মেরুজ্যোতির ব্যাপারে প্রথম জেনেছিলাম ছোটবেলায় বাবার কাছ থেকে। পরে ভূগোল বইয়েও পড়েছি। তখন থেকেই অরোরা দেখার ইচ্ছে ছিল। গত বছরের শুরুর দিকে সেই ইচ্ছেটা পূরণ হল। অফিসের কাজে ওটাওয়া যেতে হয়েছিল জানুয়ারিতেই। ওখানে দু’সপ্তাহের মতন ছিলাম। কানাডাতে জানুয়ারিতে খুব শীত পড়ে। এ সময়টায় বরফে ঢাকা থাকে কানাডার রাজধানী ওটাওয়া। কিন্তু শীতেই তো দেখা যায় প্রকৃতির এক অনন্য সৃষ্টি— মেরুজ্যোতি— ইংরেজিতে যাকে বলে অরোরা! উত্তর মেরুর কাছাকাছি জায়গায় দেখা যায় অরোরা বোরিয়ালিস বা নর্দার্ন লাইটস। দক্ষিণ মেরুতে দেখা যায় অরোরা অস্ট্রেলিস বা সাদার্ন লাইটস। তাই ভাবলাম, শীতে যখন কানাডাতে এসেছি, তখন অরোরা ‘বোরিয়ালিস’টা দেখেই যাব। তবে অরোরা দেখতে হলে আমাকে যেতে হবে আরও উত্তরে। অরোরাল জোন সাধারণত পৃথিবীর চৌম্বকীয় মেরুর অক্ষ দ্বারা সংজ্ঞায়িত চৌম্বক মেরু থেকে ১০ ডিগ্রি থেকে ২০ ডিগ্রি হয়। ম্যাপ দেখে বুঝলাম, আমাকে আরও ৩ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি উত্তর-পশ্চিমে যাত্রা করতে হবে। শহরটার নাম ইয়েলোনাইফ। ছোট এই শহরটাই উত্তর-পশ্চিম ভূখণ্ডের রাজধানী। জায়গাটা আর্কটিক বেল্টের ২৫০ মাইল দক্ষিণে। ইয়েলোনাইফ ছাড়াও ইন্টারনেটে আর একটা জায়গার নাম পেয়েছিলাম, কানাডার ইউকন প্রদেশের হোয়াইটহর্স। এই জায়গাটাও খুব সুন্দর। তবে ইয়েলোনাইফ হোয়াইটহর্স থেকেও আরও উত্তরে হওয়ায় ইয়েলোনাইফকেই আমি বেছে নিলাম।
ইয়েলোনাইফ কানাডার উত্তর-পূর্ব ভূখণ্ড তথা প্রদেশের সবচেয়ে বড় শহর হওয়ায় খনিশিল্প, পরিবহণ, যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পর্যটন, বাণিজ্য এবং প্রাদেশিক সরকারের সব রকম কার্যকলাপেরই প্রাণকেন্দ্র। ঐতিহাসিক ভাবে এখানকার অর্থনৈতিক বাড়বৃদ্ধি স্বর্ণখনি থেকে এসেছে। কিন্তু পতনশীল স্বর্ণের দাম ও মজুরি-খরচ বৃদ্ধির জন্য ২০০৪-এ স্বর্ণখনিটি বন্ধ হয়ে যায়।
ইয়েলোনাইফ গ্রেট স্লেভ লেকের উত্তর তীরে অবস্থিত। জায়গাটি যদিও ভৌগোলিক ভাবে বিচ্ছিন্ন, তবুও ইয়েলোনাইফ কানাডার বড় বড় শহরগুলোর সঙ্গে বায়ুপথে সংযুক্ত। ২০১২-র নভেম্বর ‘ডে চো’ ব্রিজ হওয়ার পর অবশ্য ইয়েলোনাইফ সড়কপথেও কানাডার অন্যান্য অংশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
ওয়েস্ট জেট এয়ারলাইনসের উড়ান ধরে প্রায় দশ ঘণ্টার যাত্রায় ওটাওয়া থেকে ইয়েলোনাইফ পৌঁছলাম যখন, সন্ধ্যা তখন নেমে এসেছে। মজার ব্যাপার, ইয়েলোনাইফ উত্তর মেরুর খুব কাছে হওয়ার দরুন জানুয়ারি মাসে সূর্যোদয় হয় সকাল ১০টায় আর সূর্যাস্ত হয় দুপুর সাড়ে ৩ টেয়। সুতরাং দিনের দৈর্ঘ্য শুধু মাত্র সাড়ে ৫ ঘণ্টার মতন। কিন্তু গরম কালে (জুন-জুলাইতে) আবার সূর্যোদয় হয় ভোর পৌনে ৪ টে থেকে ৪ টের মধ্যে, আর সূর্যাস্ত হয় রাত প্রায় সাড়ে ১১ টায়। সুতরাং তখন দিনের দৈর্ঘ্য থাকে প্রায় ২০ ঘণ্টা। তাই ইয়েলোনাইফকে ‘ল্যান্ড অব মিডনাইট সান’ বা ‘মধ্যরাত্রিকালীন সূর্যের দেশ’ও বলা হয়। ইয়েলোনাইফের এয়ারপোর্টটিও অত্যন্ত ছোট, কিন্তু সাজানো-গোছানো, সুন্দরই মনে হল। বিমান থেকে নামতেই প্রচণ্ড ঠান্ডা অনুভব করলাম। নাকে ঠান্ডা হাওয়া ঢুকে পড়ায় এক অদ্ভুত রকম অস্বস্তি হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, বরফের কুচি যেন ঢুকে যাচ্ছে নাকের ভেতর। ঠান্ডার চোটে চোখ থেকে জল বেরিয়ে আসছিল। আবার সেই জল চোখের নীচেই জমে যাচ্ছিল বরফ হয়ে। আর তাতে চোখের পাতা পড়ে আটকে যাচ্ছিল! রীতিমতো চোখের পেশির ব্যায়াম করতে হচ্ছে। ইয়েলোনাইফ দারুণ ঠান্ডা জায়গা। জানুয়ারিতে তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ৩০ ডিগ্রিরও নীচে। যদিও রাতে সেটা আরও অনেক নীচে চলে যায়। অথচ অরোরা দেখতে এই রাতেই বেরোতে হবে আমাকে।
পোলার বেয়ারের একটা সুন্দর মূর্তি আমাকে স্বাগত জানাল ইয়েলোনাইফ এয়ারপোর্টে। এয়ারপোর্টে ইংরেজি ও ফরাসি ছাড়াও কানাডার এই অঞ্চলের অধিবাসীদের নিজস্ব ভাষায় লেখা সাইনবোর্ডও চোখে পড়ল। হোটেল বুক করাই ছিল। এয়ারপোর্টের বাইরে হোটেলের শাটল সার্ভিসের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম নির্দিষ্ট জায়গায়। দেখলাম, কিছু জাপানি পর্যটকও এসেছেন। তাঁরাও হোটেলের গাড়ির জন্যই অপেক্ষা করছেন। ইয়েলোনাইফে ‘ক্যাপিটাল স্যুটস’, ‘সুপার এইট’, ‘ইয়েলোনাইফ ইন’ ইত্যাদি হোটেল আছে। আমি ‘এক্সপ্লোরার ইন’ হোটেলে ছিলাম। হোটেলটি ভাল, সঙ্গে একটি রেস্তোরাঁও আছে। যে তিন দিন ইয়েলোনাইফে ছিলাম, ওই রেস্তোরাঁতেই লাঞ্চ এবং ডিনার সেরেছি। ইয়েলোনাইফে মেরু অঞ্চলের অনেক রকমের মাছ পাওয়া যায়। আর পাওয়া যায় রেইনডিয়ার, মুস্ক অক্স, মুজ ইত্যাদির মাংস। রেইনডিয়ার আর মুস্ক অক্স-এর (ছাগলজাতীয় এক ধরনের প্রাণী) মাংস চেখে দেখেছিলাম, ভাল লেগেছিল।
হোটেলে ঢুকেই কার্লোসের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। কার্লোস হচ্ছেন এখানকার ট্যুর অপারেটর গাইড। ওঁর সঙ্গে আগেই কথা হয়েছিল ফোনে— ইন্টারনেটে পেয়েছিলাম ওঁর নম্বর। ঠিক হল, সেই রাতেই বেরিয়ে পড়ব বরফ-জমা লেকের ধারে কোনও ভিউ পয়েন্টে। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, “অরোরা দেখার সম্ভাবনা কতটা?” উত্তরে উনি বললেন, “অরোরা ঠিক নারীর মতোই, একেবারে অননুমেয়!” যাই হোক, ঠিক হল রাত দশটার সময় কার্লোস হোটেলে এসে আমাকে নিয়ে যাবেন আর উনি সঙ্গে নিয়ে আসবেন শীতের রাতে পরার জন্য উপযুক্ত পোশাক। যে পোশাক আমি নিয়ে গিয়েছিলাম, তা পরে ওখানে রাতে বাইরে থাকা যাবে না, কারণ তাতে ঠান্ডা মানাবে না আর তুষারক্ষত হওয়ার সম্ভাবনাও থাকবে। তাই ওঁর কাছ থেকেই শীতের পোশাক তিন রাতের জন্য ভাড়া করেছিলাম।
কার্লোসের দেওয়া পোশাক পরা তো একটা কাজই বটে! প্রায় ২০ মিনিট লাগল সব কিছু ঠিকঠাক ভাবে পরতে। যাই হোক, তার পর একটা গাড়ি করে ক’জন জাপানি পর্যটক আর এক ফরাসি ভদ্রমহিলার সঙ্গে আমি ভিউ পয়েন্টের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলাম।
ভিউ পয়েন্টটা একটু নিরালা-নির্জন জায়গায়। শহরের আলো যাতে না পৌঁছয়, তাই এই লোকেশন নির্বাচন করা হয়েছে। এখানে একটা ছোট কুঁড়েঘর আছে। তার ভেতরেই গাইড আমাদের জন্য চায়ের গরম জল বসিয়ে দিলেন। রাতের আকাশ এখানে খুব পরিষ্কার। শহরের আলো-দূষণ না থাকলে রাতের আকাশে যে কত তারা দেখা যায়, সেটা উপলব্ধি করলাম। অরোরা-র দৃশ্য দেখতে পাওয়ার সময় হতে নাকি আরও একটু দেরি আছে! সাধারণত রাত ১২টা থেকে রাত ২টো হচ্ছে সবচেয়ে ভাল সময়। আমরা এখানে রাত দু’টো অবধি থাকব। বাইরে ঠান্ডার মধ্যে আকাশের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছি অরোরা দেখব বলে। মাঝে মাঝে উল্কা পড়ছে একটা-দু’টো। একটু পায়চারিও করে নিচ্ছি। চোখের জল সেই চোখের নীচে বরফ হয়ে যাচ্ছে। যখন খুব ঠান্ডা লাগছে, কুঁড়েঘরটার ভিতরে ঢুকে একটু আগুন পোহাচ্ছি। এই ভাবেই অনেকক্ষণ কেটে গেল, অথচ অরোরা-র কোনও দেখা নেই! জাপানি পর্যটকরা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত আছেন দেখলাম। নিজেদের মধ্যে অনেক কথা বলে যাচ্ছেন আর ছবি তুলছেন একে অপরের। ফরাসি ভদ্রমহিলা একা দাঁড়িয়ে থাকায় তাঁর সঙ্গে গিয়ে কথা বললাম, “অরোরা দেখার সুযোগ কি আজ মিলবে?” উত্তরে তিনি বললেন, “এই যে এত সুন্দর পরিষ্কার আকাশ, এটা কি কিছু নয়? আমি তো অরোরা না দেখলেও আফসোস করব না! এত সুন্দর আকাশ এই পরিবেশে আজ যে দেখলাম, এত নিস্তব্ধতা, এই যে উল্কা পড়ছে দেখলাম— এটাই তো অনেক বড় প্রাপ্তি!” মনে হল, কথাটা তিনি খুব একটা ভুল বলেননি। এ রকম পরিষ্কার রাতের আকাশ খুব কম জায়গাতেই দেখেছি। সত্যি, তারাগুলো দেখতে কী ভালই যে লাগছিল! আস্তে আস্তে কখন যেন জাপানি পর্যটকদের কারও কারও সঙ্গে বন্ধুত্বও হয়ে গেল! প্রথম রাতে অরোরা-র ক্ষীণ একটু আলো দেখা দিলেও তার তেমন কোনও বিশেষ ঝলকানি দেখলাম না। আমাকে কিছুটা মন খারাপ করেই রাত ২টোয় ফিরতে হল হোটেলে।
সোলার ফ্লেয়ার তথা সৌর বিস্তারণের সময় সূর্য থেকে নির্গত অভিযুক্ত কণা (চার্জড পার্টিকল) পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সংস্পর্শে এলে ‘অরোরা’ সৃষ্টি হয়। এমন কিছু ওয়েবসাইট আছে যারা অরোরা-দর্শনের সম্ভাব্য সময় সম্পর্কে আগাম জানিয়ে দেয়। তবু সব কিছু সত্ত্বেও মনে রাখতে হবে, অরোরা একান্তই অননুমেয় এবং তাকে দেখা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার! আমাদের ট্যুর গাইডের কাছেই জেনেছিলাম, এক বার জাপানি ফটোগ্রাফারের একটা দলকে পরপর ১৪ রাত জেগে থেকেও অরোরা না দেখেই জাপানে ফিরে যেতে হয়েছিল! তাই প্রার্থনা করতে থাকলাম পরের দু’রাতের জন্য।
সব স্প্রুস গাছও এখন বরফাবৃত।
পরের দিন একটু দেরি করেই ঘুম থেকে উঠেছিলাম। জানালার পর্দা সরিয়ে এক অপরূপ সৌন্দর্যে মন ভরে গেল। শুধু সাদা বরফ আর বরফ— যত দূর চোখ যায়, কেবলই বরফ! ‘স্প্রুস’ নামে এক ধরনের দেবদারু গাছ ছাড়া আর কোনও রকম গাছই চোখে পড়ল না। সেই সব স্প্রুস গাছও এখন বরফাবৃত। দূরে একটা বাড়ি যা দেখা যাচ্ছিল, সেটাও যেন বরফে মোড়া! এত সুন্দর দৃশ্য দেখে মনে হল— যাক, এখানে আসাটা বৃথা হয়নি!
যদিও বাইরে খুব ঠান্ডা (তখন মাইনাস ৩২ ডিগ্রি) তবু ভাবলাম ভাড়া করা পোশাক আর জুতোটা পরে একটু বেরিয়ে পড়ি। পায়ে হেঁটে শহরটা দেখা যাক। খুবই ছোট শহর, রাস্তাঘাটেও তেমন লোকজন চোখে পড়ল না। এক বার হাতের দস্তানাটা ঠিক করতে একটা ছোট অফিসে ঢুকে পড়ায় একটি মেয়ে বলল যে, আমার নাকি সাহস আছে। কেননা, অত ঠান্ডায় আমি ঘুরে বেড়াচ্ছি, তাও কোনও কাজ ছাড়াই! যাই হোক, একটু দূরে একটা চেনা ‘কেএফসি’ ফুড মার্ট চোখে পড়ায় সেখানে গিয়ে ঢুকলাম। যে ভদ্রমহিলা খাবারের অর্ডার নিচ্ছিলেন, তাঁকে আমার প্রথমে ভারতীয় বলেই মনে হয়েছিল। আমি ‘ভারতীয়’ কি না উনিও জানতে চাইলেন আর তার পর জানালেন, যে উনি বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। এর পর স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের কথাবার্তা বাংলাতেই হল। উনি জানালেন, ইয়েলোনাইফে প্রায় ২০টি বাঙালি পরিবার আছে, যার অধিকাংশই মাইনিং ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে। এর মধ্যে বেশির ভাগই বাংলাদেশ থেকে এলেও একটি কলকাতার পরিবার আছে। ওখানে কিছু খাবার আর কফি খেয়ে আবার বেরিয়ে পড়লাম। প্রসঙ্গত বলে রাখি, ইয়েলোনাইফে সব কিছুর দামই বেশি, খাবারের দামও তার ব্যতিক্রম নয়।
রাতে আবার সেজেগুজে বেরিয়ে পড়লাম এবং রাত ২টো অবধি আগের দিনের জায়গাতেই থাকলাম। কিন্তু সে রাতেও তেমন কিছু অরোরা-ঝলক দেখা গেল না।
পরের রাতে আমরা অন্য জায়গায় যাব। এ বার যাব আর একটু দূরে, ‘স্নো-মোবাইল’ তথা তুষার-যানে চেপে।
আকাশের উত্তর দিক থেকে সবুজ আলো হঠাৎ
দক্ষিণের দিকে এগোতে এগোতে পুরো আকাশ ছেয়ে গেল!
চারটে দলে ভাগ করা হয়েছে আমাদের। প্রতি স্নো-মোবাইলে দু’জন করে বসবে। এক জন ড্রাইভারের সিটে, যে স্নো-মোবাইলটা চালাবে। আর এক জন পিছনের সিটে। দলটা বেজোড় সংখ্যক হয়ে পড়ায় আমি একাই একটা স্নো-মোবাইলে বসলাম ড্রাইভারের সিটে। স্নো-মোবাইল শীতকালে ভ্রমণের জন্য একটি ভূমি-বাহন। এটি বরফের উপর অবলীলায় মোটরবাইকের মতন চলে। সেই স্নো-মোবাইলে চেপে প্রায় ২০ মিনিট বরফের উপর দিয়ে চালিয়ে একটি নিস্তব্ধ জায়গায় পৌঁছলাম। জায়গাটা যে একটা বরফজমা হ্রদের ধারে সেটা বোঝাই যাচ্ছিল। চার দিকে বরফ ছাড়া কিছু নেই। রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকার। সৌভাগ্যক্রমে আকাশ সে দিনও খুব পরিষ্কার। সেখানেও একটা ছোটমতো কুঁড়েঘর করা আছে। তার ভেতরেই আমাদের গাইড মুস্ক অক্সের সসেজ গরম করতে বসলেন। আমি বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছি— অরোরার দেখা পাওয়া যায় কি না। অরোরার দেখা মিলল! আর শুধু তা-ই নয়, দারুণ ভাবেই মিলল! আকাশের উত্তর দিক থেকে সবুজ আলো হঠাৎ দক্ষিণের দিকে এগোতে এগোতে পুরো আকাশ ছেয়ে গেল! সেই সবুজ আকাশের মাঝেই আবার কোথা থেকে লাল আলো এসে যেন নৃত্য করতে লাগল! সেই ব্যাপারটা ছিল অনেক ক্ষণ। অন্যান্য পর্যটকরা আনন্দ-উল্লাসে তখন ফেটে পড়েছেন। কেউ কেউ অরোরাকে লং এক্সপোজারে ক্যামেরায় ধরে রাখার চেষ্টাও করছেন। আকাশে এই আলোর খেলা চলল বেশ কিছু ক্ষণ। আমাদের গাইড জানালেন, ওঁর দেখা অন্যতম সেরা অরোরা-ঝলক হল সেই রাতে! সত্যিই সে এক অভিজ্ঞতা, যা লিখে বোঝানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আকাশে আলোর ওই ঝলকানি অবশ্য অনেকটাই শেষ হয়ে এল রাত যখন ২টো বাজে। আমরাও স্নো-মোবাইলে চেপে খুশি মনে হোটেলের দিকে এগোলাম নিস্তব্ধ বরফের মাঠের মধ্য দিয়ে।
পর দিন হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়লাম এয়ারপোর্টের উদ্দেশে। ফ্লাইটে বসে বসে শেষ তিন দিনের কথা ভাবছিলাম আর মনে হচ্ছিল আরও কয়েকটা দিন বেশি থাকলে যেন ভাল হত। ফিরে আসতে একটু কষ্টই হচ্ছিল, কিন্তু ফিরতে তো হবেই। আমার বিমানও আস্তে আস্তে টার্মিনাল ছেড়ে রানওয়ের দিকে যেতে লাগল। একটু পরেই সে আমাকে নিয়ে উড়ে যাবে ভ্যাংকুভারের উদ্দেশে। সেই গল্প নয় পরে এক দিন হবে।
তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মরত।
বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে
বসবাস। ভ্রমণ ছাড়াও
পছন্দের বিষয় গান শোনা,
বই পড়া, সিনেমা দেখা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy