উদ্যাপন: শেষ মুহূর্তে গোলের পরে উল্লাস নেমারের। দলের হয়ে দ্বিতীয় গোল করে এ দিনই বিশ্বকাপে খাতা খুললেন ব্রাজিলের তারকা স্ট্রাইকার। শুক্রবার সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামে । ছবি: গেটি ইমেজেস
ব্রাজিল ২ : কোস্টা রিকা ০
খেলা শেষ হওয়ার পরে দেখলাম, মাটিতে হাঁটু গেড়ে নেমার দ্য সিলভা স্যান্টোস (জুনিয়র) দু’হাতে মুখ ঢেকে কাঁদছেন। গোলের পর গোল নষ্ট করতে করতে ব্রাজিলীয় তারকা এতটাই চাপে পড়ে গিয়েছিলেন, হয়তো সেখান থেকেই মুক্তির কান্না!
লিয়োনেল মেসির আর্জেন্টিনা চূড়ান্ত ব্যর্থ হওয়ার পর ব্রাজিল কেমন খেলে, সেটা দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। শুক্রবার বিকেলের ব্রাজিল কিন্তু খেলল ব্রাজিলের মতোই। পেলে, রোনাল্ডো, রোনাল্ডিনহোরা যে আলো ছড়িয়ে গিয়েছেন, সাম্বার দেশের সেই ফুটবল-সৌন্দর্য তিতের হাতে অক্ষত। পাসের বৈচিত্র, নিখুঁত পাস, ভাল ড্রিবল, উইং প্লে, ডাউন দ্য মিডল দৌড়ে বিপক্ষকে ছিন্নভিন্ন করা—
এ সবের জন্যই তো ব্রাজিলের খেলা দেখা। সুইৎজারল্যান্ড ম্যাচটার পরে অনেক উন্নতি করেছেন নেমাররা। আমার ধারণা, বিশ্বকাপ যত এগোবে, তিতের টিমের খেলা আরও খুলবে। খেতাবের যুদ্ধে ওরা থাকবেই।
সংযুক্ত সময়ে দু’টো গোল থেকেই স্পষ্ট, ব্রাজিলের জেতার খিদেটা শেষ মিনিট পর্যন্ত ছিল। খেতাবের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে মাঠে নামা অনেক দলই ঘাবড়ে গিয়ে নিজেদের খেলা ভুলে যায়। গোল না পেলে তো পাহাড়প্রমাণ চাপ সব দলকেই মানসিক ভাবে কোণঠাসা করে ফেলে। সে জন্যই আর্জেন্টিনা-জার্মানির এই দুর্দশা এ বার। তিতের ব্রাজিল তা নয়। কোস্টা রিকার সাত-আট জন নিজেদের বক্সে দাঁড়িয়ে। সেই চক্রব্যূহ ভেদ করে গোল করার দক্ষতা বা রণনীতি নেমার-মার্সেলোদের আছে। ফেলিপে কুটিনহো এবং নেমারের গোল, দু’টোই নাছোড় মনোভাবের ফসল। মেসি বা থোমাস মুলারের মধ্যে এই জেদ এখনও দেখছি না। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পর নেমারের মধ্যে দেখলাম। দেশের জার্সিতে ছাপান্নতম গোল হল নেমারের।
রোনাল্ডো বা রোনাল্ডিনহোর সঙ্গে নেমারের তুলনাটা ঠিক হবে না। নেমার ভাল স্কোরার এবং স্কিমার। গোল করতে পারেন, পাস দিতে পারেন। নেতৃত্ব দিতে পারেন সামনে থেকে। কমপ্লিট ফুটবলার। তবু এই ব্রাজিল নেমার-নির্ভর নয়। কুটিনহো, পাওলিনহো, জেসুসের মতো বেশ কিছু ম্যাচ-জেতানো ফুটবলার আছে।
আবেগ: বিশ্বকাপে গোল করেও কেঁদে ফেললেন নেমার। ছবি: রয়টার্স
কোস্টা রিকা দলটা আমাদের সময়ের স্পোর্টিং ইউনিয়ন বা কুমারটুলির মতো। যারা নিজেদের গোলকিপারের সামনে পায়ের জঙ্গল তৈরি করে গোল আটকানোর চেষ্টা করত। এ দিন তা-ই করতে দেখলাম অস্কার রামিরেজের দলকে। এক জন স্ট্রাইকারকে সামনে রেখে প্রতিপক্ষকে থামিয়ে রাখার কৌশল। এটা কখনও কাজে লাগে, কখনও লাগে না। ব্রাজিল যে ভাবে অবিরাম আক্রমণ করছিল, জানতাম কোস্টা রিকা ভেঙে পড়বেই। সেটাই হল। নেমারদের আক্রমণ কতটা প্রবল ছিল, একটা পরিসংখ্যানেই বোঝা যাবে। ম্যাচে ব্রাজিলের বল পজেশন ৬৭ শতাংশ। পাওলিনহোরা গোলমুখী শট করেছেন ২৩টি। কোস্টা রিকা মাত্র ৪টি। ৯ বার কুটিনহো, গ্যাব্রিয়েল জেসুসদের শট গিয়েছে কোস্টা রিকা গোলকিপার কেলর নাভাসের হাতে। একটা শটও ধরতে হয়নি ব্রাজিল গোলকিপার আলিসন বেকারকে। এতেই স্পষ্ট, ব্রাজিল খেলেছে একতরফা।
তিতের দলের প্রধান শক্তি উইং প্লে আর মাঝমাঠ দখলে রাখার মতো স্কিল-সমৃদ্ধ একাধিক পাসার। দু’টো উইং দিয়ে নেমার, পাওলিনহো, কুটিনহোদের হঠাৎ কাট করে ঢুকে পড়ার দক্ষতা। মার্সেলোর মতো সাইড ব্যাকের হঠাৎ উঠে গিয়ে আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়ানো। রক্ষণ থেকে বল তুলে নিয়ে গিয়ে ফুলের মতো ছড়িয়ে পড়া। চাপের মুখেও মাঠ বড় করে কোস্টা রিকার রক্ষণে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করে গিয়েছেন নেমাররা। বদলি হিসাবে নেমে ডি কোস্তা বা রবের্তো ফিরমিনোরা যা খেললেন তাতে বলাই যায়, তিতের দলের রিজার্ভ বেঞ্চও যথেষ্ট শক্তিধর। এর ফলে গোলের প্রচুর সুযোগ পেয়েছে ব্রাজিল। নেমারের হেড পোস্টে লেগেছে। রিয়াল মাদ্রিদ গোলকিপার নাভাস অন্তত তিনটি নিশ্চিত গোল রুখেছেন। না হলে গোলের সংখ্যা বাড়ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy