মিশন আই লিগ। সনির শরীরচর্চা। শনিবার। ছবি: উত্পল সরকার
পিকে-র চিত্রনাট্যে ঈশ্বরকে পাগলের মতো খুঁজছিলেন আমির খান। ঠিক সে ভাবেই যেন সাড়ে চার বছর ধরে ট্রফি খুঁজছেন মোহনবাগানের সভ্য, সদস্য, কর্তারা!
সেই গ্লানি মুছতেই ঢাকা থেকে সনি নর্ডি, উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পার্টিজান বেলগ্রেডের হয়ে লাজিও-র বিরুদ্ধে জোড়া গোলদাতা পিয়ের বোয়া, ভারতীয় ফুটবলে সাড়া জাগানো জেজে, বলবন্তদের নিয়ে স্বপ্নের দল গড়েছিল বাগান। কিন্তু কলকাতা লিগে ডার্বি হারের পর সেই স্বপ্ন গোত্তা খেতে খেতে ভুটানের কিঙ্গ কাপ আর ফেড কাপের পর সোজা মাটিতে। মাঝখানে বদল হয়েছে কোচ। দু’মাসের বেতনও বকেয়া সনি-বোয়াদের।
এই পরিস্থিতিতে রবিবার মরসুমের শেষ ট্রফি আই লিগ অভিযান শুরু করছে সঞ্জয় সেনের দল। ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষ খালিদ জামিলের মুম্বই এফসি। সাবিত-কাতসুমিরা পারবেন কি হতাশার বাগানে সেই মহার্ঘ ট্রফি-ফুল ফোটাতে?
প্রশ্ন শুনেই সাতসকালে চোয়াল শক্ত বাগানের ঘরের ছেলে সত্যজিত্ চট্টোপাধ্যায়ের। সবুজ-মেরুন তাঁবুতে প্রথম জাতীয় লিগ এনে দেওয়া ফুটবলার (সেই টুর্নামেন্টের সেরা ফুটবলারও) বলছিলেন, “ডায়মন্ডের বছরে (১৯৯৭) ইস্টবেঙ্গলের কাছে ১-৪ হেরেও আমরা কিন্তু জাতীয় লিগ জিতেছিলাম। আমাদের মতোই খারাপ সময় কাটিয়ে এই মোহনবাগান আই লিগ জিততেই পারে।” সাতাত্তরে পেলের কসমসের বিরুদ্ধে নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়া বাগানের প্রাক্তন গোলকিপার শিবাজি বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলছেন, “সাতাত্তরে আমাদের স্বপ্নের দল লিগে ইস্টবেঙ্গলে কাছে জোড়া গোলে হেরে রোজ সমর্থকদের টিটকিরি শুনত। কিন্তু ‘পেলে-ম্যাচ’ থেকেই সে বছরের ত্রিমুকুট জয়ের অক্সিজেন পেয়ে গিয়েছিলাম। রবিবার শিল্টনরা মুম্বই এফসিকে হারিয়ে লিগটা শুরু করলে ঠিক সেই আত্মবিশ্বাসটাই পেতে পারে।”
কিন্তু জাতীয় লিগ হোক বা আই লিগ। প্রথম ম্যাচ তো মোহনবাগানে প্রায়ই পিকের সেই ‘তপস্বীজি’-র মতোই রং নম্বর ডায়াল করে ফেলে। তাই এই ম্যাচে তিন পয়েন্ট খুব কমবার-ই এসেছে একশো পঁচিশ বছরের ক্লাবে। শনিবার সকালে প্র্যাকটিস সেরে বাড়ি ফেরার আগে সতীর্থ বেলো রজ্জাকের কাছে যা জানতে চেয়ে বোয়ার মন্তব্য, “কি রে, কী সব শুনছি! প্রথম ম্যাচ প্রত্যেক বার নাকি টাফ এনকাউন্টার?”
মোহনবাগান কোচ সঞ্জয় সেন অবশ্য এই সব তত্ত্ব মানতে নারাজ। একই প্রশ্নে তাঁর কপট রাগের সঙ্গে জবাব, “অত পরিসংখ্যান, ইতিহাস, ভূগোল বুঝি না। স্রেফ বুঝি প্রথম ম্যাচ জিততে হবে।” এ রকম আত্মবিশ্বাসী আবহে হাজির বোয়ার মতো স্লথ ফ্যাক্টর। যিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন ৩৫ মিনিটের মধ্যেই। রক্ষণকে সাহায্য করতে নীচে নামতেও প্রবল অনীহা। শুক্রবার এক মাসের বকেয়া বেতন পেয়ে গোটা টিম যখন চনমনে, তখন বাগানের মার্কি ফুটবলার এ দিন অনুশীলনে নেমেই কোচকে আলাদা করে ডেকে বলেন, তাঁর হ্যামস্ট্রিংয়ে এখনও ব্যথা। যা শুনে মোহন কোচ আর ঝুঁকি নিতে চাননি।
খালিদ জামিলের দলের বিরুদ্ধে তাই বোয়াকে বাইরে রেখেই ৪-৪-২ ছকেই দল সাজাচ্ছেন সঞ্জয়। গোলে শিল্টন। ব্যাক ফোরে-প্রীতম, বেলো, কিংশুক, সৌভিক। মাঝমাঠে কাতসুমি, বিক্রমজিত্, ডেনসন, তীর্থঙ্কর। আর আক্রমণে বলবন্ত, সনি। ফেডারেশন কাপে দেখা গিয়েছে, মাঝমাঠ আর রক্ষণের মাঝে তৈরি হওয়া দূরত্বকে কাজে লাগিয়েই গোল করে গিয়েছে প্রতিপক্ষ। এ দিন সেই দুর্বলতা মজবুত করতে জোরদার করা হল রক্ষণ সংগঠন। আর আক্রমণে সনি উঠলে উইথড্রল ফরোয়ার্ডের ভূমিকা নেবেন বলবন্ত। আবার ‘পঞ্জাব দা পুত্তর’ ক্লান্ত হলে সে দায়িত্ব সনির। এ দিন সকালের অনুশীলনে সেটাই দেখা গিয়েছে।
প্রতিপক্ষ মুম্বই এফসিকে ফেডারেশন কাপে দেখেছেন বাগান কোচ। ইউনাইটেড স্পোর্টসে তাঁর একদা ছাত্র জোসিমারদের স্ট্র্যাটেজি সম্পর্কে তাঁর পূর্বাভাস, “ওরা লং বল বেশি খেলে জোসিমারকে সামনে রেখে। ৪-৫-১ ছকে দু’টো হাফ আক্রমণে আসে বার বার। সেটা আটকাতে হবে। আর জোসিমারের দুর্বলতাও জানি।” জোসিমার ছাড়াও রয়েছেন চিকা ওয়ালি, তাইসুকেরাও। সঙ্গে মহম্মদ রফি, ক্লাইম্যাক্স, প্রদীপ, মোহনরাজরাও। বিকেলে যুবভারতীতে অনুশীলন সেরে ক্লাইম্যাক্স বলছিলেন, “আমাদের লক্ষ্য প্রথম চার। তার জন্য প্রথম ম্যাচ থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়তে চাই।”
যা শুনে বাগানে ন’বছর কাটিয়ে অধিনায়কের ব্যান্ড পাওয়া শিল্টন পাল বলছেন, “প্রথম ম্যাচের তিন পয়েন্ট চাই। প্রথম পর্বে যত বেশি সম্ভব পয়েন্ট তুলতে হবে। না হলে, আই লিগে এ বারও ‘রং নম্বর’ ডায়াল হয়ে যেতে পারে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy