফারি করানো হয়। একটি ভোরে এবং একটি বিকেলে। যদি হাতির পিঠে চেপে ঘুরতে চান, সে ব্যবস্থাও রয়েছে। খরচ নির্ভর করে কত ক্ষণের জন্য জঙ্গল ঘুরবেন তার উপর। বৃষ্টির সময় এই জাতীয় উদ্যানও বন্ধ থাকে। বছরের অন্যান্য সময়গুলিতে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি। তাই আগে থেকে সাফারি এবং হোটেল বুক করে রাখা ভাল।
৪। কানহা জাতীয় উদ্যান, মধ্যপ্রদেশ
মধ্যপ্রদেশের সবচেয়ে বড় অভয়ারণ্য হল কানহা জাতীয় উদ্যান। বান্ধবগড়ের মতো কানহাতেও পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে। কারণ এখানে বাঘের সংখ্যা অন্যান্য উদ্যানের চেয়ে বেশি। কানহার দু’টি মূল প্রবেশদ্বার হল খাটিয়া ও মুক্তি। খাটিয়ার নিকটতম রেলস্টেশন জব্বলপুর। হাওড়া থেকে ট্রেনে প্রথমে জব্বলপুর পৌঁছাতে হবে। সেখান থেকে বাস পাওয়া যায়। কানহা পৌঁছতে সময় লাগবে পাঁচ ঘণ্টা।
কানহার চারটি কোর জ়োন হল কিসলি, কানহা, মুক্কি ও শেরহি। স্থানীয়েরা বলেন, এর মধ্যে কিসলি ও মুক্তি জোনে বাঘ দেখতে পওয়ার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি। তাই এই দুটি জ়োনের কাছাকাছি থাকার ব্যবস্থা করতে পারলে সুবিধা হবে। তবে মনে রাখবেন, বুধবার বিকেলের সাফারি বন্ধ থাকে। জিপের পাশাপাশি গভীর জঙ্গলে আছে রোমাঞ্চকর হাতি সাফারির ব্যবস্থাও।
৫। পেঞ্চ জাতীয় উদ্যান, মহারাষ্ট্র
মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের মাঝামাঝি জায়গায় পেঞ্চ। ছিন্দওয়াড়া ও সিওনি জেলার কেন্দ্রে এই জাতীয় উদ্যানের অবস্থান। হাওড়া থেকে ট্রেনে পৌঁছতে হবে নাগপুর। চাইলে আকাশপথেও নাগপুর পৌঁছনো যায়। সেখান থেকে জাতীয় উদ্যানের দূরত্ব ১৩০ কিলোমিটার। গাড়িতে যেতে সময় লাগবে ঘণ্টা দুয়েক।
এই পেঞ্চ জাতীয় উদ্যানের মূল আকর্ষণ হল নাইট সাফারি। অর্থাৎ সূর্যাস্তের পর রাতের অন্ধকারে বন্যপ্রাণ দেখার সুযোগ রয়েছে এখানে। সাধারণত দিনে দু’টি সাফারি করানো হয়। তবে বিকেল ৫.৩০টা থেকে রাত ৮.৩০টা পর্যন্ত যে সাফারিটি হয় তার জন্য বন দফতর থেকে আলাদা করে অনুমতি নিতে হয়। তবে সবই সময়সাপেক্ষ। অন্তত পক্ষে মাস দুয়েক আগে বুকিং করে রাখতে পারলে ভাল।
পেঞ্চের জঙ্গলে একাধিক রিসর্ট রয়েছে। জঙ্গলের ভিতরে থাকার খরচ বেশি, তাই চাইলে আশপাশেও থাকা যায়। বিভিন্ন দামের এবং মানের অজস্র হোটেল রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy