কলঙ্কিত ক্যাম্পবেল
স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে ফের তোলপাড় ইংল্যান্ডের ফুটবল! ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ঠিক পরের ধাপ, ফুটবল লিগ-এর মোট তেরো জন ফুটবলারকে গ্রেফতার করে জেরা শুরু করা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি। ধৃতদের বিরুদ্ধে ইংলিশ ফুটবলের দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ ডিভিশনের বিভিন্ন ম্যাচে স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। এমনকী পোর্টসমাউইথের এক প্রাক্তন তারকা, স্যাম সোজের দাবি অনুযায়ী, প্রিমিয়ার লিগ এবং আসন্ন ব্রাজিল বিশ্বকাপেও গড়াপেটা করানোর ষড়যন্ত্র চলছে।
চৌঁত্রিশ বছরের প্রাক্তন ফুটবলারের এই চাঞ্চল্যকর দাবি এবং এক ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডে প্রকাশিত খবরের সূত্র ধরে গড়াপেটার অভিযোগ নিয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ)। তারা জানিয়েছে, গ্রেফতার হওয়া ফুটবলারদের বেশির ভাগই উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডের বিভিন্ন ক্লাবে খেলেন। ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সি এই ফুটবলারদের বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ম্যাচে হলুদ বা লাল কার্ড দেখা থেকে শুরু করে আরও নানা ভাবে ম্যাচের ফল প্রভাবিত করার অভিযোগ রয়েছে। স্টিভ নামের এক ব্যবসায়ীকেও ধরেছে পুলিশ। এ দিন এই খবর প্রকাশের পর হইচই শুরু হয়েছে ইংল্যান্ড জুড়ে। ইংল্যান্ড ফুটবল সংস্থার এফ এ-র তরফে এক বিবৃতিতে ফুটবলারদের গ্রেফতারি এবং গড়াপেটার অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে জানানো হয়েছে, তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
ইংল্যান্ডের ফুটবলে স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগ অবশ্য উঠেছিল গত বছরের ডিসেম্বরেই। সেই সময় তদন্তের জালে ধরা পড়েছিলেন ছ’জন ফুটবলার। যাঁদের মধ্যে ব্র্যাকবার্ন রোভার্সের মতো চ্যাম্পিয়নশিপের টিমের (দ্বিতীয় ডিভিশন) তারকা স্ট্রাইকার ডি জে ক্যাম্পবেলও ছিলেন। পরে গ্রেফতার ছয় ফুটবলারের প্রত্যেককেই এ বছরের এপ্রিল মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত জামিন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই সময়সীমা পেরোনোর আগেই এ দিন ফের গ্রেফতার করা হল তাঁদের। সঙ্গে গ্রেফতার হলেন আরও সাত জন ফুটবলার। এনসিএ-র গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ইংল্যান্ড জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বেশ কয়েকটি থানায় আলাদা আলাদা করে জেরা চলছে এই তেরো ফুটবলারের।
একটি ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডের স্টিং অপারেশনে দ্বিতীয় ডিভিশনের ক্লাব পোর্টসমাউথের প্রাক্তন তারকা সোজের গড়াপেটার নানা দাবি বেরিয়ে এসেছে। গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি লিগ ওয়ানের ম্যাচে তিনি কী ভাবে প্রতিপক্ষের প্লেয়ারকে পেটে ঘুসি মেরে লাল কার্ড দেখে ৭০ হাজার পাউন্ড কামিয়েছিলেন, তারিয়ে তারিয়ে তার গল্প শুনিয়েছেন সোজে। সঙ্গে দাবি করেছেন, প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচও গড়াপেটা করতে পারেন। এখানেই না থেমে সোজের আরও দাবি, বুকিদের সঙ্গে ব্রাজিল বিশ্বকাপের বেশ কিছু ম্যাচে স্পট ফিক্সিংয়ের তোড়জোড় চালাচ্ছেন তিনি। এর পরেই সোজে এবং তাঁর ফুটবলার ভাই আকপো গ্রেফতার হন।
এনসিএ-র তদন্তে স্পট ফিস্কিংয়ের আরও হদিশ মিলেছে। যেমন ওল্ডহ্যামের স্ট্রাইকার ক্রিশ্চিয়ান মন্টানো উলভসের বিরুদ্ধে গত ২২ অক্টোবরের ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখার শর্তে টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু ওই ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখতে ব্যর্থ হওয়ায় পরের আর একটি ম্যাচে গড়াপেটা করতে রাজি হয়ে যান।
স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারি এমন বিশাল আকার নেওয়ায় রীতিমতো চাপে ফুটবল লিগ। এ দিন ফুটবল লিগের এক মুখপাত্র বলেছেন, “ফুটবলারদের গ্রেফতারির ব্যাপারটা এনসিএ আমাদের জানিয়েছে। গড়াপেটা কাণ্ডে আরও সাত জন ফুটবলার জড়িয়েছে বলেও আমরা জানি। আমাদের তরফে তদন্তে সব রকমের সাহায্য করা হচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে এর বেশি আর কিছুই বলতে চায় না এফ এ।”
পরিস্থিতি যা, তাতে আপাতত মুখে কুলুপ আঁটাই সেরা পন্থা বলে এফ এ কর্তারা মনে করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy