বোর্ড নির্বাচনের আগে রীতিমতো উত্তপ্ত হয়ে থাকল শেষ ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠক। উত্তপ্ত হয়ে থাকল, নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন বনাম শরদ পওয়ার-শশাঙ্ক মনোহর যুদ্ধকে ঘিরে।
আগামী ২ মার্চ বোর্ড নির্বাচনের দিন ধার্য হল। আর তার আগে চেন্নাইয়ে রবিবাসরীয় বোর্ড বৈঠকে বিরোধী প্রধানদের বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে রাখলেন শ্রীনি। হুঙ্কার দিয়ে রাখলেন, ক্রমাগত মিথ্যে অভিযোগ এনে তাঁর উপর চুনকালি মাখানোর জন্য তিনি দেখে নেবেন প্রাক্তন বোর্ড মহাকর্তাদের। ছাড়া হবে না বিহার সংস্থার সচিব আদিত্য বর্মাকেও। তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খোঁজা হবে কী করে দুঁদে আইনজীবীদের বিশাল খরচ তিনি মেটালেন। আর শুধু আদিত্য নন। আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে তাঁদের বিরুদ্ধেও যাঁরা বিহার ক্রিকেট সংস্থার সচিবের পিছনে আছেন।
নাম দু’টো সহজ। পওয়ার ও মনোহর।
যার পাল্টা আবার পওয়ার-মনোহরদের শিবিরও দিয়ে রাখল। ইঙ্গিত দেওয়া হল, তাঁরাও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করবেন। আর যদি তাঁরা দেখেন শ্রীনি নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন, তা হলে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হতে পারে। বিরোধী শিবিরের পক্ষে বলা হচ্ছে, প্রাক্তন বোর্ড প্রেসিডেন্ট শরদ পওয়ারকে আবার দেখা যেতে পারে নির্বাচনী যুদ্ধে। তেমন ইঙ্গিত নাকি জোরালো ভাবে মিলেছে। আরও বলা হচ্ছে, বড় খবর আসছে দিল্লি নির্বাচন মিটে গেলে। আর সেটা নাকি আসছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি।
যার তিন দিন আগে আরও একটা খবর প্রকাশ্য হওয়ার সম্ভাবনা। বোর্ডের কোনও কোনও কর্তার কাছে খবর, সিএসকের সঙ্গে ইন্ডিয়া সিমেন্টসের সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার কথাটা ১১ ফেব্রুয়ারি সরকারি ভাবে ঘোষণা করে দেওয়া হতে পারে। সে দিন নাকি ইন্ডিয়া সিমেন্টসের বোর্ড বৈঠকের পর সেটা হতে পারে। আর রবিবাসরীয় বৈঠকে উপস্থিত কোনও কোনও সদস্যের ধারণা, শ্রীনি এত সহজে ছাড়বেন না। ইন্ডিয়া সিমেন্টসকে সরিয়ে নেওয়ার পর নিঃসন্দেহে তিনি আদালতে যাবেন। আবেদন করবেন, নির্বাচনে দাঁড়ানো নিয়ে। কোর্ট ছাড়পত্র পেলে তো হয়েই গেল। নইলে প্ল্যান বি ধরতে হবে।
চেন্নাইয়ে বোর্ড বৈঠক থেকে বেরিয়ে কেউ কেউ বললেন, শ্রীনি এখনও সব রকম চেষ্টা করছেন বোর্ড প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্নির্বাচনের। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেও তাঁর মধ্যে তেমন কোনও হেলদোল দেখা যায়নি। সাধারণত যে ভাবে বোর্ড বৈঠক তিনি অতীতে শাসন করে এসেছেন, এ দিনও তামিলনাড়ু ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্ট হিসেবে বৈঠকে যোগ দিয়ে তেমনই করেছেন। পওয়ার-মনোহর-আদিত্যকে একহাত নিয়ে রেখেছেন। আবার ঘনিষ্ঠদের বলে রেখেছেন, একান্তই না পারলে তাঁর প্ল্যান ‘বি’-ও তৈরি। ‘শিখণ্ডি’ দাঁড় করাবেন যাঁকে, তাঁর নাম শিবলাল যাদব। যাঁর পথ নিষ্কণ্টক করতে হায়দরাবাদ ক্রিকেট সংস্থার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও শিবলাল-বিরোধী আর্শাদ আয়ুবকেও নিয়ন্ত্রণে আনা গিয়েছে বিশ্বকাপ ম্যানেজারের ‘যৌতুক’ দিয়ে।
সে সব অঙ্ক পরের ব্যাপার। রবিবার দিনটা আলোচ্য থাকল শ্রীনির তর্জন-গর্জনকে ঘিরে। শ্রীনি নাকি বৈঠকে উত্তেজিত ভাবে বলতে থাকেন, এই আদিত্য বর্মা যা নয় তাই বলে যাচ্ছে। আর সঙ্গে পাচ্ছে দুই প্রাক্তন বোর্ড প্রেসিডেন্টকে। ওরা বলছে, শিবলালের ছেলে আমার কোম্পানিতে কাজ করে। যেটা সর্বৈব মিথ্যে। আর এক প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মুদগল কমিটির কাছে বলে এলেন আইপিএল সিইও সুন্দর রামন আমার আত্মীয়। আমি আপনাদের রেকর্ড করতে বলছি সুন্দর আমার আত্মীয় নয়। ওকে ললিত মোদী এনেছিল। অনেক কথা হচ্ছে বোর্ডকে নিয়ে। এ বার এঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত!
সন্ধের দিকে আবার ছড়িয়ে যায়, গোয়া ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্ট ড: শেখর সালকর নাকি মিডিয়ায় বলেছেন, প্রত্যেক রাজ্য সংস্থার উচিত মনোহরদের বিরুদ্ধে মামলা করা! গোয়ায় ফোনে ধরা হলে সালকর অবশ্য বললেন, “এ রকম কিছু বলিনি। মিডিয়া জিজ্ঞেস করেছিল শ্রীনি কী করে বৈঠক চেয়ার করলেন? বললাম, সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত অর্ডারে কোথাও বলা নেই শ্রীনি সেটা পারবেন না। অন্তর্বর্তিকালীন অর্ডারে বলা ছিল। আর চূড়ান্ত রায় বেরোলে ইন্টেরিম অর্ডার খারিজ হয়ে যায়।”
তবে কোনও কোনও কর্তার ধারণা, সোজাসুজি মানহানি মামলা পওয়ারদের বিরুদ্ধে আনা সহজ নয়। সেটা নাকি বার্ষিক সভায় পাশ করাতে হবে। বরং অভ্যন্তরীণ তদন্ত সম্ভব। আর সম্ভব পওয়ারদের শো কজ নোটিস ধরানো। করলে সেটা আগে করা উচিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy