বজরং পুনিয়া। —ফাইল চিত্র
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দেখা না পেয়ে রাস্তায় নিজের ‘পদ্মশ্রী’ সম্মান ফেলে দিয়ে এসেছেন কুস্তিগির বজরং পুনিয়া। ভারতীয় কুস্তি সংস্থার নতুন সভাপতি সঞ্জয় সিংহের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসাবে এই কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু তার পরেও তাঁর পদ্ম সম্মান ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। কারণ, যে কেউ চাইলেই এই সম্মান ফিরিয়ে দিতে পারেন না। একমাত্র রাষ্ট্রপতির নির্দেশে সেটা হয়। তাই পদক ফেলে এলেও ‘পদ্মশ্রী’ হিসাবেই থাকতে হবে বজরংকে।
প্রতি বছর সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিদের পদ্ম সম্মান তুলে দেন রাষ্ট্রপতি। মেডেলের সঙ্গে একটি স্মারকপত্রও দেওয়া হয়। এই সম্মান কিছু নিয়ম রয়েছে। কেউ চাইলে সম্মান গ্রহন করার আগে তা প্রত্যাখ্যান করতে পারেন। কিন্তু এক বার সম্মান গ্রহন করার পরে তা ফিরিয়ে দেওয়া যায় না। যদি কেউ সেই পদক কোথাও ফেলেও দেন তার পরেও পদ্ম সম্মান প্রাপকদের তালিকায় তাঁর নাম থেকে যায়। সেটা মুছে দেওয়া যায় না।
একমাত্র রাষ্ট্রপতি চাইলে কারও পদ্ম সম্মান ফিরিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু ভারতের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত এই ঘটনা হয়নি। কারণ, কাউকে এই সম্মান দেওয়ার আগে সব কিছু ভাল করে যাচাই করে নেওয়া হয়। তার পরে সম্মান ফিরিয়ে নেওয়ার অর্থ, নিজেরাই নিজেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলা। তাই বজরংয়ের ক্ষেত্রেও সম্মান ফিরিয়ে নেওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই। তিনি চাইলেও তাঁর নামের সামনে থেকে ‘পদ্মশ্রী’ সরিয়ে ফেলতে পারবেন না।
বৃহস্পতিবার ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সঞ্জয়। তিনি যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত কুস্তিকর্তা ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তার পরেই প্রতিবাদে কুস্তি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সাক্ষী মালিক। সেই সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন অলিম্পিক্স পদকজয়ী কুস্তিগির। আর এক পদকজয়ী কুস্তিগির বজরং ‘পদ্মশ্রী’ ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেন। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে দেখা করতে সংসদে যান তিনি। কিন্তু রাস্তাতেই পুলিশ তাঁকে আটকায়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে না পেরে সংসদের সামনের রাস্তা কর্তব্য পথে (রাজপথ) ফুটপাতের উপর নিজের পদক ও স্মারকপত্র ফেলে দেন বজরং। সেই পদক ও স্মারকপত্র তুলে নেয় দিল্লি পুলিশ।
বজরং পরে সাংবাদিকদের বলেন, “আগেই বলেছিলাম, আমি আমার মেয়ে এবং বোনেদের বাঁচানোর জন্য লড়াই করছি। ওদের ন্যায়বিচার এখনও দিতে পারিনি। তাই আমার মনে হয় আর এই সম্মানের যোগ্য নই আমি। এখানে এসেছি নিজের পুরস্কার ফিরিয়ে দিতে। তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারিনি কারণ আগে থেকে কিছু জানিয়ে আসিনি। প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ত সূচি রয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রীকে যে চিঠি লিখেছি, তার উপরেই সম্মানটা রেখে দিচ্ছি। এই পদক আর বাড়ি নিয়ে যেতে চাই না।”
শুক্রবার বিকালে বজরং সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে জানান যে, তিনি পদ্মশ্রী ফিরিয়ে দিচ্ছেন। বজরং তাঁর বার্তায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে লেখেন, “আমি আমার পদ্মশ্রী সম্মান ফিরিয়ে দিচ্ছি। আপনি নিশ্চয়ই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত, তবুও আপনাকে লিখতে বাধ্য হচ্ছি। কারণ দেশের কুস্তিগিরদের সঙ্গে এমন অনেক কিছু ঘটছে যার প্রতি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করা জরুরি।”
বজরং তাঁর চিঠিতে এই বছর জানুয়ারি থেকে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ তাঁরা শুরু করেছিলেন, সেটার উল্লেখ করেন। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ছিল কুস্তিগিরদের। দিল্লির যন্তর মন্তরের সামনে ধর্না দিয়েছিলেন বজরংরা। তিনি বলেন, “আমরা প্রতিবাদ বন্ধ করেছিলাম, কারণ সরকার আমাদের কথা দিয়েছিল ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু তিন মাস কেটে গেলেও এফআইআর হয়নি। আমরা আবার প্রতিবাদ শুরু করি। কিন্তু জানুয়ারিতে ১৯টি অভিযোগ থাকলেও তা কমে আসে সাতে। এটা প্রমাণ করে যে ব্রিজভূষণ কতটা প্রভাবশালী। ১২ জন কুস্তিগির প্রতিবাদ করা বন্ধ করে দেন।”
এ দিকে, রিও অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ জয়ী সাক্ষী বৃহস্পতিবার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমাকে আর কেউ কখনও কুস্তি লড়তে দেখবে না।” তাঁর পাশে ছিলেন বজরং পুনিয়া। তিনি বলেন, “আমরা আর কুস্তি লড়তে পারব কি না জানি না। রাজনীতি কী ভাবে কাজ করে জানি না।”
(ভ্রম সংশোধন: কুস্তিগির বজরং পুনিয়া তাঁর পদ্মশ্রী সম্মান প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সামনের রাস্তায় ফেলে দিয়ে এসেছেন বলে প্রথমে লেখা হয়েছিল। কিন্তু তিনি এই পদক সংসদ ভবনের সামনের রাস্তা কর্তব্য পথে ফেলে দিয়ে এসেছেন। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy