Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

অলিম্পিক্সের চোখের জল মুছে ছন্দে ফিরলেন সোনার মেয়ে বিনেশ ফোগত

এশিয়াডের প্রথম দিন কুস্তিতে সোনা এনেছিলেন কুস্তিগির বজরং পুনিয়া। দ্বিতীয় দিনে সেই কুস্তিতেই ফের বাজিমাত।

উচ্ছ্বাস: সোনার পদক গলায় বিনেশ ফোগত। সোমবার। ছবি: রয়টার্স।

উচ্ছ্বাস: সোনার পদক গলায় বিনেশ ফোগত। সোমবার। ছবি: রয়টার্স।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৮ ০৪:২০
Share: Save:

দীপা কর্মকারের পরে ভারতীয় খেলাধুলায় আর এক সোনার মেয়ের চমকপ্রদ প্রত্যাবর্তন সোমবার দেখল জাকার্তা এশিয়াডের মঞ্চ।

অলিম্পিক্সের কান্না পিছনে ফেলে পূর্ণিমার আলো ছড়ালেন বিনেশ ফোগত। কুস্তিতে মেয়েদের ৫০ কেজি বিভাগে সোনা জিতলেন তিনি। ফাইনালে জাপানের ইউকি আইরি-কে ৬-২ তে হারিয়ে। বিজয় মঞ্চে উঠেও হরিয়ানার দঙ্গল-খ্যাত ফোগত পরিবারের মেয়ে বিনেশ কাঁদলেন, তবে সেটা আনন্দাশ্রু।

দু’বছর আগে রিয়ো অলিম্পিক্সে চোট পেয়ে রিং থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন বিনেশ। অপ্রত্যাশিতভাবে হাঁটুর চোট পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে এসেছিলেন লড়াই শেষ না করেই। যন্ত্রণাময় জীবন পেরিয়ে যখন ফের নামলেন, তখন তাঁর গলায় ঝুলছে ইতিহাসের সোনা। মেয়েদের কুস্তিতে ভারতের প্রথম মেয়ে হিসাবে সোনা জিতে ইতিহাস তৈরির পরে বিনেশ বলে দিলেন, ‘‘রিওর চোটের পর আমি আরও শক্তিশালী হয়েছি। নিজেকে মানসিকভাবে তৈরি করেছি। কে যেন আমাকে বলেছিল, ‘চোট পেলে যে কোনও অ্যাথলিট আরও বেশি শক্তিশালী হয়।’ সেটা মাথায় রেখেছিলাম। এখানে আমার লক্ষ্য ছিল সোনা। আমি নিশ্চিত ছিলাম আমার লড়াই বিফলে যাবে না। সোনা আমি জিতবই।’’

সেরা: ফাইনালে জাপানের ইউকি আইরিকে হারিয়ে সোনা জয়ের পথে বিনেশ ফোগত। প্রথম ভারতীয় মহিলা কুস্তিগির হিসেবে এশিয়াডে সোনা জেতার নজির গড়লেন তিনি। ছবি: রয়টার্স।

এশিয়াডের প্রথম দিন কুস্তিতে সোনা এনেছিলেন কুস্তিগির বজরং পুনিয়া। দ্বিতীয় দিনে সেই কুস্তিতেই ফের বাজিমাত। কিন্তু এ দিনের সোনা যেন অনেক হাসি-কান্নার পথ পেরিয়ে আসা এক মেয়ের ফিরে আসার উপাখ্যান। জেদ, অধ্যাবসায় এবং হার না মনোভাবের সংমিশ্রণের জয়। ‘‘ছোট বেলা থেকেই আমি জেদি। কোনও কিছুকেই পরোয়া করতাম না। যে কোনও কাজে ঝুঁকি নেওয়াটা ছিল আমার স্বভাব। নিজের উপর সব সময়ই আস্থা রেখেছি। সব সময় মনে হত, আমি যা চাইব সব করতে পারব,’’ বলার সময় সোনার মেয়ের পাশে অসংখ্য মানুষের ভিড়।

আরও পড়ুন: বজরংয়ের পর ভিনেশ, কুস্তিতেই এল ভারতের দ্বিতীয় সোনা

ভারতীয় কুস্তি মহলে বিনেশকে বলা হয়, মানসিকভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী মেয়ে কুস্তিগির। সেটা যে কতটা ঠিক তা বোঝা গিয়েছিল শুরুতেই। রিয়োতে যে কুস্তিগিরের কাছে চোট পেয়ে লড়াইয়ের মাঝপথে হার স্বীকার করে নিয়েছিলেন সেই চিনের ইয়ানান সানের সঙ্গেই এ দিন প্রথম লড়াই পড়েছিল বিনেশের। সেই সানকে এ দিন দাঁড়াতেই দেননি তিনি। জেতার পর তাঁর মুখ থেকে বেরিয়েছে, ‘‘সানের সামনে নামার আগে একটা চাপ তো ছিলই। আমি যে ওঁর চেয়ে শক্তিশালী সেটা প্রমাণেরও দরকার ছিল। রিও অলিম্পিক্সে শুধু নয়, তিন বার হেরেছি ওঁর কাছে। আমি যে সেরা সেটা প্রমাণ করতে পেরেছি আজ। এটা দরকার ছিল।’’

অলিম্পিক্সে হাঁটুর চোটের পর বহু দিন রিং-এ নামতে পারেননি বিনেশ। রিহ্যাব করে, আস্তে আস্তে নিজেকে ফিরিয়ে এনেছেন প্রতিযোগিতার মঞ্চে। ডোপ পরীক্ষায় যাওয়ার আগে তেইশ বছরের মেয়ে বলেছেন, ‘‘চোট তো অ্যাথলিটদের লাগতেই পারে। সেটা মানসিক এবং শরীরিকভাবেও পিছিয়ে দেয়। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। এ বছর কমনওয়েলথ গেমসে সোনা এবং এশীয় পর্যায়ে কয়েকটি পদক পেয়েছি চোট সারিয়ে ওঠার পর। সেটাও আমাকে মানসিকভাবে দারুণ শক্তি জুগিয়েছে।’’

কোন কুস্তিগির তাঁর আদর্শ, বলতে চাননি বিনেশ। তবে সুশীলকুমারের সঙ্গে কথা বলে ভাল লেগেছিল বলে জানিয়েছেন। ‘‘সুশীলজি আমাকে ২০১৪ ইনচিওন এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ পদক জেতার পরে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, ‘যাই হোক কখনও ভেঙে পড়বে না। যা হচ্ছে সব তোমার ভালর জন্যই হচ্ছে।’ সেটা আমি সবসময় মাথায় রেখেছি,’’ বলে দেন উচ্ছ্বসিত বিনেশ।

বলিউড তারকা আমির খানও অভিনন্দন জানিয়েছেন বিনেশকে। বিখ্যাত সিনেমা দঙ্গলের প্রযোজক-অভিনেতার টুইট, ‘‘এশিয়ান গেমসে সোনা জেতার জন্য অভিনন্দন বিনেশকে। আমরা সবাই গর্বিত তোমার জন্য। আমার ও টিম দঙ্গলের তরফ থেকে অনেক ভালবাসা রইল। ছেলেদের থেকে কম যায় কোথায় আমাদের মেয়েরা!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE