পুজোর আগে ঘুরে আসতে পারেন বৃষ্টিস্নাত ৩ জায়গা থেকে। ছবি: সংগৃহীত।
সেপ্টেম্বর এসে যাওয়া মানেই পুজোর দিন গোনা শুরু। অপেক্ষা, কখন আকাশে উঁকি দেবে তুলোটে পেঁজা মেঘ। বর্ষা বিদায়ের এই পর্বে ঘুরে নিতে পারেন দেশের তিন রাজ্যের এমন তিন জায়গায়, যেখানে প্রকৃতি এই সময়ে থাকে সজল, সবুজ। পাহাড়, ঝর্না, ইতিহাস-ভূগোলের আহ্বানে ছুটে যেতে পারেন মহারাষ্ট্রের মালসেজ ঘাট, অন্ধপ্রদেশের অনন্তগিরি এবং ওড়িশার ডুডুমা জলপ্রপাতের অপূর্ব রূপসৌন্দর্য উপভোগে।
মালসেজ ঘাট
ভরা বর্ষায় নতুন বর্ণে সেজে ওঠে পশ্চিমঘাট পর্বতমালা। সেই ছোঁয়া রয়ে যায় বর্ষার বিদায়বেলাতেও। পাহাড়, জঙ্গল ও ঘন সবুজের আলিঙ্গনে মহারাষ্ট্রের থানে জেলার শৈলশহর মালসেজ ঘাট হয়ে ওঠে যেন রূপকথার রাজ্য। মেঘ-কুয়াশার লুকোচুরি, চ্যাপ্টা সবুজ পাহাড়ের সৌন্দর্য, ঝিরঝিরে বারিধারা, জলপ্রপাতের শব্দ শুনতে গেলে আর দেরি না করে ঝোলা কাঁধে বেরিয়ে পড়তে পারেন। পুণে থেকে জুন্নার হয়ে মালসেজ ঘাটের দূরত্ব ১২৫ কিলোমিটার। এখান থেকেই ঘুরে নিতে পারেন ‘নানেঘাট রিভার্স ওয়াটারফলস’। মালসেজ ঘাট থেকে মোটামুটি দেড় ঘণ্টা দূরত্বে এই জলপ্রপাত দেখতে যাওয়ার পথেও বার বার থমকাতে হবে, প্রকৃতির অপূর্ব রূপ দর্শনের জন্য। এই জলপ্রপাতের নামের সঙ্গে জুড়ে এর বৈশিষ্ট্য। সবুজ পাহাড়ের মাথা থেকে অঝোর ধারায় ঝরে পড়ছে জলপ্রপাত। তবে সেই জল নীচে নয়, উঠে যাচ্ছে উপরে। আসলে প্রবল হাওয়ার দাপটে জলপ্রপাতের জলরাশি খাত থেকে উঠে আসে উপরে। বেশি ক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে গেলে, জলের ঝাপটায় অবধারিত ভাবেই ভিজতে হবে। এখান থেকেই ঘুরে নিতে পারেন জীবধন ও শিবনেরি দুর্গ। জীবধন যেতে গেলে পাহাড়ি পথে বেশ কিছুটা হাঁটতে হয়। জুন্নারের শিবনেরি দুর্গে অবশ্য এমনি যাওয়া যায়। এই দুর্গই মরাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা শিবাজির জন্মস্থান। বেশ কিছু সিঁড়ি ভেঙে একের পর এক ফটক পেরিয়ে ঘুরে নেওয়া যায় বিশাল দুর্গের আনাচকানাচ। এখানেই রয়েছে শিবাজির স্মৃতিসৌধ। দুর্গের শেষ অংশটি খাদের ধারে। শোনা যায়, এখান থেকে ঠেলে ফেলে দিয়ে মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্তদের সাজা দেওয়া হত। এখান থেকেই ঘুরে নেওয়া যায় লেনাদ্রি। জুন্নার থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে লেনাদ্রিতে রয়েছে বৌদ্ধদের গুহা। সার দিয়ে রয়েছে একাধিক গুহা, তার মধ্যে মাত্র কয়েকটিতে এখন প্রবেশ করা যায়।
কী ভাবে যাবেন
হাওড়া বা শিয়ালদা থেকে ট্রেনে গেলে নামতে হবে কল্যাণ স্টেশনে। সেখান থেকে মালসেজ ঘাট ৮৭ কিলোমিটার। কাছের বিমানবন্দর রয়েছে পুণেতে। সেখান থেকে মালসেজ ঘাট ১২২ কিলোমিটার।
থাকার জায়গা
মহারাষ্ট্র পর্যটন দফতরের এমটিডিসি মালসেজ ঘাট রয়েছে থাকার জন্য। এ ছাড়া, বেশ কিছু হোটেলও পেয়ে যাবেন।
অন্ধপ্রদেশের অনন্তগিরি
পূর্বঘাট পর্বতমালাও বৃষ্টির জল পেয়ে হয়ে ওঠে অপূর্ব সুন্দর। ঢেউখেলানো পাহাড়ের রূপ তখন দেখার মতো। অন্ধপ্রদেশেই বিশাখাপত্তনম ও আরাকুভ্যালির মধ্যে রয়েছে শৈল শহর অনন্তগিরি। কেউ কেউ একে আরাকুভ্যালির অংশই বলেন। যদি বিশাখাপত্তনম থেকে ট্রেনে আসেন তবে ছোট-বড় অসংখ্য সুড়ঙ্গপথ পেরিয়ে ট্রেন ঢুকবে বোরা গুহালু স্টেশনে। এই রেলপথের বাড়তি আকর্ষণ অবশ্য ভিস্তাডোম কোচ। কাচ দিয়ে ঢাকা এই বিশেষ কোচে বসে উপভোগ করতে পারবেন পাহাড়ি সৌন্দর্য। বোরা গুহালু স্টেশন থেকে খানিক দূরেই রয়েছে চুনাপাথরের গুহা, যা বোরা গুহা নামেই পরিচিত। ভূগোল বইতে পড়া স্ট্যালাগটাইট ও স্ট্যালাগমাইট এখানকার অন্যতম আকর্ষণ। চুনাপাথরের সঙ্গে জলের বিক্রিয়ায় তৈরি হয়েছে নানা রকম পাথুরে রূপ। অনন্তগিরির একটি আকর্ষণ যদি বোরা গুহা হয়, তা হলে বর্ষার বিদায়বেলায় এখানে আসার অন্য আকর্ষণ হবে কাতিকি বা কাতিকা জলপ্রপাত ও টাটিগুড়া জলপ্রপাত।
কাতিকার যৌবনমত্ত রূপ চাক্ষুষের আদর্শ সময় বর্ষা বা বর্ষার শেষবেলা। বৃষ্টিতে ঝর্নার জলের পরিমাণ বেড়ে যায়। উঁচু পাহাড় থেকে তার সশব্দ পতন তখন দেখার মতো। জঙ্গলঘেরা পাহাড়ের উপর থেকে নিজস্ব ছন্দে নেমে আসে কাতিকা। ঘুরে নেওয়া যায় আরও একট জলপ্রপাত। তার নাম টাটিগুড়া। স্থানীয়রা একে অনন্তগিরি জলপ্রপাতও বলেন। পাহাড় থেকে ধাপে ধাপে নেমে আসা টাটিগুড়ার সৌন্দর্যও নিমেষে সমস্ত ক্লান্তি মুছে দিতে পারে।
কী ভাবে আসবেন?
হাওড়া থেকে ট্রেনে বিশাখাপত্তনম পৌঁছে সেখান থেকে আবার অন্য ট্রেনে বোরা গুহা পৌঁছনো যায়। চাইলে সড়কপথেও অনন্তগিরি পৌঁছতে পারেন। বিশাখাপত্তনমে বিমানবন্দরও রয়েছে।
কোথায় থাকবেন?
অন্ধপ্রদেশের পর্যটন দপ্তরের থাকার জায়গা রয়েছে, অনন্তগিরি, হরিতা রিসোর্ট। বেসরকারি হোটেলও আছে।
ডুডুমার ডাক
‘একটি অনুচ্চ পাহাড়ের উপর থেকে বিপুল জলরাশি একটি গভীর খাদের ভিতর পড়ছে। গভীর খাদের ভিতর থেকেই তার শব্দ উত্থিত হচ্ছে বলে সেই শব্দ যেমন গম্ভীর, তেমনই তীব্র।’ কিশলয় বইতে আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ডুডুমা জলপ্রপাতের গর্জনের বর্ণনা এ ভাবেই দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, সেই প্রচণ্ড গর্জনে নিজের কথা নিজেই শোনা যায় না। ওড়িশার কোরাপুট জেলায় সেই ডুডুমার বর্ষার রূপ চাক্ষুষ করতে চাইলে বরং এই বেলা বেরিয়ে পড়ুতে পারেন।
১৭৫ মিটার উচ্চতা থেকে বিপুল গর্জনে পাহাড় থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ছে মাচকুন্দ নদী। তবে ‘ডুডুমার ডাক’ গল্পে যে বর্ণনা আছে, ঠিক ততটা জল বা গর্জন এখন আর পাওয়া যায় না। জলপ্রপাত দর্শনে রয়েছে ভিউ পয়েন্ট। তবে সেখান থেকে ডুডুমার সম্পূর্ণ রূপ উপভোগ করাটা একটু কষ্টের। কারণ, সেখান থেকে জলধারা বেশ দূরে। ডুডুমার অসাধারণ রূপ কাছ থেকে দর্শন করতে গেলে জঙ্গলের পথে ঝুঁকি নিয়ে অনেকগুলি সিঁড়ি পার হতে হবে। বর্ষায় যা বেশি ঝুঁকির। সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলে ডুডুমার তলদেশে পৌঁছনো যায়। যাওয়া যায় খানিকটা কাছাকাছি।
ডুডুমা ছাড়াও এখানে ঘুরে নিতে পারেন কোলাব বাঁধ। ঢেউখেলানো পাহাড় ঘিরে জলাধারের রূপ বর্ণনাতীত। এ ছাড়াও ঘুরে নিতে পারেন মুচকুন্দ নদীর বাঁধ। বর্ষায় কোরাপুটের সৌন্দর্য হার মানাতে পারে নামীদামি পর্যটনকেন্দ্রকেও। ঘন সবুজ পাহাড়ের বুকে রাঙামাটির পথ, গাছপালা, প্রকৃতি সব মিলিয়ে যেন এই জেলার আনাচকানাচ তুলি দিয়ে আঁকা কোনও ছবি।
কী ভাবে যাবেন?
হাওড়া থেকে ট্রেন ধরে কোরাপুট। সেখান থেকে গাড়ি করে ঘুরে নিতে পারেন ডুডুমা-সহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান।
কোথায় থাকবেন?
কোরাপুট শহরে একাধিক বিভিন্ন মানের ও দামের হোটেল আছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy