সিরিজে এখনও খেলা বাকি, কোহালির লক্ষ্য সে দিকেই। ছবি: এপি।
ট্রেন্ট ব্রিজে প্রত্যাবর্তন ঘটানো জয়ের পরেও দারুণ কোনও উৎসবে মেতে উঠতে দেখা গেল না ভারতীয় দলকে? এমনকি, খুব বেশি ক্রিকেটারকে স্মারক হিসেবে স্টাম্পও নিতে দেখা গেল না। ওপেনার কে এল রাহুল একটা স্টাম্প তুলে নিয়েছিলেন। কোহালিকে দেখে সেটা ক্যাপ্টেনের হাতে তুলে দিতে গেলেন। কিন্তু কোহালি তা ফিরিয়ে দিলেন।
ইংল্যান্ডের শেষ উইকেট নিলেন অশ্বিন। ম্যাচে ভারতের হয়ে নেওয়া একমাত্র স্পিনারের উইকেট। কিন্তু জয়ের মুহূর্তে যে রকম গর্জন-তর্জন দেখা যায়, তার কিছুই দেখা গেল না ভারতীয় শিবিরে। কোহালির মতো আগ্রাসী চরিত্রকেও দেখা গেল বেশ নিয়ন্ত্রণে রাখলেন আবেগকে। ব্যাপারটা কী? এই সংযত প্রতিক্রিয়ার কারণ কী? ভারতীয় শিবিরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সিরিজে এখনও খেলা বাকি বলেই সকলে ধরে নিচ্ছেন। তাঁদের মনে হচ্ছে, টেস্ট ম্যাচ জেতা নয়, তাঁরা সিরিজ জিতে তবেই একমাত্র উৎসব করতে পারেন। সেই কারণেই ট্রেন্ট ব্রিজে জিতে খুব সংযত আচরণ করতে দেখা গিয়েছে কোহালির দলকে।
অবিশ্বাস্য শোনাতে পারে কিন্তু এটাই সত্য যে, জেতার পরেও বিজয়োৎসবের আয়োজন করা হয়নি দলের পক্ষ থেকে। রাতে দলের ‘গেট টুগেদার’ হল। কিন্তু সেটাকে বিজয়োৎসব বলতে ঘোর অনীহা সকলের। এক জন বললেন, ‘‘বিজয়োৎসব আবার কী? ২-১ হয়েছে সবে। সিরিজের অনেক খেলা এখনও অনেক বাকি। আমরা এই মুহূর্তটাকে উপভোগ করব ঠিকই কিন্তু খুব বেশি আবেগে ভাসারও দরকার নেই।’’
নায়ক: ম্যাচের সেরার পুরস্কার হাতে বিরাট। ছবি: গেটি ইমেজেস।
২-১ করে ফেলার পরে অনেকেরই মনে হচ্ছে, দারুণ জমজমাট সিরিজ অপেক্ষা করছে বাকি দুই টেস্টের জন্য। সাউদাম্পটন এবং ওভালে যদি জিততে পারেন কোহালিরা, অনন্য এক কীর্তি স্পর্শ করে ফেলবেন। ক্রিকেটের ইতিহাসে একমাত্র ডন ব্র্যাডম্যানের অস্ট্রেলিয়া ১৯৩৬-৩৭ মরসুমে দুই টেস্টে হেরে পিছিয়ে পড়ার পরে ৩-২ জিতেছিল। কোহালিরা এই সিরিজ জিতলে সেই কীর্তির স্মৃতি ফিরিয়ে আনবেন। সত্যিই কি সেটা করে দেখানো সম্ভব? শাস্ত্রীকে জিজ্ঞেস করায় বলে গেলেন, ‘‘১৯৩৬-৩৭ সালে তো আমি জন্মাইনি। অত দূরে পিছিয়ে গিয়ে লাভ নেই। আমাদের দল সব সময় বর্তমানে থাকতে চায়। ০-২ থেকে ১-২ হয়েছে। এ বার আমাদের লক্ষ্য সাউদাম্পটন। অবশ্যই আমরা বিশ্বাস করি, ২-২ করতে পারি। আগে সেটা করি, তার পরে না হয় দেখা যাবে।’’
একই কথা শোনা গেল কোহালির মুখেও। ম্যাচের সেরা হয়ে ভারত অধিনায়ক বলে গেলেন, ‘‘আমরা যদি বিশ্বাসই না করি যে, সিরিজ জেতা আমাদের পক্ষে সম্ভব তা হলে এই টেস্টেও জিততে পারতাম না। অনেকেই হয়তো আশা ছেড়ে দিত লর্ডসের হারের পরে। কিন্তু আমরা জানতাম, ব্যবধানটা খুব ছোট। নিজেদের শৃঙ্খলা দেখানোর ব্যাপার ছিল।’’
কোহালি আরও বলে গেলেন, ‘‘বাইরের পৃথিবীতে অনেকেই হয়তো আমাদের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু দল হিসেবে আমরা কখনও বাইরের জগতের দিকে তাকাই না। দলের মধ্যে আমরা জানতাম, আমাদের পক্ষে ফিরে আসা সম্ভব। নিজেদের প্রতি বিশ্বাস থাকাটাই আসল।’’ চার বছর আগে ইংল্যান্ডে এসে রান পাননি কোহালি। তা নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে বললেন, ‘‘২০১৪-তে কী হয়েছে, তা নিয়ে আমি বেশি ভাবিনি। এ বারে ইংল্যান্ডে আসার পর থেকে শুধু চেষ্টা করে গিয়েছি, কী ভাবে দলের উপকারে আসতে পারি। এ বারে যে আমি এখনও পর্যন্ত রান পাচ্ছি আর দলের কাজে আসতে পারছি, তার জন্য খুশি।’’
উচ্ছ্বাস: ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্টে ২০৩ রানে জেতার পরে বিরাট কোহালির উৎসব। (বাঁ দিকে) গ্যালারিতে উল্লাস অনুষ্কার।
পাঁচ টেস্টের সিরিজে ইংল্যান্ড এগিয়ে ২-১। বুধবার। ছবি: এএফপি।
ব্যক্তিগত ভাবে তিনি এই জয় উৎসর্গ করতে চান স্ত্রী অনুষ্কা শর্মার উদ্দেশে। এমনও বললেন যে, অতীতে অনুষ্কাকে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে। এই ইংল্যান্ডেই কোহালির গার্লফ্রেন্ড হিসেবে এসে তোপের মুখে পড়েছিলেন বলিউড অভিনেত্রী। সে সব মনে রেখেই ভারত অধিনায়ক বললেন, ‘‘আমার ইনিংসটা ওর জন্য। অতীতে অনেক কিছু ওকে সহ্য করতে হয়েছে আমার জন্য। অনুষ্কা আমাকে উদ্বুদ্ধ রাখে সব সময়। ও-ই আমাকে সব সময় ইতিবাচক থাকতে সাহায্য করে।’’
প্রথম ইনিংসে অজিঙ্ক রাহানে এবং দ্বিতীয় ইনিংসে চেতেশ্বর পূজারার ব্যাটিংয়েরও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন কোহালি। তেমনই প্রশংসা করলেন বোলার অশ্বিনের। ম্যাচে মাত্র একটা উইকেট পেলেও গুরুতর চোট নিয়ে যে ভাবে অশ্বিন মাঠে নেমেছেন এবং দলের কথা ভেবে বল করে গিয়েছেন, সেটাকে কুর্নিশ করছেন অধিনায়কও।
স্পিনের দেশ ভারত কী ভাবে গতির ঝড়ে চমকে দিতে পারছে? কোহালি বললেন, ‘‘সব চেয়ে ভাল লাগছে দেখে যে, এই টেস্টে চার জন সব চেয়ে জোরে বোলারের চার জনই আমাদের দলের। এই মুহূর্তে গতিতে আমরা ইংল্যান্ডের চেয়ে এগিয়ে। এটা খুবই সন্তোষজনক তথ্য। আমরা ফিটনেস নিয়ে অনেক খেটেছি গত কয়েক মাসে। হয়তো সেটারই ফসল এই জয়।’’
ট্রেন্ট ব্রিজের কাজ সম্পন্ন। কিন্তু কোহালির হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে, তিনি পরের লক্ষ্য স্থির করে ফেলেছেন। সাউদাম্পটন এবং ওভাল। টেস্ট নয়, হার-না-মানা অধিনায়ক সিরিজ জয়কে পাখির চোখ করে এগোবেন সন্দেহ নেই।
স্কোরকার্ড
ভারত ৩২৯ ও ৩৫২-৭ ডি.
ইংল্যান্ড ১৬১ ও ৩১৭
ইংল্যান্ড (আগের দিন ৩১১-৯-এর পর থেকে দ্বিতীয় ইনিংস)
আদিল রশিদ ন. আ. ৩৩
অ্যান্ডারসন ক রাহানে বো অশ্বিন ১১
অতিরিক্ত ২২
মোট ৩১৭
পতন: ১-২৭ (জেনিংস, ৯.৫), ২-৩২ (কুক, ১১.৬), ৩-৬২ (রুট, ২৪.৩), ৪-৬২ (পোপ, ২৫.১), ৫-২৩১ (বাটলার, ৮২.৩), ৬-২৩১ (বেয়ারস্টো, ৮২.৪), ৭-২৪১ (ওকস, ৮৪.৪), ৮-২৪১ (স্টোকস, ৮৫.৫), ৯-২৯১ (ব্রড, ৯৬.২), ১০-৩১৭ ( অ্যান্ডারসন, ১০৪.৫)।
বোলিং: যশপ্রীত বুমরা ২৯-৮-৮৫-৫, ইশান্ত শর্মা ২০-৪-৭০-২, আর অশ্বিন ২২.৫-৮-৪৪-১, মহম্মদ শামি ১৯-৩-৭৮-১, হার্দিক পাণ্ড্য ১৪-৫-২২-১।
২০৩ রানে জয়ী ভারত
ম্যাচের সেরা বিরাট কোহালি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy