উলি হোয়েনেস। যখন বায়ার্ন কর্তা।
তাঁর প্রশাসন কালেই আলিয়াঁজ এরিনা তৈরি হওয়া। বায়ার্ন মিউনিখের নতুন ফুটবল স্টেডিয়াম। ফুটবল বিশ্ব যাকে বলে থাকে আর্ট স্টেডিয়াম। যা গড়তে খরচ হয়েছিল ৩৪ কোটি ইউরো। আর আজ বায়ার্নের সোনার সময়ের সেই প্রশাসনিক মস্তিষ্ক ২ কোটি ৭২ লাখ ইউরো কর ফাঁকি দেওয়ার অপরাধে হাজতে গেলেন!
জার্মান আদালতের রায়ে সাড়ে তিন বছরের জন্য হাজতবাস হল প্রাক্তন বায়ার্ন মিউনিখ ও জার্মান দলের কিংবদন্তি ফুটবলার এবং বর্তমানে ক্লাব প্রেসিডেন্ট উলি হোয়েনেসের!
জার্মানির (তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি) হয়ে প্রথম বার ইউরো কাপ (’৭২) এবং বিশ্বকাপ (’৭৪) খেলেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব আছে হোয়েনেসের। বায়ার্ন মিউনিখ ফরোয়ার্ডের এহেন বিরল কৃতিত্ব নেই বেকেনবাউয়ার, গার্ড মুলারের মতো বায়ার্ন কিংবদন্তিদেরও। চুয়াত্তরের বিশ্বকাপ ফাইনালের প্রথম মিনিটেই জোহান ক্রুয়েফ-কে বক্সের মধ্যে হোয়েনেসের করা ফাউল থেকে পাওয়া পেনাল্টিতেই নেদারল্যান্ডস এক গোলে এগিয়ে গিয়েছিল। চল্লিশ বছর পর মাঠের বাইরে যেন জার্মান ফুটবলপ্রেমীদের হাড় হিম করে তোলা তেমনই এক ‘ফাউল’-এ হোয়েনেস এ বার নিজেই ‘গোল’ হজম করে বসলেন!
আর্সেনালকে ছিটকে দিয়ে বায়ার্নের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল ওঠা দেখে আগের দিন যখন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা বলাবলি করছিলেন, এ বারও ট্রফিটা হয়তো বায়ার্নের তাঁবুতে উঠবে, তখনই এক গামলা দুধে চোনা ফেলার মতো ক্লাব প্রেসিডেন্ট হোয়েনেস বিপুল পরিমাণ কর ফাঁকি দেওয়ার কথা স্বীকার করে মহাবিতর্ক বাঁধান। প্রচারমাধ্যমের জল্পনা ছিল, বিরাট অঙ্কের জরিমানা দিয়ে এ যাত্রা হোয়েনেস পার পেয়ে যেতে পারেন। কিন্তু এর পর তিনি আরও ১৫ মিলিয়ন ইউরো কর ফাঁকি দেওয়ার কথা স্বীকার করায় আর হাজতবাস থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারেননি। হোয়েনেসের দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর হাজতবাস বিশ্ব ফুটবলে এই মাপের কোনও ফুটবল ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রে বিরলতম ঘটনা।
নিজেই অপরাধ স্বীকার করে নিলেও হাজতবাস এড়াতে পারেননি হোয়েনেস। বিচারক রায় দিয়ে বলেন, “এটা কর ফাঁকি দেওয়ার জঘন্য ঘটনা।” এগারো মাসের মধ্যেই হোয়েনেসের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্য শেষ হয়ে রায় বেরিয়ে গেল। ২০১৩-র ২০ এপ্রিল মিডিয়ায় প্রথম বেরোয় তাঁর এই কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য তদন্ত শুরুর খবর। হোয়েনেসের বিরুদ্ধে মূলত অভিযোগ ছিল, সুইস ব্যাঙ্কে তাঁর বিপুল লুকনো অর্থ আছে। যার কোনও কর তিনি দেননি। গত মার্চে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে জার্মানির আয়কর দফতর। এক মাস তিন দিনের মাথাতেই রায় বেরিয়ে গেল।
বিশ্ব ফুটবলের এক কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব ঢুকলেন হাজতে!
উলরিখ ‘উলি’ হোয়েনেস
উলি হোয়েনেস। যখন জার্মানির ফুটবলার।
• বয়স ৬২ বছর
• ফুটবলার জীবন বায়ার্ন মিউনিখে ১৯৭০-৭৯ এবং সাবেক পশ্চিম জার্মানি ও পরে জার্মানির হয়ে ’৭২-৮৬ সাল পর্যন্ত ফরোয়ার্ডে খেলেছেন।
• গোল ক্লাবের হয়ে ২৩৯ ম্যাচে ৮৬ ও দেশের হয়ে ৩৫ ম্যাচে ৫।
• বিশেষ তথ্য জার্মানির হয়ে আবির্ভাবেই (’৭২) হাঙ্গারির বিরুদ্ধে ফ্রেন্ডলি ম্যাচে দলের প্রথম গোল।
বায়ার্নের মাত্র ছয় ফুটবলারের এক জন, যিনি বিশ্বকাপ (’৭৪) ও ইউরো কাপ (’৭২) জেতেন।
’৮২-তে একটি চার আসন বিশিষ্ট বিমান দুর্ঘটনায় হোয়েনেসের তিন সতীর্থ মারা গেলেও তিনি বিমানের একেবারে পিছনের সিটে ঘুমন্ত থেকেও বেঁচে যান। অল্প আহত হন।
জার্মান কসাইয়ের ছেলে হোয়েনেস বর্তমানে ন্যুয়েমবার্গে মাংসের নানা উপাদান তৈরির কারখান ‘ব্র্যাটউর্স্ট’-এর যৌথ মালিক।
• ফুটবল প্রশাসক অবসরের পরেই বায়ার্নের কমার্শিয়াল জেনারেল ম্যানেজার (২০০০-০৫)।
এই সময়ের মধ্যে বায়ার্ন ১ বার করে আন্তঃ মহাদেশীয় কাপ, ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, উয়েফা কাপ (বর্তমানে ইউরোপা লিগ), ১৫ বার বুন্দেশলিগা ও ৭ বার জার্মান কাপ জেতে।
হোয়েনেসের ছ’বছরের জেনারেল ম্যানেজার কার্যকালে বায়ার্নের আয় ২০ গুণ বাড়ে। সদস্য সংখ্যা ১০ গুণ বেড়ে দাঁড়ায় ১০ লাখে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy