নিজের কথা মতোই এখন আর আবেগে ভেসে যেতে চান না বিজয়। ছবি: পিটিআই।
একটা ট্রফির ফাইনাল তাঁর জীবন অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছিল। যার পরে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, কোনও কিছুতেই জীবনকে আর প্রভাবিত হতে দেবেন না। মঙ্গলবার ভারতকে ম্যাচ জিতিয়ে উঠে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিজয় শঙ্কর বলছিলেন, ‘‘নিদাহাস ট্রফি আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। আমি শিখেছি, কী ভাবে আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। বাইরের কোনও ব্যাপারকে আমার জীবনে আর প্রভাব ফেলতে দিতে চাই না। শিখেছি, যে কোনও পরিস্থিতিতে কী ভাবে শান্ত থাকা যায়। জীবনের ওঠা-পড়া নিয়ে মাথা ঘামানো ছেড়ে দিয়েছি।’’
শেষ ওভারে যখন অধিনায়ক আপনার হাতে বল তুলে দেন, তখন কী মনে হচ্ছিল? বিজয়ের জবাব, ‘‘আমি মানসিক ভাবে তৈরি ছিলাম চ্যালেঞ্জ নিতে। ৪৩-৪৪ ওভার থেকেই নিজেকে বলছিলাম, আমাকে যে কোনও সময় বল করতে হবে। তাই মানসিক প্রস্তুতিটা ছিল। ধরে নিয়েছিলাম, শেষ ওভারে ১২-১৫ রান হাতে নিয়ে বল করতে হবে।’’ শেষ ওভার করার আগে তিনি যে বুমরার পরামর্শও পেয়েছিলেন, তা বলছেন বিজয়। ‘‘বুমরা আমাকে এসে বলে, রিভার্স সুইং হচ্ছে। আমি তাই চেষ্টা করেছিলাম, স্টাম্প টু স্টাম্প বল করতে। আমি কোনও রকম চাপে ছিলাম না। ওদের আট উইকেট পড়ে গিয়েছিল। তাই জানতাম, আমাদেরও জেতার সুযোগ আছে।’’
আসন্ন বিশ্বকাপের মহড়া হিসেবে দেখা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এই সিরিজকে। এই পারফরম্যান্সের পরে কি মনে হয়, আপনার দলে ঢোকার দাবিটা জোরালো হল? বিজয় বলেন, ‘‘আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি। বিশ্বকাপে সুযোগ পাব কি না, এই নিয়ে ভাবি না। আমাদের সামনে আরও ম্যাচ আছে। সেই সব ম্যাচে নিজের সেরাটা দিতে চাই।’’
আপনি ব্যাটিংটা সেই নিউজিল্যান্ড থেকে ভালই করছেন। এখানেও করলেন। কিন্তু বোলিংয়ে কি আর একটু বেশি জোর দেওয়া উচিত নয়? কী ভাবছেন এই নিয়ে? বিজয়ের জবাব, ‘‘আমি নিজের খেলার সব ক’টা দিকই উন্নত করার চেষ্টা করি। নেটে পরিশ্রম করি। হতে পারে, শেষ কয়েকটা ম্যাচে আমার বোলিং ভাল হয়নি। কিন্তু এ দিনের শেষ ওভারটা ভাল করা আমার পক্ষেও জরুরি ছিল। এর পরে দলও আশা করি আমার ওপর ভরসা রাখবে। যে ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি জানি, বল হাতে ভাল করতে থাকলেই দল আমাকে আরও বেশি সুযোগ দেবে। আমারও চেষ্টা থাকবে, যতটকু সুযোগ পাব, নিজের সেরাটা দেওয়ার।’’
আপনি ব্যাটিংটা বেশ ভাল করছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে রান আউট হয়ে গেলেন। এখন ম্যাচ জেতানোর পরে আপনার অনুভূতিটা কী রকম? ‘‘আমি এখন কোনও কিছুতেই আবেগে ভেসে যেতে চাই না। শেষ ওভারে দু’টো উইকেট নিয়ে বিশাল কিছু করে ফেলেছি, এমনটা ভাবছি না। আবার রান আউট হওয়া নিয়েও হতাশ হয়ে পড়ছি না। বিরাটের শটটায় খুব জোর ছিল। ফেরার সময় পাইনি। তবে খেলায় এ সব ঘটেই থাকে,’’ বললেন এই নতুন বিজয়।
নাগপুরে নাটকীয় জয় পাওয়ার পরে উচ্ছ্বসিত ভারতীয় ক্রিকেটারেরা গভীর রাতে একের পর এক টুইট করছেন। কোহালি যেমন লিখেছেন, ‘‘দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। অসাধারণ টিমওয়ার্ক।’’ যশপ্রীত বুমরার টুইট, ‘‘বিশাল একটা জয় পেল দল। এই জয়ের অংশ হতে পেরে আমি ভীষণ উত্তেজিত।’’
বিজয় অবশ্য নিজের কথা মতোই এখন আর আবেগে ভেসে যেতে চান না। নাগপুরের পিচ নিয়ে বিজয় বলছিলেন, ‘‘এখানকার পিচের বাউন্সটা একটু কম ছিল। প্রথম দিকে ব্যাট করাটা খুব সহজ কাজ ছিল না। কিন্তু ক্রিকেটার হিসেবে যে কোনও পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়াটাই চ্যালেঞ্জ।’’
স্কোরকার্ড
ভারত ২৫০ (৪৮.২)
অস্ট্রেলিয়া ২৪২ (৪৯.৩)
ভারত
রোহিত ক জ়াম্পা বো কামিন্স ০n৬
শিখর এলবিডব্লিউ বো ম্যাক্সওয়েল ২১n২৯
কোহালি ক মার্কাস বো কামিন্স ১১৬n১২০
রায়ডু এলবিডব্লিউ বো লায়ন ১৮n৩২
বিজয় রান আউট জ়াম্পা ৪৬ n৪১
কেদার ক ফিঞ্চ বো জ়াম্পা ১১n১২
ধোনি ক খোয়াজা বো জ়াম্পা ০n১
জাডেজা ক খোয়াজা বো কামিন্স ২১n৪০
কুলদীপ বো কামিন্স ৩n৩
শামি ন. আ. ২n৪
বুমরা বো কুল্টার-নাইল ০n২
অতিরিক্ত ১২
মোট ২৫০ (৪৮.২)
পতন: ১-০ (রোহিত, ০.৬), ২-৩৮ (শিখর, ৮.৩), ৩-৭৫ (রায়ডু, ১৬.৬), ৪-১৫৬ (বিজয়, ২৮.৫), ৫-১৭১ (কেদার, ৩২.২), ৬-১৭১ (ধোনি, ৩২.৩), ৭-২৩৮ (জাডেজা, ৪৫.৫), ৮-২৪৮ (কোহালি, ৪৭.১), ৯-২৪৯ (কুলদীপ, ৪৭.৫), ১০-২৫০ (বুমরা, ৪৮.২)।
বোলিং: প্যাট কামিন্স ৯-২-২৯-৪ , নেথন কুল্টার-নাইল ৮.২-০-৫২-১, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ১০-০-৪৫-১, অ্যাডাম জ়াম্পা ১০-০-৬২-২, নেথন লায়ন ১০-০-৪২-১, মার্কাস স্টোয়নিস ১-০-১২-০।
অস্ট্রেলিয়া
ফিঞ্চ এলবিডব্লিউ বো কুলদীপ ৩৭n৫৩
খোয়াজা ক কোহালি বো কেদার ৩৮n৩৭
মার্শ ক ধোনি বো জাডেজা ১৬n২৭
হ্যান্ডসকম্ব রান আউট ৪৮n৫৯
ম্যাক্সওয়েল বো কুলদীপ ৪n১৮
স্টোয়নিস এলবিডব্লিউ বো বিজয় ৫২n৬৫
ক্যারি বো কুলদীপ ২২n২৪
কুল্টার-নাইল বো বুমরা ৪n৪
প্যাট কামিন্স ক ধোনি বো বুমরা ০n২
লায়ন ন. আ. ৬n৬
জ়াম্পা বো বিজয় ২n২
অতিরিক্ত ১৩
মোট ২৪২ (৪৯.৩)
পতন: ১-৮৩ (ফিঞ্চ ১৪.৩), ২-৮৩ (খোয়াজা, ১৫.৩), ৩-১২২ (মার্শ, ২৩.৫), ৪-১৩২ (ম্যাক্সওয়েল, ২৮.৩), ৫-১৭১ (হ্যান্ডসকম্ব, ৩৭.৩), ৬-২১৮ (ক্যারি, ৪৪.৩), ৭-২২৩ (কুল্টার-নাইল, ৪৫.২), ৮-২২৩ (কামিন্স, ৪৫.৪), ৯-২৪০ (স্টোয়নিস, ৪৯.১), ১০-২৪২ (জ়াম্পা, ৪৯.৩)।
বোলিং: মহম্মদ শামি ১০-০-৬০-০, যশপ্রীত বুমরা ১০-০-২৯-২, রবীন্দ্র জাডেজা ১০-০-৪৮-১, বিজয় শঙ্কর ১.৩-০-১৫-২, কুলদীপ যাদব ১০-০-৫৪-৩, কেদার যাদব ৮-০-৩৩-১।
৮ রানে জয়ী ভারত
ম্যাচের সেরা বিরাট কোহালি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy