উল্লাস। কীসের উল্লাস?
বিশ্বের এক নম্বর দলকে তিন দিনেরও কম সময়ে শেষ করে দেওয়ার উল্লাস।
কিন্তু তার সময় কোথায়? সবাই তো ঘরমুখো। দিওয়ালি উদযাপনের জন্য। মাঠ থেকে ফিরেই গোছগাছ শুরু করে দিলেন বাড়ি যাবেন বলে। কয়েক জনের অবশ্য তেমন তাড়া ছিল না। কারণ, তাঁদের যাওয়ার উপায় নেই।
এমনিতেই মোহালি টেস্টের প্রথম রাতেই ভারতীয় দলের ক্রিকেটাররা শপথ নিয়েছিলেন রবিবারের মধ্যে ম্যাচ শেষ করে যে যার বাড়ি চলে যাবেন দিওয়ালির উৎসবে মাততে। বুধবার পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটিয়ে পরের দিনই সকালে বেঙ্গালুরুতে পৌঁছে যাবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ীই জেতা এবং কাজ দুটোই হচ্ছে। ভারতীয় ক্রিকেট সংসারে তাই এখন সবাই খুশি।
জন্মদিনে শুরু হওয়া ঘরের মাঠে ক্যাপ্টেন হিসেবে তাঁর প্রথম টেস্ট নিজের পারফরম্যান্সের দিক থেকে ভাল না গেলেও দলের দাপুটে জয় যে যথেষ্ট তৃপ্তি দিয়েছে তাঁকে, তা ক্যাপ্টেন কোহলির শরীরী ভাষাতেই স্পষ্ট। প্রথম দিন যে মনমরা ভাবটা ছিল, তা আজ একেবারেই উধাও। সতীর্থদের সঙ্গে টেস্ট জয়ের সেলিব্রেশন মাঠেই বেশিরভাগটুকু সেরে নিলেন। বাকিটা ড্রেসিংরুমে। বিপক্ষ ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত মেলানোর রীতি পালন করতেও ভুললেন না।
ড্রেসিংরুমের সামনে জড়ো হওয়া ভক্তদের সেলফি, সইয়ের আবদারও মেটালেন হাসিমুখে।
এ পর্যন্ত সব ঠিকই চলছিল। কিন্তু যখন সাংবাদিকদের সামনে বাস্তব উপলব্ধি করার সময় এল, তখনই ম্যাচের আগের দিনের মতো চোয়াল শক্ত হয়ে গেল তাঁর। আগেই বলেছিলেন, ‘‘সাংবাদিক বৈঠকে বসে আমি কখনও মিথ্যা বলি না। যেটা মনের মধ্যে থাকে সেটাই সোজাসুজি বলে দিই।’’ এ দিন সেগুলোই বললেন।
যতই দক্ষিণ আফ্রিকাকে তিন দিনে কাত করে দিয়ে খুশি হন, নিজের দলের সমস্যার দুশ্চিন্তা যে তাঁকে চাপে রেখেছে, তা আর লুকিয়ে রাখলেন না। বলে দিলেন, ‘‘স্পিনের বিরুদ্ধে আমাদের ছেলেরা যে খুব একটা ভাল খেলছে না, তা জানি। (শ্রীলঙ্কার) গলেও তো এমনই হয়েছিল। একটাও ভাল পার্টনারশিপ গড়তে পারছি না। ঘনঘন উইকেট পড়ছে। এই ব্যাপারটার দিকে একটু নজর দিতেই হবে।’’
এ দিন ভারতের নির্ভরযোগ্য ছয় ব্যাটসম্যান বিপক্ষের স্পিনে আউট হয়ে গিয়েছেন। রাহানে, পুজারা, মুরলী বিজয়ের মতো ব্যাটসম্যানরা স্পিনের কাছে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। কোহলি নিজেও দ্বিতীয় ইনিংসে স্পিনেই আউট হলেন।
পরের টেস্টগুলোতেও যদি এমন ব্যাটিং-দৈন্যদশা চলতে থাকে, তা হলে যে সমস্যা বাড়বে, তা বুঝতে পারছেন কোহলি। সে জন্যই বোধহয় কিছুটা চিন্তিত দেখাল ভারত অধিনায়ককে। ব্যাখ্যাও দিয়ে বললেন, ‘‘কারণ তো অবশ্যই আছে। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের স্পিনের মোকাবিলা করার ব্যাপারে সুনাম রয়েছে। এটাই হয়তো আমাদের অনেককে চাপে রাখছে। কিন্তু আসল কারণটা হল, মুরলী, পুজারা, জাডেজা ছাড়া দলের কেউই সম্প্রতি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেনি। দু’বছর ধরে ঘরের মাঠে টার্নিং উইকেটে টেস্ট ক্রিকেটও খেলিনি আমরা। বিদেশে খেলতে হয়েছে বেশিরভাগ সময়ই। সে জন্যই এখন হয়তো অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু এটা বোধহয় দ্রুতই ঠিক হয়ে যাবে।’’
তা সত্ত্বেও সব টেস্টে টার্নিং উইকেটই চাইছেন? কোহলি বললেন, ‘‘ইংল্যান্ডে আমরা হারলে তো কেউ উইকেটের কথা বলে না। ওরা নিজেরাই যেখানে বলছে, ওরা স্পিনের বিরুদ্ধে ভাল ব্যাট করতে পারেনি, সেখানে অযথা উইকেটকে দোষ দিচ্ছেন কেন?’’ একটু আগেই দক্ষিণ আফ্রিকা কোচ হাসিম আমলা স্বীকার করে গিয়েছেন, ‘‘আমাদের ব্যাটসম্যানরা ভারতীয় স্পিনারদের বিরুদ্ধে ভাল ব্যাট করতে পারেনি বলেই আমরা হারলাম। না হলে দুশো রানটা টার্গেট হিসেবে কোনও পরিস্থিতিতেই খারাপ নয়। এটা তাড়া করে জেতাই যেত। আমাদের ব্যাটিং ব্যর্থতাতেই তা সম্ভব হয়নি।’’
তবে এ বার থেকে যে এ রকমই উইকেট ঘরের মাঠে বানানোর পরামর্শ দেবেন বোর্ডকে, তা সাফ জানিয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘আমাদের দেশে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো ফাস্ট উইকেট বানাতে গিয়ে তা পাটা হয়ে যায়। কিন্তু এ রকম উইকেট বানিয়ে যদি রেজাল্ট পাওয়া যায়, তা হলে নিশ্চয়ই সে রকম বানানো হবে। তবে মূলত টার্নিং ট্র্যাকেই এখন থেকে ঘরোয়া সিরিজ খেলব আমরা।’’
কিন্তু তাতে যে নিজেরাও ঝামেলায় পড়তে পারেন, সেটাও তো ভাবাচ্ছে ভারত অধিনায়ককে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy