উৎসব: চানু রুপো জেতার পরে পরিবার ও প্রতিবেশীরা। পিটিআই
অলিম্পিক্সে ভারোত্তোলনের ৪৯ কেজি বিভাগে রুপোর পদক গলায় ঝুলিয়ে ওঁদের সবার আক্ষেপ মুছলেন সাইখম মীরাবাই চানু!
একুশ বছর আগে, ২০০০ সালে সিডনি অলিম্পিক্সে প্রথম ভারতীয় হিসেবে ভারোত্তোলনে পদক (৬৯ কেজিতে ব্রোঞ্জ) পেয়েছিলেন কর্ণম মালেশ্বরী। বহু চেষ্টার পরে এ দিন দুপুর একটার সময় তাঁকে যখন হরিয়ানার যমুনানগরের বাড়িতে ফোনে ধরা গেল, তখন তিনি উচ্ছ্বসিত। বলে দিলেন, ‘‘দুঃখ মুছিয়ে দিল আমার ছোট্ট বোন মীরাবাই। সিডনিতে দু’কেজির জন্য আমি সোনা পাইনি। আজ চানুর রুপো সেই দুঃখ লাঘব করল। তিন বছর পরে ফের অলিম্পিক্স। চানু সেখান থেকে সোনা নিয়েই ফিরবে।’’
দুপুর দেড়টা। ইম্ফলের বাড়িতে আনন্দাবাজারের ফোন পেয়ে আনন্দে কেঁদেই ফেললেন অনীতা লেইশরাম চানু। ১৫ বছর আগে অচেনা, অজানা মীরাবাই চানুর ভারোত্তোলনের বর্ণপরিচয় তাঁর হাত ধরেই। মণিপুরের রাজ্য সরকার পরিচালিত ‘রেগুলার কোচিং সেন্টার’ (আরসিসি)-র কোচ অনীতার প্রশিক্ষণেই ভারত সেরা হয়ে জাতীয় শিবির যান এ দিনের অলিম্পিক্স পদকজয়ী চানু। অনীতাও বলেন, ‘‘বেজিং এশিয়ান গেমসে আমি অল্পের জন্য পদক পাইনি। চতুর্থ হয়েছিলাম। তার জন্য অনেকে তির্যক মন্তব্য করতেন। মুখ লুকিয়ে পালিয়ে না গিয়ে ওঁদের বলতাম, একদিন আমার ছাত্রী অলিম্পিক্স থেকে পদক আনবে। সে দিন তোমরাই আমাকে অভিনন্দন জানাবে। আজ সেই দিনটা এল। মীরাবাই আমার মুখটা আজ উজ্জ্বল করেছে।’’ যোগ করেন, ‘‘মণিপুরে করোনা সংক্রমণ রুখতে এই মুহূর্তে লকডাউন। সঙ্গে ১০ দিনের কার্ফু জারি আছে। তাই আজ সকলে ঘরে থেকেই আনন্দ করছে।’’
ততক্ষণে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি-সহ দেশের প্রথম সারির সব ব্যক্তিদের অভিনন্দন বার্তার বন্যা বইছে গণমাধ্যমে। যে তালিকায় সচিন তেন্ডুলকর থেকে বলিউড অভিনেতা অক্ষয় কুমার, সকলেই রয়েছেন।
বিকেলে মণিপুরের নংপক কাকচিং এলাকায় মীরাবাইয়ের বাড়িতে ফোনে যোগাযোগ করা গেল, তাঁর দাদা ইশাটন মিতেইকে। তিনি বললেন, ‘‘পাঁচ বছর আগে রিয়ো অলিম্পিক্সে বোন কিছু করতে পারেনি। কিন্তু তার পরে যে পরিশ্রমে নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছিল, জানতাম এ বার ও সোনা নিয়ে ফিরবে। তবে বোন রুপো পাওয়ায় কোনও দুঃখ নেই।’’ যোগ করেন, ‘‘আজ সকালে চানু প্রতিযোগিতার আগে ভিডিয়ো কলে আমাদের সঙ্গে কথা বলে। মাকে বলেছিল, চললাম সোনা আনতে। আশীর্বাদ করো। যৌথ পরিবারে আমাদের ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী-সহ জনা পঞ্চাশেক এক সঙ্গে বসে ওর প্রতিযোগিতা দেখছিলাম। ভিড় বলে টিভিটা বার করেছিলাম বারান্দায়। আরাধ্য দেবতা সিদাবামাপুকে ডাকছিলাম ওর পদকের জন্য। তা নিশ্চিত হতেই আনন্দে লাফালাফি, নাচ-গান শুরু করে দিই।’’
চানুরা চার বোন, দুই ভাই। বড় ভাই ইশাটনই ফোনে ধরালেন চানুর মা সাইখম ওঙ্গবি তোম্বি লেইমা ও বাবা সাইখম কৃতি মিতেইকে। হিন্দিতে তাঁদের কথা তর্জমাও করে দিলেন তিনি। উচ্ছ্বসিত চানুর মা বলছিলেন, ‘‘আবেগে চোখে জল চলে এসেছিল। পাঁচ বছর আগে ও রিয়ো অলিম্পিক্সে যাওয়ার আগে অলিম্পিক্সের বলয়ের আদলে সোনার দুল গড়িয়ে দিয়েছিলাম ওকে। ওই ‘লাকি’ দুলটা পরেই আজ পদক পেল মেয়ে।’’ যোগ করেন, ‘‘দেদার আনন্দ হয়েছে। আমরা নিরামিষ খাবার খাই। রাতে আত্মীয়রা আসবে। পরিবারের উৎসব উপলক্ষ্যে আজ রাতে মাছের পদ রাঁধছি।’’ বাবা সাইখমের কথায়, ‘‘সব সময়ে চাইতাম, সন্তান যেন দেশের গর্ব হয়। এর আগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ও কমনওয়েলথ গেমসে চানু সোনা পাওয়ার পরে আনন্দ হয়েছিল। কিন্তু অলিম্পিক্সের রুপোটা
ইচ্ছাপূরণ করল।’’
চানুর পদক প্রেরণা দিচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মকে। সম্প্রতি যুব বিশ্বকাপে ভারোত্তোলনে রুপো পেয়েছেন বাংলার অচিন্ত্য শিউলি। তাঁর কথায়, ‘‘পাটিয়ালায় জাতীয় শিবিরে দারুণ নাচ-গান করলাম। চানুদিদির পদক আমাকেও ভাল করার প্রেরণা দিচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy