নতুন অ্যাকশনে নারিন
• ক্রিকেট নয়, টেলিপ্যাথি
গৌতম গম্ভীর আর রবিন উথাপ্পার ওপেনিং জুটিকে দেখে এটাই মনে হচ্ছে। এত দিন ধরে একসঙ্গে খেলতে খেলতে ওদের মধ্যে এখন আর কোনও কথাবার্তা বলতে হয় না। উথাপ্পা জানে, গম্ভীর কী করবে। গম্ভীর জানে উথাপ্পারটা। এই যে টানা চারটে ম্যাচ ধরে ওদের ওপেনিং জুটিকে নড়াতে বিপক্ষ হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে, কেন জানেন? কারণ, ওরা রিস্ক ফ্রি ক্রিকেট খেলছে। পাওয়ার প্লে-তে ঝুঁকি নেওয়ার ব্যাপারটাই তুলে দিয়েছে। প্রথম ছ’ওভারে গম্ভীর বা উথাপ্পাকে দেখবেন না, ঝুঁকি নিয়ে কোনও শট খেলতে। সব ক্রিকেটীয় শট খেলছে। বাউন্ডারির দিকে বেশি না গিয়ে চলে যাচ্ছে সিঙ্গলস বা টু’জ-এ। ছ’ওভারে ঠিক চল্লিশ তুলে দিচ্ছে আবার উইকেটও পড়ছে না। এ বারের আইপিএলে ডট বল সবচেয়ে কম খেলছে গম্ভীর-উথাপ্পা জুটি। আর একদমই ঝুঁকির রাস্তায় না যাওয়ায় বিপক্ষ বোলাররা মোটামুটি দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে ওদের আউট করা নিয়ে।
• ক্যাপ্টেন গম্ভীর
এক কথায় দুর্ধর্ষ অধিনায়কত্ব করছে। নিজে টানা রান করছে সেটা শুধু নয়, টিমকে খুব ভাল নিয়ন্ত্রণও করছে। সেই নিলাম থেকে দেখছি। টিম কেমন হবে থেকে শুরু করে মাঠে কোন বোলারকে কখন আনবে— সব কিছু যেন নিখুঁত ছকে এগোচ্ছে। শুধু মাঠে কেমন নেতৃত্ব দিল তাতে সব হয় না। মাঠের বাইরে ক্যাপ্টেন কী করছে না করছে, সেগুলোও টিমে প্রভাব ফেলে। হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে গৌতম নিজে ৯০ করল। সঞ্চালক গম্ভীরকে ওর পারফরম্যান্স নিয়ে জিজ্ঞেস করায় কিন্তু বলে দিল যে, ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে ও ভাবে না। ভাবে টিম পারফরম্যান্স নিয়ে। খুলে-আম এমন বলে দিলে টিমের সবচেয়ে তরুণ ক্রিকেটারও কিন্তু জেনে গেল যে, ক্যাপ্টেন ম্যাচের সেরা হয়েও পুরো কৃতিত্ব একা নিল না। তা ছাড়া গম্ভীরকে এ বার খুব রিল্যাক্সডও লাগছে। যা আগে দেখতাম না।
• নারিনের প্রত্যাবর্তন
সত্যিই দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন। নারিন আগের মতোই মারাত্মক কি না, সেটা নিয়ে আমি এখনই বলতে যাব না। কিন্তু এটা বলব যে, ও চলে আসায় কেকেআরকে আরও বেশি অপ্রতিরোধ্য মনে হচ্ছে। গম্ভীর এখন ওকে খুব বুদ্ধি করে ব্যবহার করছে আসলে। আগে নারিন আসত পাওয়ার প্লে-তে, ডেথে। এখন গম্ভীর ওকে ডেথে আনছে না। তুলনামূলক সহজ মাঝের ওভারগুলো করিয়ে ওর আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনছে আস্তে আস্তে। আসলে নারিন যতক্ষণ চাপের পরিস্থিতিতে না পড়ছে, ও আগের মতোই আছে বলা যাবে না। কিন্তু এটা অবশ্যই বলা যাবে যে, নারিনের অ্যাকশন আগের চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে। নারিন প্লাস কেকেআর কিন্তু মারাত্মক ভোগাবে বাকিদের।
• মজবুত রিজার্ভ বেঞ্চ
আমি বলব, আইপিএলে অনেক টিমের বিরুদ্ধে কেকেআর জিতে গিয়েছে নিলামে। লোকে শুধু প্রথম এগারো নিয়ে ভাবে। সেটা যাতে মজবুত হয়, তা নিয়ে চিন্তা করে। কেকেআর সেখানে নিঃশব্দে দু’টো এগারো তৈরি রেখে দিয়েছে। একটা খেলবে। একটা খেলবে না। কিন্তু দরকার পড়লে এমন সব পরিবর্ত নামবে যে, নিয়মিতদের অভাব সে ভাবে টের পাওয়া যাবে না। আজ চাওলা না পারলে কিন্তু একটা কুলদীপ যাদব নেমে যাবে। উমেশ যাদবের চোট থাকলে জয়দেব উনাদকট খেলে দেবে। নারিন না পারলে দেখা যাবে ব্র্যাড হগকে। মর্নি না পারলে এত দিন যেমন ছিল জন হেস্টিংস। আমি নিশ্চিত, হেস্টিংয়ের জায়গায় এ বার চলে আসবে নতুন কোনও ভাল বিদেশি পেসার। এত দুর্ধর্ষ দু’টো টিম আর কোন ফ্র্যাঞ্চাইজির আছে?
• নেপথ্যের কেকেআর
আবারও দু’টো টিম। একটা কেকেআর মাঠে দু’মাস খেলে। অন্যটা গোটা বছর ধরে খেলে। কেকেআর ম্যানেজমেন্টের কথা বলতে চাইছি। শুধু যে গত কয়েক বছর ধরে একটা সেট টিম ওরা ধরে রেখেছে তা নয়, একটা পরিবারের মতো ধরে রেখেছে। সুনীল নারিনের জন্য কেকেআর ম্যানেজমেন্ট যা দৌড়োদৌড়ি করেছে, ক্যারিবিয়ান বোর্ডও করেনি। আমি নিশ্চিত, কাল যদি কুলদীপ যাদবের কোনও সমস্যা হয় নাইট ম্যানেজমেন্ট একই ভাবে ছুটবে। এতে প্লেয়ারদের নিরাপত্তা প্রচুর, প্রচুর বেড়ে যায়। সে জেনে যায়, আমার খারাপ সময়ে টিম আমাকে ছুড়ে ফেলে দেবে না। ইউসুফ পাঠানকেই দেখুন। প্রত্যেক ম্যাচে বড় রান করছে এমন নয়। প্রত্যেক আইপিএলে দু’টো-তিনটে ইনিংস হয়তো খেলল। কিন্তু কেকেআর ম্যানেজমেন্টকে কোনও দিন দেখিনি তা নিয়ে অভিযোগ করতে। একটা চ্যাম্পিয়ন টিম শুধু মাঠে তৈরি হয় না, মাঠের বাইরের পরিবেশটাও সমান লাগে। কেকেআর ওখানেও চ্যাম্পিয়ন।
আরও পড়ুন:
আইপিএলের সময়সূচি
আইপিএলের পয়েন্ট টেবল
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy