সনি নর্ডিকে টক্কর দেওয়ার সেরা মঞ্চ হিসাবে রবিবারের ডার্বিকেই বেছে নিচ্ছেন ওয়েডসন আনসেলমে।
কলকাতায় আসার পর থেকেই শুনেছেন তাঁর বন্ধুর গৌরবগাথা। সেটা মুছে দেওয়ার জন্য শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘায় মরিয়া হয়ে নামতে চাইছেন ইতিমধ্যেই লাল-হলুদ জার্সিতে পাঁচ গোল করে ফেলা ওয়েডসন। বলে দিলেন, ‘‘ডার্বিতে সনি আমার বিপক্ষে থাকবে। আর নিজের টিমকে জেতাতে হলে ওর থেকে ভাল পারফরম্যান্স তো আমাকে করতেই হবে।’’ ইঙ্গিতে পরিষ্কার, হাইতির জাতীয় দলে তাঁর সতীর্থ ও প্রিয় বন্ধু এখন কলকাতা ডার্বিতে তাঁর সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে হাজির।
মঙ্গলবার সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে প্র্যাকটিস শেষে বাড়ি ফেরার আগে লাল-হলুদ জনতাকে আই লিগ জেতার স্বপ্ন দেখানো নতুন তারকা বলে গেলেন ‘‘মাঠের বাইরে সনি আমার প্রিয় বন্ধু। কিন্তু ম্যাচের নব্বই মিনিট ও আমার শত্রু। আর পাঁচটা বিপক্ষ টিমের ফুটবলারের মতোই।’’ কথাগুলো বলার পর একটু হেসে তাঁর আরও মন্তব্য ‘‘সনিও নিশ্চয়ই এখন একই কথা বলছে!’’
এ বারের ডার্বিতে দুই হাইতি তারকার লড়াই দেখার জন্য মুখিয়ে রয়েছে ময়দান। ১২ ফেব্রুয়ারির চিরকালীন যুদ্ধকে অনেকেই সনি বনাম ওয়েডসনের সম্মান রক্ষার লড়াইও বলতে শুরু করেছেন। আপনিও কি একই কথা মনে করেন? প্রশ্ন শুনেই বেশ গম্ভীর হয়ে গেলেন ওয়েডসন। বললেন, ‘‘কে বলছে এ সব? আসল লড়াইটা দুই টিমের মধ্যে।’’ কথা বলার মাঝেই অবিনাশ রুইদাসের সঙ্গে মজা করতে শুরু করলেন ইস্টবেঙ্গলের ওয়েডসন। ড্রেসিংরুমে প্রায় সময়ই রফিক, অবিনাশদের মতো জুনিয়রদের সঙ্গে হইহই করেন, মজা করেন। সে জন্য লাল-হলুদের জুনিয়র ব্রিগেডের কাছে ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি।
আই লিগের শুরুর দিকে ওয়েডসনের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কয়েকটা ম্যাচে গোলের সুযোগ নষ্টের পর সমালোচনাও হয়েছে তাঁকে ঘিরে। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে ততই নিজের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন সনির দেশের ফুটবলার। তাঁকে অনেক ঝকঝকেও দেখাচ্ছে। ওয়েডসনের প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এখন তাই ইস্টবেঙ্গল কোচ ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের গলাতেও উচ্ছ্বাস। ব্রিটিশ কোচ বলছিলেন, ‘‘প্রথম প্রথম সবাইকেই একটু সময় দিতে হয়। যত সময় যাচ্ছে ওয়েডসন নিজের ছন্দে ফিরছে। আশা করি এর পরের ম্যাচগুলো ও আরও ভাল খেলবে।’’
ভারতে আসার আগে ডার্বি সম্পর্কে বিস্তারিত সনির থেকেই জেনেছিলেন ওয়েডসন। ভারতীয় ফুটবল সম্পর্কেও একটা ধারণা বন্ধুকে দিয়েছিলেন সনিই। তা ছাড়া বাংলাদেশের শেখ জামাল ধানমন্ডির হয়ে আইএফএ শিল্ড খেলতে কলকাতায় এসেছিলেন ওয়েডসন। পুরনো স্মৃতি টেনে এনে এ দিন তিনি বলছিলেন, ‘‘শিল্ড খেলতে এসে কলকাতার ফুটবল উত্তেজনা দেখেছিলাম। ভাল লেগেছিল। তার পর সনি এখানে খেলতে এল। ওর থেকেও অনেক কিছু জানি। ডার্বির গল্পও তো ওর থেকেই।’’
কথাগুলো বলার সময় ওয়েডসনকে বেশ আবেগপ্রবণ বলে মনে হল। ঠিক এর পরই পেশাদারিত্বের বর্মে নিজেকে মুড়ে ফেললেন তিনি। যেন হঠাৎ করেই একটু বেশি সতর্ক হয়ে পড়লেন। প্রসঙ্গ পাল্টে বললেন, ‘‘আমার কাছে এই মুহূর্তে আই লিগের সব ম্যাচে জয় পাওয়াটা আসল। ডার্বিও সে রকমই তো একটা ম্যাচ। টিমকে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন করতে হলে আগের ছ’টা ম্যাচের মতো এটাও জিততে হবে।’’ আলাদা কোনও চাপ নেই বলছেন? প্রশ্ন শুনে হেসে ফেললেন ওয়েডসন। ‘‘চাপ নিয়ে নিজের সেরাটা দেওয়া যায় না। আমি কোনও ম্যাচের আগেই চাপ নিই না। হঠাৎ করে এই ম্যাচের জন্যও চাপ নেব কেন? লিগের আর একটা ম্যাচ হিসাবেই এটা দেখছি।’’
মুখে ওয়েডসন যাই বলুন না কেন, ডার্বি নিয়ে তিনি যে ভিতরে ভিতরে রীতিমতো তেতে রয়েছেন, সেটা কিছুক্ষণ কথা বলার পরই বোঝা গেল। যতই তিনি সতর্ক হন না কেন, সুযোগ পেলেই আবেগগুলো ঠিকরে বেরিয়ে আসছিল। ‘‘ডার্বিতে গোল করতে পারলে তৃপ্ত হব,’’ বলতে বলতে বাড়ির পথে ধরলেন লাল-হলুদ জনতার নতুন হার্টথ্রব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy