যে মীরাবাই চানুর হাত ধরে চলতি টোকিয়ো অলিম্পিক্সে দেশ ২১ বছর পর ভারোত্তোলনে পদক পেল, সেই মেয়েটি একটা সময় হতশায় ভুগতেন। তাঁকে সেই সময় খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলেছিলেন কর্নম মালেশ্বরী। ২০০০ সালে যে মহিলা ভারোত্তোলকের হাত ধরে ভারত প্রথম পদক জিতেছিল, সেই মালেশ্বরী তাঁর ছোট বোনের মতো চানুকে ফের বাঁচার রসদ জুগিয়েছিলেন।
মনোবিদের দাওয়াই, মিউজিক থেরাপি, ইউ টিউবে প্রচুর মোটিভেশনাল ভিডিয়ো দেখিয়ে চানুকে ফের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনেন তিনি। চোট সারিয়ে বিদেশে থেকে অনুশীলন করে দেশে ফিরলেও গত দুই বছর চানু পরিবারের মুখ দেখেননি। বরং পাটিয়ালার জাতীয় অ্যাকাডেমিতেই পড়ে থাকতেন। সেখানে কয়েক বার মালেশ্বরীর সঙ্গে তাঁর দেখাও হয়েছিল।
কেমন ছিল তাঁদের আলাপচারিতা? প্রাক্তন অলিম্পিয়ান নয়াদিল্লি থেকে টেলিফোনে আনন্দবাজার অনলাইনকে বলছেন, “চোট সারিয়ে সেই সময় মীরা অনুশীলন শুরু করলেও হতশায় ডুবে থাকত। রিয়ো অলিম্পিক্সে ইভেন্ট শেষ করতে না পারার হতাশা ওকে গ্রাস করেছিল। ওকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য মিউজিক থেরাপি ও মনোবিদের ব্যবস্থা করেছিলাম। এখনও ও সেটা পালন করে। কারণ আমিও মিউজিক থেরাপির সাহায্যে কঠিন সময়কে জয় করেছিলাম। এছাড়া ইউ টিউবে প্রচুর মোটিভেশনাল ভিডিয়ো দেখত। সেটাও কাজে দিয়েছে বলে আমার মনে হয়। তবে সব কিছুর পরেও ওর মনের জোরকে সম্মান জানাতেই হবে। সাফল্য পাওয়ার জন্য অনেকেই এই সব জিনিসের উপর ভরসা করে। কিন্তু সাফল্য কতজন পায় বলুন।”
Congratulations @mirabai_chanu so proud of you ! First day first medal for India
— Karnam Malleswari, OLY (@kmmalleswari) July 24, 2021#tokioolimpics2021 #olympics pic.twitter.com/zIop99Vi6s
আজ থেকে ২১ বছর আগের কথা। ২০০০ সালের সিডনি অলিম্পিক্সে ভারতের প্রথম মহিলা ভারোত্তোলক হিসেবে মালেশ্বরী যখন ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন, তখন চানুর বয়স মাত্র ছয়। সেই চানু এ বার এই প্রাক্তন অলিম্পিয়ানের সাফল্যে ভাগ বসালেন। স্বভাবতই উল্লসিত ওঁর দিদি। তবে একই সঙ্গে চানুর লড়াইকে কুর্নিশ জানালেন অন্ধপ্রদেশের এই প্রাক্তন অ্যাথলিট।
শনিবার চানুর জন্য গোটা দেশ গর্বিত হয়েছে। তবে পাঁচ বছর আগে রিয়ো অলিম্পিক্সে কিন্তু এই মেয়েকে একা যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছিল। এখন তাঁকে সবাই ধন্য ধন্য করলেও সেই সময় হারের যন্ত্রণা ও কোমরের ব্যথার সঙ্গে তাঁকে একা লড়তে হয়।
সেটা মনে করিয়ে মালেশ্বরী বলছেন, “অসাধারণ লড়াই। শুধু ক্রীড়াবিদ নয়, সমাজের সব স্তরের মানুষের কাছে ওর এই লড়াই অনুপ্রেরণা জোগাবে। আমাদের খেলায় একজন ক্রীড়াবিদ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ, কমনওয়েলথ, এশিয়ান গেমসে পদক জিতলেও আসল মাপকাঠি কিন্তু অলিম্পিক্সে পদক জয়। মীরা সেটা করে দেখাল। তাও গত অলিম্পিক্সের খারাপ অধ্যায় ভুলে। কোমরের চোট সারিয়ে এ ভাবে ফিরে আসা মুখের কথা নয়। ওকে কুর্নিশ জানাই।”
আরও পড়ুন:
Twenty years after Sydney Olympics it was great to witness the event today. Congratulations #Mirabai Chanu #weightlifting #TokyoOlympics
— Karnam Malleswari, OLY (@kmmalleswari) July 24, 2021
Weightlifting to be an integral part of the #DelhiSportsUniversity pic.twitter.com/p4DSghSM2h

চানুর হাত ধরে চলতি টোকিয়ো অলিম্পিক্সে ভারতের প্রথম পদক জয়। ছবি - টুইটার
কিন্তু তাই বলে মহিলাদের ভারোত্তোলনে দ্বিতীয় পদক আসতে দীর্ঘ ২১ বছর লেগে গেল? মালেশ্বরীর প্রতিক্রিয়া, “মীরার পদক জয়ের কৃতিত্ব কিন্তু ওর একার নয়। রিয়ো অলিম্পিক্সের পর চোটে জর্জরিত থাকার সময় কেন্দ্র সরকারের ক্রীড়া দপ্তর ওর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। আমাদের দেশে ক্রীড়া চিকিৎসা এখনও উন্নত নয়। ওকে চিকিৎসার জন্য আমেরিকা পাঠানো হয়েছিল। এরপর বিদেশে অনুশীলন করার ব্যবস্থাও ক্রীড়া দপ্তর নেয়। এর সুফল দীর্ঘ ২১ বছর পর পাওয়া গেল। তাই আজ এমন মুহূর্তকে উপভোগ করা উচিত।”
পাঁচ বছর আগে রিয়ো অলিম্পিস্ক থেকে চোখের জলে বিদায়। স্ন্যাচে মাত্র এক বার ওজন তুলতে পারলেও ক্লিন ও জার্ক বিভাগে তিন বারই ব্যর্থ হন চানু। তিনি ইভেন্ট শেষ করতে পারেননি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল কোমরের চোট। একটা সময় খেলা ছেড়ে দেবেন ভেবেছিলেন মণিপুরের এই মেয়েটি। তবে সেই চানু এ বারের অলিম্পিক্সে দেশকে প্রথম পদক এনে দিলেন। মেটালেন দীর্ঘ ২১ বছরের খরা।