পেনাল্টি মিস। ম্যাচের শেষে মেজাজও হারালেন। কাকা গিয়েছিলেন মেসিকে সান্ত্বনা দিতে। মেসি তাঁর হাত সরিয়ে দিয়ে মাঠে ফিরে যেতে বলেন। ছবি: রয়টার্স
ব্রাজিল-২ (তারদেল্লি)
আর্জেন্তিনা-০
চিনের ‘বার্ডস নেস্ট’ স্টেডিয়ামে ব্রাজিল-আর্জেন্তিনা ম্যাচটা দেখার পর নিঃসন্দেহে লিওনেল মেসির সমর্থকরা মুষড়ে পড়বেন। বিশ্বকাপ ফাইনালের পর আরও একটা বড় মঞ্চ খারাপ গেল মেসির। আবারও একটা মর্যাদার যুদ্ধে ও পারল না। শুধু খারাপ খেলল নয়, একটা পেনাল্টিও মিস করে বসল! যা দেখে কাউকে কাউকে বলতে শুনলাম, মেসি কি তা হলে বড় ম্যাচে চাপে পড়ে যাচ্ছে?
মানতে পারছি না। লিওনেল মেসি নিয়ে কথা বলা বা মন্তব্য করার সাহস না দেখানোই ভাল। মানছি, আর্জেন্তিনীয় মহাতারকা আর পাঁচ দিনে যেমন খেলে, তার ধারেকাছেও খেলতে পারেনি। পেনাল্টি মিস করেছে। ব্রাজিলের বক্সের আশেপাশে থেকে এমন সব ফ্রিকিক মেরেছে, যা কোনও দিন মেসি দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারবে না। পেনাল্টিটাও মেরেছে খুব বাজে। ব্রাজিল গোলকিপার বাহবা পেতে পারে। কিন্তু মেসির জঘন্য শট ওর কাজ অনেক সুবিধে করে দিয়েছিল। কিন্তু এত কিছুর পরেও বলতে পারব না যে, বড় মঞ্চে মেসি পারে না। ও অনেক বড় বড় ম্যাচ জিতিয়েছে, আরও জেতাবে। ফুটবলারদের জীবনে এমনটা হয়েই থাকে। বেকহ্যাম, রোনাল্ডিনহো কে মিস করেনি পেনাল্টি?
তবে হ্যাঁ, এটা বলব যে মেসি যেমন দু’টো বড় ম্যাচে খারাপ খেলল, তেমনই পরের কয়েকটা বড় ম্যাচে ভাল খেলে ওকে দেখাতে হবে। নইলে কথাবার্তাগুলো কিন্তু ভাল রকম শুরু হবে। আর এই ম্যাচটাকে আমি মেসির হার হিসেবে দেখতে চাইব না। দেখব, ব্রাজিলের অদম্য ইচ্ছেশক্তির কাছে আর্জেন্তিনার হার স্বীকার হিসেবে। ময়দানি ভাষায় বলছি, আর্জেন্তিনাকে আজ দাঁড়াতেই দেয়নি ব্রাজিল। নেইমার-অস্কাররা আর্জেন্তিনাকে মোটামুটি ছিঁড়ে খেয়েছে।
ক্লাব ফুটবলের বাজারে আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলিতে খুব একটা গা লাগিয়ে প্লেয়াররা এখন খেলতে চায় না। ব্রাজিল-আর্জেন্তিনা ম্যাচ সেই রোগে আক্রান্ত হয়নি। ক্লাব ফুটবলের ভরা মরসুম সামনে থাকলেও নেইমারদের মধ্যে থেকে দেখলাম জাত্যভিমান ফুটে বেরোতে। সোজা কথায়, বল পজেশন থেকে আক্রমণ কোথাওই আর্জেন্তিনাকে নিজেদের ধারেকাছে আসতে দেয়নি ব্রাজিল। কে জানে, দি’মারিয়া-আগেরোরা হয়তো একটু আত্মতুষ্টও ছিল। হয়তো ভেবেছিল, আমরা ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনালিস্ট। জার্মানিকে পরে চার গোল দিয়েছি। বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে সাত গোল খাওয়া ব্রাজিল আর কী করবে?
কিন্তু বিশ্বের উপর শাসন করা ব্রাজিল এক জিনিস, আর চরম সম্মানহানির পর ব্রাজিল আর এক এই ব্যাপারটা আর্জেন্তিনা বুঝতে পারেনি। ব্রাজিলের খেলা দেখে আজ বোঝা গিয়েছে, সাত গোলের ক্ষত ওদের এখনও কতটা যন্ত্রণা দিচ্ছে। অনেক নামী বিশেষজ্ঞরা বিশ্বকাপে ব্রাজিলের সাত গোল দেখে বলেছিলেন, আর ক’টা বিশ্বকাপ লাগবে এই ঘা শুকোতে জানা নেই। আজ যে ব্রাজিলকে দেখলাম, তাতে মনে হল না খুব বেশি দিন লাগবে।
গোটা ম্যাচে কী খেলল ভাবুন তো নেইমার? দু’টো গোল মিস না করলে আর্জেন্তিনা আজ চার গোল খায়! লুই ফিলিপ স্কোলারির হাত থেকে দায়িত্ব নিয়ে দুঙ্গা একটা কাজের কাজ করেছেন। ব্রাজিলিয়ান ঘরানাটা ধরে রেখে ইউরোপীয় স্টাইলটাও মেশাচ্ছেন। দুঙ্গার ব্রাজিল ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকে পাগলের মতো সাম্বায় যাচ্ছে না। যাচ্ছে বিপক্ষের পেনাল্টি বক্সে ঢুকে। অস্কার-নেইমার-উইলিয়ানরা পেনিট্রেটিভ জোনে কী ভাবে মুভ করছিল, দেখেছেন? কী ভাবে নিজেদের মধ্যে ওয়ান-টু খেলছিল? আমি তো বলব, মেসি যে পেনাল্টিটা পেল, সেটা পেনাল্টি হয় না। বরং আমি বলব, ওটা ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডারের বক্সে খুব ভাল একটা ট্যাকল।
আসলে স্কোলারির ব্রাজিলের সঙ্গে দুঙ্গার ব্রাজিলের অনেত তফাত। স্কোলারি সিনিয়র-তত্ত্বে বিশ্বাস করতেন না। দুঙ্গা করেন। দুঙ্গার দর্শন হল, টিমে যেমন ভাল জুনিয়র লাগবে, তেমনই অভিজ্ঞ প্লেয়ারও লাগবে। কাকাকে তাই ডাকা, রোবিনহোকে তাই টিমে রাখা। কাকা আশি মিনিটে নামল, কারণ ব্রাজিল তার আগেই দু’গোল দিয়ে দিয়েছে। দুঙ্গার আরও একটা দর্শন হল, মাঝেমধ্যেই অনামী কাউকে নামিয়ে ম্যাচ বার করে নেওয়া। দিয়েগো তারদেল্লি বলে যে ছেলেটা আজ দু’গোল করে গেল, কেউ চিনত ওকে? দুঙ্গা চাইলেই কাকাকে পিছনে রেখে নেইমারকে উপরে তুলে আনতে পারতেন। কিন্তু চেনা ছকে না গিয়ে ম্যাচটা বার করলেন ‘আননোন ফ্যাক্টর’ ব্যবহার করে। তারদেল্লি কিন্তু টিপিক্যাল স্ট্রাইকার। পাশাপাশি ডিফেন্সকেও খুব ভাল তৈরি করছেন ব্রাজিল কোচ। মার্সেলোর জায়গায় লেফট ব্যাকে খেলাচ্ছেন ফেলিপে লুইসকে। মার্সেলো শুধু ওভারল্যাপেই যেত, নামত না। লুইস যেমন নামে তেমন ওঠে। আর মেসিকে আটকানোর স্ট্র্যাটেজিটাও মনে রাখার মতো। কখনও এলিয়াস-গুস্তাভোর ডাবল কভারিং, কখনও লুইসের একক ট্যাকল, কখনও বা চার-পাঁচ জন মিলে মেসিকে ঘিরে ধরা। ক্রমাগত আটকে গিয়ে ডিফেন্ডারদের শাসন করার চেনা মেজাজটাই চলে গেল মেসির।
আর তাই, চার বছর পর রাশিয়ায় দুঙ্গার হাত ধরে ব্রাজিলকে আবার ব্রাজিল হতে দেখলে আমি খুব অবাক হব না।
এক নজরে নীল-হলুদের যুদ্ধ
বল দখল
আর্জেন্তিনা ৬১ শতাংশ
ব্রাজিল ৩৯ শতাংশ
মোট শট
আর্জেন্তিনা ১৬
ব্রাজিল ১০
গোলে শট
আর্জেন্তিনা ৪
ব্রাজিল ৬
কর্নার
আর্জেন্তিনা ৭
ব্রাজিল ৬
ফাউল
আর্জেন্তিনা ১৬
ব্রাজিল ১৫
বিশ্বকাপের পর
আর্জেন্তিনা: ম্যাচ ২, জয় ১, হার ১, গোল ৪, গোল খেয়েছে ৪।
ব্রাজিল: ম্যাচ ৩, জয় ৩, গোল ৪, কোনও গোল খায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy