সেঞ্চুরির পথে ঈশ্বরন। বুধবার ইডেনে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
অভিমন্যু ঈশ্বরনের বুধবারটা শুরু হয়েছিল আর পাঁচটা দিনের মতোই। সাতসকালে দু’গালে দুটো চড় খেয়ে!
অতিরিক্ত শাসনের উদাহরণ নয়, তরুণ ক্রিকেটারের সংস্কার। উদ্ভট শোনাতে পারে, কিন্তু অভিমন্যু প্রচণ্ড ভাবে বিশ্বাস করেন, দিনটা এ ভাবে শুরু হলে তাঁর ব্যাটে রান আসবেই!
অভিমন্যু ঈশ্বরনের বুধবারটা শেষ হল আর পাঁচটা দিনের চেয়ে একদম স্বতন্ত্র ভাবে। রঞ্জি ট্রফিতে জীবনের প্রথম তিন অঙ্কের স্কোরকে দেড়শোয় নিয়ে গিয়ে। সাত ঘণ্টারও বেশি সময় ক্রিজে লড়ে, ছ’পয়েন্টের স্বপ্নকে তাঁর টিমের কাছে প্রায় বাস্তব করে ফেলে অপরাজিত থেকে মাঠ ছেড়ে।
উনিশ বছর কয়েক দিনের জীবনে সম্ভবত সবচেয়ে রঙিন দিনটা কাটিয়ে উঠেও তাই অভিমন্যুর চোখে কেমন একটা ঘোর থেকে যায়। ড্রেসিংরুম থেকে বেরতে না বেরতেই চ্যানেলের বুম আর মিডিয়ার হাজারো প্রশ্নের সামনে পড়ে প্রথমটা একটু বিহ্বল। তার পর নিজেকে সামলে একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাওয়া। ইনিংস উৎসর্গ করে দেওয়া তাঁর দাদুকে, যিনি গত বছর রঞ্জি ম্যাচ চলাকালীন মারা গিয়েছিলেন। সলজ্জ ভাবে বলে ফেলা, প্রিয় ক্রিকেটার রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে তাঁর এক বার দেখা হলেও বেশি কথা বলার সুযোগ পাননি।
আর ছাত্র অভিমন্যুর গোটা দিনের ব্যাটিং দেখে মনে হল, দ্রাবিড়-ঘরানার দু’টো ব্যাপার তিনি আপ্রাণ আয়ত্ত করার চেষ্টা করছেন। এক, লুজ বল পেলে তবেই মারব। ঝুঁকিতে যাব না। উইকেটে থাকলে রান এমনিই আসবে। আর দুই, এরিয়াল শট কম খেলব। লক্ষ্মীপতি বালাজিরা তাঁকে প্রলোভন দেখিয়েছেন, কিন্তু একবারের জন্যও সুবিধে হয়নি। একবারের জন্যও মনঃসংযোগে ফাটল দেখা দেয়নি, হাফচান্স নেই একটাও। আর হ্যাঁ, দেড়শো রানে উনিশটা বাউন্ডারি আছে। কিন্তু একটাও ছয় নেই।
তারুণ্যের এমন মহাকাব্যে ময়দান যে মুগ্ধ থাকবে, স্বাভাবিক। বলা হচ্ছে, ঈশ্বর যেমন তাঁর জন্য প্রতিভা বরাদ্দ রেখেছেন, তেমনই আবার প্রাচুর্যও দিয়েছেন প্রতিভার সঠিক বিকাশে। ছোটবেলা থেকে বাবার তৈরি করা অ্যাকাডেমিতে প্র্যাকটিস করে এসেছেন অভিমন্যু, আট-আটটা কোচের কাছে ক্রিকেট-পাঠ নিয়েছেন। বাবা আর পি ঈশ্বরণ আবার এ দিন সগর্বে বলে গেলেন, চলতি রঞ্জি মরসুম শেষ হলে ছেলেকে রাহানে-উথাপ্পাদের ব্যাটিং-গুরু প্রবীণ আমরের কাছে নাকি পাঠাবেন। সেটা সম্ভব না হলে আমরেকেই প্রস্তাব দেবেন কলকাতায় এসে ছেলেকে তৈরি করার জন্য! ময়দান বলছে, ক্রিকেট-কৈশোরেই এমন সুযোগ-সুবিধে ক’জন পায়?
কিন্তু সুযোগ-সুবিধেতেই তো শুধু হয় না, প্রতিভা, দক্ষতাও লাগে। অভিমন্যুর সেটা আছে বলে এ বার তিনি অনূর্ধ্ব-উনিশ, তেইশ ও সিনিয়র বাংলা খেললেন। খিদে আছে বলেই, দিনের সাত-আট ঘণ্টা ক্রিকেট নিয়ে পড়ে থাকতে তাঁর অসুবিধে হয় না। যৌবনের চৌকাঠেও তাঁর মোবাইলে কোনও বান্ধবীর নম্বর সেভ থাকে না। আর পি ঈশ্বরণ নিঃসন্দেহে তাঁকে দশ বছর বয়স থেকে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে খেলিয়ে খেলিয়ে তৈরি করেছেন। কিন্তু আত্মজের ক্ষমতা না থাকলে তাতে কিছু লাভ হত না।
আর মনোজ তিওয়ারিও মুগ্ধ হতেন না।
দু’দিন মিলিয়ে যাঁর সঙ্গে দেড়শো রানের উপর পার্টনারশিপ করলেন অভিমন্যু, সেই মনোজ বলে গেলেন এত কম বয়সে এত দুর্দান্ত টেম্পারামেন্ট খুব কম দেখেছেন। মনোজ (৯৭) সেঞ্চুরির খুব কাছে এসে মুহূর্তের অমনোযোগে বোল্ড হলেন। ওটা না হলে সম্ভবত অভিমন্যুর সঙ্গে তাঁর প্রতাপ সামলাতেও রামনের টিমকে কাঁদতে হত। যাক, যা হয়নি, হয়নি। যা হয়েছে, সেটাও তো কম নয়। সৌরাশিস লাহিড়ী ৪৩ করে চারশো পার করে দিলেন, বাংলা দু’শোর উপরে লিড নিল, শেষে দিন্দাও নিলেন তামিলনাড়ুর একটা। বলতে গেলে তারা এখন ৮০-২, কারণ অধিনায়ক প্রসন্নর যা অবস্থা, ব্যাটিং সম্ভবত করতে পারবেন না। নামীদের মধ্যে পড়ে শুধু দীনেশ কার্তিক। তিনি চলে গেলে? দিন্দা বললেন, “বাকিদের দেখে নেব।”
বিপক্ষের চক্রব্যূহ ভেদ করার কাজটা অভিমন্যু করে গিয়েছেন। তামিলনাড়ু শেষ দিন আচমকা মহাভারতের কৌরববাহিনী না হয়ে উঠলেই হল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
তামিলনাড়ু ২৪৬-৯ ও ৮০-১ (ভরত ৩৮ ব্যাটিং)
বাংলা ৪৫৪-৯ ডিঃ (অভিমন্যু ১৫০ নটআউট, মনোজ ৯৭, সৌরাশিস ৪৩, মহম্মদ ২-১০১)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy