ডুয়ার্সের এক অল্পচেনা ঠিকানা বুড়িখোলা। ছবি: সংগৃহীত।
এ পথে খেলে বেড়ায় ময়ূরের দল। গান গায় পাখিরা। হাতছানি দেয় পাহাড়, তিরতির করে বয়ে চলে নদী। ডুয়ার্সের গহীনে বয়ে চলেছে বুড়ি নদী, সেখানেই রয়েছে বুড়িখোলা নামের এই জায়গাটি।
বর্ষায় বুড়িখোলা ঘন সবুজ। তবে বর্ষার শেষে গেলে প্রবেশ করা যায় ঘন জঙ্গলে। বুড়িখোলার সৌন্দর্য অবশ্য শুরু হয়ে যায় মালবাজার পার করে গরুবাথানের দিকে খানিক এগোলেই। মসৃণ পিচের রাস্তার দু’পাশে সবুজের আহ্বান। ডামডিম-গরুবাথানের রাস্তা ধরে এগোলেই হাতছানি দেয় পাহাড়। তবে গন্তব্যে পৌঁছতে গেলে বেঁকে যেতে হবে গরুবাথান ঢোকার আগেই ডান হাতে।
এ পথে মসৃণ পিচের প্রলেপ নেই। এবড়ো-খেবড়ো রাস্তার দু’পাশে জঙ্গলের শোভা। এ পথে অনবরত শোনা যায় ময়ূরের ডাক। ৪-৫ কিলোমিটার ঘন জঙ্গলের পথ পেরিয়ে পৌঁছনো যায় বুড়িখোলায়।
সে পথে আপন মনে বয়ে গিয়েছে বুড়ি নদী। স্থানীয় ভাষায় নদীকে বলা হয় 'খোলা'। তা থেকেই নাম বুড়িখোলা। এর জলেই গলা ভেজায় বন্যপ্রাণ। নদী পার হলেই এসে পড়ে ছোট্ট জনপদ, বুড়িখোলা গ্রাম।
জঙ্গল পথের সৌন্দর্যে যদি মোহিত হয়ে গিয়ে থাকেন, তা হলে এই গ্রাম সেই সৌন্দর্যকেও টেক্কা দিতে পারে। বড় বড় মাঠ, গাছপালা, তারই মাধ্য শান্ত জনপদ। বিশাল মাঠের সামনে টিনের চালার স্কুলবাড়ি। সেই সব দেখতে দেখতেই পৌঁছে যেতে পারেন এখানকার একমাত্র হোম স্টে-তে। বুড়িখোলায় থাকতে গেলে ভরসা সেটাই।
হোম স্টে-র খোলা প্রান্তরের শেষে শুরু হয়েছে ঢেউ খেলানো পাহাড়। নীচ দিয়ে বয়ে গিয়েছে স্বচ্ছতোয়া বুড়ি নদী। চারপাশ ঘন সবুজ।
এখানে দু’দণ্ড বসলে অবসাদ সারানোর জন্য ওষুধ লাগবে না। মনোরম হাওয়ায় চুপচাপ বসে শুনতে পারেন জলস্রোতের শব্দ, খসে পড়া পাতার শব্দ। নৈঃশব্দ যে এমন বাঙ্ময়, তা বোধ হয় এমন জায়গায় না গেলে উপলব্ধি করা যায় না।
কপাল ভাল থাকলে বয়ে যাওয়া নদীতেই দেখতে পাবেন হাতির পাল। সপরিবার জল খেতে আসে তারা। নদীর ওপারে রয়েছে শাকামের জঙ্গল। যেখানে প্রায় সব সময়েই হাতিদের আনাগোনা থাকে। বর্ষাকালে এখানে এলে ডুয়ার্সের শ্যামলিমা উপভোগ করলেও, জঙ্গল সাফারি করতে পারবেন না। কারণ, এই সময় জঙ্গল পর্যটকদের জন্য বন্ধ থাকে। তবে ১৫ সেপ্টম্বরের পর থেকে জঙ্গল খুলে যায়। তার পরে এলে শাকামের জঙ্গলও গাড়ি নিয়ে ঘোরা যাবে।
কোথায় ঘুরবেন
হাতে দু’টি দিন সময় থাকলে বুড়িখোলার গ্রাম্য সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। আবার লাভা বা কালিম্পঙের কোনও গ্রামে যাওয়ার পথে বুড়িখোলায় এক রাত, দু’দিন কাটিয়েও যেতে পারেন। বর্ষা ছাড়া এলে এখান থেকে শাকামের জঙ্গল, চাপড়ামারি, জলদাপাড়া-সহ যে কোনও জঙ্গলই ঘুরতে পারবেন। আর জঙ্গলে না যেতে চাইলে পাপড়ক্ষেতি, মইরুনগাঁও, লাভা বেড়িয়ে আসতে পারেন।
কী ভাবে যাবেন?
শিয়ালদহ থেকে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস যায় মাল জংশন। মাল জংশন স্টেশনে নেমে মালবাজার থেকে গাড়ি ভাড়া করে যেতে হবে বুড়িখোলা। শেয়ার গাড়িতে ডামডিম পৌঁছে সেখান থেকেও গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন। দু’ভাবে বুড়িখোলা যাওয়া যায়। একটা পথ মালবাজার, ডামডিম হয়ে। অন্য রাস্তাটি গিয়েছে শুনগাছি চা-বাগানের মধ্যে দিয়ে। মালবাজার-ডামডিম হয়ে গিয়ে যাওয়ার সময় গেলে শুনগাছি চা-বাগানের রাস্তা দিয়ে ফিরতে পারেন। দু’টি পথই সে ক্ষেত্রে উপভোগ করা যাবে।
কোথায় থাকবেন?
বুড়িখোলায় একটি মাত্র হোম স্টে রয়েছে। এখানে থাকতে গেলে আগেই কথা বলে আসা ভাল। চারটি ঘর রয়েছে এখানে। ডামডিম হয়ে জঙ্গলপথে নিজেরা গাড়ি নিয়ে আসতে গেলে হোম স্টের লোককে সঙ্গে রাখা ভাল। জঙ্গলপথের সঙ্গে তাঁদের পরিচিতি বেশি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy