Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

দুই প্রবীণের মিলন-মোহনায় মিশে থাকল সৌরভের আবাহন

শহরের ক্রিকেট-রাজভবনে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহটা একটু ব্যতিক্রমী হয়ে থাকে। বার্ষিক অনুষ্ঠান, বর্ষসেরা-বরণ, ভারতীয় ক্রিকেটের প্রাক্তন মহীরুহদের আনাগোনা, বঙ্গ ক্রিকেটের বরেণ্যদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন এবং সব শেষে বার্ষিক সাধারণ সভা। যেটা কখনও কখনও নিরুত্তেজক হয়, কখনও আসে নির্বাচনী ডঙ্কা বাজিয়ে। চলতি বছরে প্রথম অনুষ্ঠানে ব্যতিক্রম নেই।

মধ্যমণি গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ। আজীবন স্বীকৃতি পাওয়া সৌমেন কুণ্ডু।

মধ্যমণি গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ। আজীবন স্বীকৃতি পাওয়া সৌমেন কুণ্ডু।

প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৪ ০২:২৩
Share: Save:

শহরের ক্রিকেট-রাজভবনে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহটা একটু ব্যতিক্রমী হয়ে থাকে। বার্ষিক অনুষ্ঠান, বর্ষসেরা-বরণ, ভারতীয় ক্রিকেটের প্রাক্তন মহীরুহদের আনাগোনা, বঙ্গ ক্রিকেটের বরেণ্যদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন এবং সব শেষে বার্ষিক সাধারণ সভা। যেটা কখনও কখনও নিরুত্তেজক হয়, কখনও আসে নির্বাচনী ডঙ্কা বাজিয়ে।

চলতি বছরে প্রথম অনুষ্ঠানে ব্যতিক্রম নেই। ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথের হাত দিয়ে বাংলা ক্রিকেটের বিভিন্ন বর্ষসেরাদের পুরস্কার প্রদান হল। স্মৃতিচারণের সময় সর্বকালের অন্যতম স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান বলেও ফেললেন, জীবনে অনেক ভাল ইনিংস খেলেছেন। কিন্তু রবার্টসের ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ইডেনে ১৩৯ আজও তাঁর কাছে সেরা। কারণ আজও রাতে ঘুমোলে ক্যারিবিয়ান পেসারদের ভয়াবহ চেহারাগুলো মনে পড়ে যায়। সে সব প্রাচীর ভেঙে করা সেঞ্চুরির কথা ভাবলে আজও তাঁর গায়ে কাঁটা দেয়! আর সিএবি আজীবনের সম্মান যাঁর হাতে তুলে দিল, সেই সৌমেন্দ্রনাথ কুণ্ডুর অবাক লাগে ভেবে যে, ভিশি এখনও তাঁকে ভোলেননি! সেই কবে ব্যাঙ্ক টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে বাইশ গজের যুদ্ধে নামা। তার এত দিন পর দেখা হতেই পুরনো বন্ধুর প্রথম সংলাপ, “আরে কুণ্ডু! রিমেম্বার দ্যাট ব্যাঙ্ক টুর্নামেন্ট?”

মোহময় একটা পরিবেশ। ক্রিকেট অনুরাগীদের কাছে তো বটেই, অক্রিকেটীয় হৃদয়ও ছুঁয়ে যাবে একই মঞ্চে দুই প্রবীণের নানা রঙের দিনগুলি। সৌমেন কুণ্ডুর ক্রিকেট-জীবনের শুরু এবং শেষ দুটোই বড় অদ্ভুত। লেগস্পিনার হওয়ার তাঁর কথাই ছিল না। অ্যালবার্ট ক্লাবের ট্রেনিং সেশনে তাঁর হাতে একটা বল ছুড়ে দেওয়া হয়েছিল। কী করতে হবে, কিছুই বলা হয়নি। বলটা পিচে পড়ে প্রায় এক গজ ঘুরে যায়। ষোলো বছরের কিশোরের মধ্যে বাংলাও পেয়ে যায় এক লেগস্পিনারকে। শেষটাও অবাক করে দেওয়ার মতো। ক্রিকেট বলে, এক জন স্পিনারের বয়স যত বাড়ে তত সে বেশি পরিপূর্ণ হয়, তার বৈচিত্র বাড়ে। সেখানে তিনি কিনা ক্রিকেটটাই ছেড়ে দেন সাতাশে! মাত্র তিরিশটা প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে, ১২৭ উইকেট নিয়ে।

“কী করব, চোখের সামনে দেখছি আমার চেয়ে ভাল বোলার এসে গিয়েছে। তার পরেও স্রেফ জায়গার জন্য পড়ে থাকব? তাকে সুযোগ দেব না?” শনিবার অনুষ্ঠান শেষে যখন বলছিলেন বাংলার প্রাক্তন দিকপাল লেগস্পিনার, শুনলে আজকের যুগে তাঁকে ‘বিধর্মী’ মনে হবেই হবে। যিনি সিএবি তাঁকে কেন দেরিতে পুরস্কার দিল, সে সব প্রশ্নে না গিয়ে ‘দিল’, সেটাকেই মনে রাখবেন। বলে দেবেন, তাঁর জীবন আজ পরিপূর্ণ হল। বাহাত্তর বছরের জীবনে এ দিনটা যে আসবে, ভাবতে পারেননি। ঠিক যেমন ভাবতে পারেননি এমন মহার্ঘ্য সম্মান নেবেন বিশ্বনাথের হাত থেকে। “ভিশি বিরাট ব্যাটসম্যান ছিল। আমার বলে এক বার বিট হয়েও পরে ঠিক সামলে নিয়েছিল, বলের পেসটা কম থাকায়। পরে বলেও ছিল, অত আস্তে এল বলেই পারলাম। নইলে হত না।” যিনি ভাবতে শুরু করেছেন, বাংলা ক্রিকেটের সোনালি পর্ব শুরু হতে চলেছে আজ থেকে। রবিবার থেকে। প্রশাসক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত ধরে।


বর্ষসেরা অশোক দিন্দার সঙ্গে। রয়েছেন লক্ষ্মীরতন শুক্লও।

কথাটা ব্যাঙ্ক টুর্নামেন্টে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীও বিশ্বাস করেন। “ক্রিকেটার হিসেবে হোক কি অধিনায়ক হিসেবে, ওর সমস্ত প্রশংসাই প্রাপ্য। আমার তো মনে হয় প্রশাসনেও খুব ভাল কাজ করবে সৌরভ। আমি বলছি, বাংলা ক্রিকেটের এতে ভাল হবে,” একগাদা কচিকাঁচার সঙ্গে পরিচয়-পর্ব সারতে সারতে বলছিলেন বিশ্বনাথ। যে সব কচিকাঁচাদের বড় হওয়ার রাস্তার সন্ধানও দিয়ে গেলেন। বলে গেলেন, “সিএবি তোমাদের যা সুযোগ-সুবিধে দেয়, অবিশ্বাস্য। আমাদের সময় এ সব কিছুই ছিল না। টিভি ছিল না যে ভাল ক্রিকেটারদের খেলা দেখব। কেউ কাউকে ধাক্কা মারলে সেটা প্রমাণ করার উপায় থাকত না। তোমরা যারা আজ বর্ষসেরা হলে, তারা বাকিদের রাস্তা দেখাও। আর যারা হলে না, তারা চেষ্টা করো পরের বার হওয়ার।”

শুনেই হাততালির ঝড়। ভিশিকে মাঝে রেখে বাংলা অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্ল এবং বর্ষসেরা অশোক দিন্দার ফ্রেম তৈরি হল। উপাদান শনিবারের অনুষ্ঠানে ছিল যথেষ্ট। ঝাড়খণ্ড ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্ট অমিতাভ চৌধুরির উপস্থিতিকে ঘিরে বোর্ড নির্বাচন সংক্রান্ত জল্পনা। আবার রবিবারের বার্ষিক সাধারণ সভা নিয়ে জিজ্ঞাসা। সৌরভ আসছেন? না, আসছেন না? আবহের যে শিরশিরানি সাধারণত নির্বাচন থাকলে দেখা যায়।

প্রথমটা না হলেও সিএবি ক্যালেন্ডারের শেষ দিনটা তাই ব্যতিক্রম হয়ে থাকছে।

ছবি: উৎপল সরকার

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE