Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

আনন্দের উদ্বোধনে অস্বস্তিও

প্রায়ান্ধকার, ভগ্নপ্রায় ইডেন জিম রবিবারের পর থেকে বঙ্গ ক্রিকেটারদের আর একমাত্র ঠিকানা নয়। সিএবির হাতে আজ থেকে আরও একটা জিম চলে এল। ঝাঁ চকচকে, মার্কিন মুলুক থেকে আমদানি করা পাওয়ার ট্রেনিংয়ের যন্ত্রপাতিতে ভর্তি। আবাসিক শিবির প্রসঙ্গ উঠলে ঠোঁট উল্টোনোর দরকার আর পড়বে না। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে প্রাক্-রঞ্জি টুর্নামেন্ট খেলতে উপস্থিত হতে হবে না দশ দিন আগে। তার প্র্যাকটিস আজকের পর থেকে বাংলাতেই সম্ভব, সম্ভব কলকাতা থেকে ঘণ্টা দু’য়েকের দূরত্বে।

বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাকাডেমির সামনে ঋদ্ধিমান। রবিবার কল্যাণীতে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাকাডেমির সামনে ঋদ্ধিমান। রবিবার কল্যাণীতে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৪ ০৩:১৬
Share: Save:

প্রায়ান্ধকার, ভগ্নপ্রায় ইডেন জিম রবিবারের পর থেকে বঙ্গ ক্রিকেটারদের আর একমাত্র ঠিকানা নয়। সিএবির হাতে আজ থেকে আরও একটা জিম চলে এল। ঝাঁ চকচকে, মার্কিন মুলুক থেকে আমদানি করা পাওয়ার ট্রেনিংয়ের যন্ত্রপাতিতে ভর্তি।

আবাসিক শিবির প্রসঙ্গ উঠলে ঠোঁট উল্টোনোর দরকার আর পড়বে না। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে প্রাক্-রঞ্জি টুর্নামেন্ট খেলতে উপস্থিত হতে হবে না দশ দিন আগে। তার প্র্যাকটিস আজকের পর থেকে বাংলাতেই সম্ভব, সম্ভব কলকাতা থেকে ঘণ্টা দু’য়েকের দূরত্বে।

ইডেন বা সল্টলেকের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস রঞ্জি ম্যাচের দুই বিকল্প আর থাকল না। রবিবারের পর তৃতীয় এক কেন্দ্রের নামও অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। যেখানে আলাদা টিম হোটেলের দরকার নেই, কারণ দু’টো টিম রাখার বিলাসবহুল ব্যবস্থা মাঠের সঙ্গেই আছে। সঙ্গে বিশাল কনফারেন্স রুম, যেখানে স্ট্র্যাটেজিক মিটিং থেকে মিডিয়া কনফারেন্সদু’টোই অনায়াসে চলতে পারে।

কল্যাণীতে নতুন ক্রিকেট-দুর্গের উদ্বোধন আজ করে ফেলল সিএবি!

দশ কোটি খরচে, দশ একর জমিতে ‘বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাকাডেমি’ নামের যে আধুনিক ক্রিকেট-সৌধের জন্ম দিল সিএবি, তা ক্রিকেট-শিক্ষার্থীর কাছে আদর্শ ‘গুরুকুল’ হওয়া উচিত। আটটা প্র্যাকটিস টার্ফ বাংলা কেন, গুরু গ্রেগ প্রভাবিত রাজস্থান ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতেও নেই। ম্যাচ পিচ ছ’টা, ওপেন এয়ার ইন্ডোর, সুইংমিং পুল আধুনিক ক্রিকেট-পাঠে জরুরি যাবতীয় সরঞ্জাম আছে অ্যাকাডেমির গর্ভগৃহে।

দু’টো ব্যাপারে মূলত ব্যবহার হবে সিএবির একমাত্র অ্যাকাডেমি। প্রথমত, জুনিয়র টিমগুলোকে আনা হবে দিন কুড়ির আবাসিক শিবিরে। দিন দশেকের মধ্যে যেমন অনূর্ধ্ব-১৬ বাংলা ঢুকে পড়ছে। দ্বিতীয়ত, কিছু সিনিয়রদের ক্লোজ মনিটরিংয়ে রাখা হবে এখানে। দু’টো নাম আপাতত শোনা যাচ্ছে। অনুষ্টুপ মজুমদার এবং শ্রীবৎস গোস্বামী। জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির প্রাক্তন ব্যাটিং-উপদেষ্টা নানাবতীর সঙ্গে কথাবার্তা চালাচ্ছে সিএবি। রাহুল দ্রাবিড় যাঁর কাছে এক সময় টেকনিক নিয়ে গিয়েছিলেন, সেই নানাবতী এই মুহূর্তে এনসিএ-র কোনও পদে নেই। সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে-র সঙ্গে তাঁর একপ্রস্ত কথা হয়েছে। দিন পনেরোর স্লটে মাঝে মধ্যে তাঁকে আনতে পারে সিএবি। দিতে পারে অনুষ্টুপ-শ্রীবৎসের টেকনিক ঠিক করার দায়িত্ব। পরে মিডিয়াকে সিএবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও অ্যাকাডেমি গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত গৌতম দাশগুপ্ত বলছিলেন, “পাঁচ বছর আগে কল্পনাও করতে পারিনি এ জিনিস দাঁড় করাতে পারব।”

কিন্তু পাঁচ বছর লাগল কেন? কর্নাটকে অ্যাকাডেমি দশ থেকে বারো, অন্ধ্রে গোটা দশেক, কেরলে ছয়। সেখানে বাংলায় একমাত্র অ্যাকাডেমি করতে এত দিন কেন?

কোনও কোনও কর্তার সাফাই, ক্রিকেট-সংস্কৃতিই প্রধান খলনায়ক। অ্যাকাডেমির উপযোগিতা বোঝাতেই অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। খুচরো প্রশ্ন আরও উঠছে, গত চার দশকের ক্রিকেট-প্রশাসকদের এক মঞ্চে অভিনব সংবর্ধনার পরেও যা থাকছে। দুই প্রাক্তন বাংলা অধিনায়ককে খুঁতখুঁত করতে দেখা গেল ইন্ডোর নিয়ে। সেখানে মাত্র দু’টো স্ট্রিপ। বলা হল, জনা কুড়ির বেশি এই ইন্ডোর ব্যবহার সম্ভব নয়, আর মুম্বইয়ের বান্দ্রা কুর্লা কমপ্লেক্সের ইন্ডোরে টার্ফের সংখ্যা কিন্তু আট। আর এক প্রাক্তন ড্রেসিংরুমের পজিশন নিয়ে খুশি নন। সেটা পিচের সমান্তরাল, আধুনিক ক্রিকেটে যা নাকি দেখা যায় না। কেউ কেউ আবার বলে গেলেন, লক্ষ্মীরতন শুক্লদের দৈনন্দিন সমস্যাটা এর পরেও মিটল না। যেতে হলে তাঁদের সেই বেহাল সিএবি ইন্ডোরেই যেতে হবে। রোজ কল্যাণী কে আসবে। অশোক দিন্দার অনুপস্থিতি সর্বশেষ কাঁটা। নিমন্ত্রণ করা সত্ত্বেও তিনি আসেননি।

তা হলে কী দাঁড়াল? ভাঙা আঙুল নিয়ে ঋদ্ধিমান সাহা বলে গেলেন, “এমনিতে সব ভালই। শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়াবে, বোঝা যাবে শুরু হলে।”

সত্যি, সময়ের চেয়ে বড় বিচারক আর কে আছে!

অন্য বিষয়গুলি:

new gym cab kalyani rajarshi gangyopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE