ইউক্রেনের টেনিস খেলোয়াড় লেসিয়া সুরেঙ্কো। ছবি: রয়টার্স।
একাধিক প্রতিযোগিতার সেমিফাইনাল, কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেও লড়াই ছেড়ে দিয়েছেন। পুরো ম্যাচ না খেলেই হার মেনে নিয়েছেন। তাঁর দেশ ইউক্রেন লড়াই করে চলেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। কিন্তু লেসিয়া সুরেঙ্কো লড়াই করতে পারলেন না।
ফরাসি ওপেনের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে ইগা শিয়নটেকের বিরুদ্ধে প্রায় বিনা লড়াইয়েই জমি ছেড়ে দিলেন ইউক্রেনের ৩৪ বছরের সুরেঙ্কো। এই নিয়ে ১৯টি প্রতিযোগিতার মধ্যে ১০ বার ওয়াকওভার দিতে বাধ্য হলেন তিনি। এর মধ্যে এই বছর ১১টির মধ্যে পাঁচটি প্রতিযোগিতায় তিনি ম্যাচ ছেড়ে দিয়েছেন। খেলার মাঝেই তাঁর শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ‘প্যানিক অ্যাটাক’ হয়। সেই কারণেই বিভিন্ন সময় ম্যাচ ছেড়ে দিয়েছেন সুরেঙ্কো। সোমবারও সেটাই হয়েছে।
এই বছর ক্যানবেরায় সেমিফাইনালে ম্যাচ ছেড়ে দিয়েছিলেন সুরেঙ্কো। গত বছর ম্যাচ ছেড়েছিলেন ইস্টবোর্ন এবং পোর্তরজ ও স্লোভেনিয়াতে। এখনও পর্যন্ত চারটি সিঙ্গলস ট্রফি জেতা সুরেঙ্কো এক সময় টেনিস খেলাই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। গত বছর ইউক্রেনের উপর রাশিয়া হামলা করার পর খেলা ছেড়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন সুরেঙ্কো। কিন্তু দেশের মানুষের কথা ভেবেই খেলা ছাড়েননি তিনি। টেনিস থেকে উপার্জন করে দেশের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছেন সুরেঙ্কো।
এ বারের ফরাসি ওপেনের তৃতীয় পর্বে বিয়াঙ্কা আন্দ্রিস্কুকে ৬-১, ৬-১ গেমে হারিয়ে দেন সুরেঙ্কো। সেই ম্যাচের পর তিনি বলেন, “আমি প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে চাই, যাতে সেটা দান করতে পারি। খেলা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে এটাই ছিল সব থেকে বড় কারণ।”
গত বছর উইম্বলডনে খেলার সময় সুরেঙ্কো বলেছিলেন যে, তাঁর লজ্জা হচ্ছে ইংল্যান্ডে খেলতে। তাঁর দেশ ইউক্রেন যখন যুদ্ধে ব্যস্ত, তখন তিনি খেলার জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নিজেই এটা মানতে পারছিলেন না সুরেঙ্কো। উইম্বেলডনের তৃতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, সুরেঙ্কো নিজের পুরস্কারমূল্যের ১০ শতাংশ দান করেন দেশের মানুষের জন্য। সেখানে সুরেঙ্কো বলেন, “এক বছর আগে আমি ভেবেছিলাম দেশে ফিরে যাই। যুদ্ধের কাজে সাহায্য করি, মানুষের পাশে দাঁড়াই। টেনিস ছেড়ে দেশের জন্য যে কোনও কাজে যোগ দিতে তৈরি ছিলাম আমি। কিন্তু অ্যালেক্স ডলগোপোলভ (ইউক্রেনের প্রাক্তন টেনিস খেলোয়াড়) আমাকে খেলা ছাড়তে বারণ করে। ও আমাকে বোঝায় দেশের অর্থ প্রয়োজন। সেই কারণে আমি খেলা চালিয়ে যাই। আরও উন্নতি করতে চাই। এখন আমার লক্ষ্য ভাল খেলা এবং টাকা উপার্জন করে দেশের পাশে দাঁড়ানো।”
সুরেঙ্কো ইউক্রেনে থাকেন না। সেই জন্য লজ্জিত তিনি। সুরেঙ্কো বলেন, “নিজের উপার্জিত টাকা দেশের মানুষের কাছে পাঠাতে পারলে ভাল লাগে। আমি যে ইউক্রেনে থাকতে পারি না এটা আমাকে কষ্ট দেয়।” কঠিন ম্যাচের আগে নিজেকে দেশের কথা বলেন। সে ভাবেই নিজেকে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি বলেন, “ম্যাচে যখন কোনও কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন আমি নিজেকে দেশের কথা মনে করাই। আমি কোন দেশ থেকে এসেছি? যে দেশ লড়াই করছে। অন্যতম শক্তিশালী দেশের নাগরিক আমি। এগুলো আমাকে লড়াইয়ের শক্তি দেয়।”
এ বারের ফরাসি ওপেনে যদিও প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে শিয়নটেকের বিরুদ্ধে পারেননি সুরেঙ্কো। প্রথম সেটে শিয়নটেক ৫-১ গেমে এগিয়ে ছিলেন। সুরকির কোর্টে দাপট দেখাচ্ছিলেন শিয়নটেক। প্রথম গেমটিতে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের টেনিস খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে হার মানতে হয়েছিল তাঁকে। শিয়নটেকের সার্ভিস ভেঙে দিয়েছিলেন সুরেঙ্কো। কিন্তু ২০ মিনিট খেলার পরেই অসুস্থ বোধ করেন তিনি। পাঁচ মিনিটের বিরতি নেন। ফিরে এসে খেলা শুরু করলেও স্বচ্ছন্দ দেখাচ্ছিল না তাঁকে। কোর্টে তাঁর চিকিৎসককে এনে বেঞ্চে বসিয়ে রেখেছিলেন সুরেঙ্কো। কিন্তু খুব বেশি ক্ষণ খেলতেই পারলেন না তিনি। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল তাঁর। হার মেনে নিতে হয় সুরেঙ্কোকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy