Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
India

উপেক্ষার জবাব দেওয়া এই ড্র জয়েরই সমান

যন্ত্রণা, ব্যক্তিগত সাফল্যের চেয়েও বেশি মূল্যবান দলীয় সংহতি। রয়েছে অফুরন্ত ধৈর্য। 

জবাব: সিডনি টেস্টের পঞ্চম দিন অস্ট্রেলীয় বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইয়ের তিন ছবি। পাল্টা মার ঋষভের। দুর্ভেদ্য রক্ষণ হনুমার। শর্ট বলে চোট পেয়েও অদম্য অশ্বিন। গেটি ইমেজেস

জবাব: সিডনি টেস্টের পঞ্চম দিন অস্ট্রেলীয় বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইয়ের তিন ছবি। পাল্টা মার ঋষভের। দুর্ভেদ্য রক্ষণ হনুমার। শর্ট বলে চোট পেয়েও অদম্য অশ্বিন। গেটি ইমেজেস

লক্ষ্মীরতন শুক্ল
শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:৩০
Share: Save:

প্রতিটি বলের পরে তাচ্ছিল্য উপেক্ষায় মেশানো হাসি। উইকেটের পিছন থেকে ক্রমাগত ভেসে আসা হরেক বিদ্রুপ। তার আগে গত দু’দিন ধরে গ্যালারি থেকে ধেয়ে এসেছে বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য। সমস্ত প্রতিকূলতাকে হেলায় জয় করে বাইশ গজ আঁকড়ে পড়ে থাকার অদম্য লড়াই। নতুন বছরে সিডনি টেস্ট এক প্রতিবাদের বার্তা হিসেবেই বোধহয় ক্রিকেট ইতিহাসে জায়গা করে নিল। টিম পেনদের জয়ের স্বপ্ন চূর্ণ করে ম্যাচ ড্র ভারতের।

সত্যি বলতে, এটা এক অন্য ধরনের ভারতীয় দল। যারা নিজেদের সেরা নেতাকে পাচ্ছে না। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বসেরা বোলিংয়ের বিরুদ্ধে আহত হতে হচ্ছে। রয়েছে চোট-আঘাতের সমস্যা। কিন্তু অকুতোভয় মানসিকতা এবং হাল না ছাড়ার ভয়ঙ্কর জেদ এই ভারতীয় দলের মজ্জায় মজ্জায় মিশে গিয়েছে। যেখানে যন্ত্রণা, ব্যক্তিগত সাফল্যের চেয়েও বেশি মূল্যবান দলীয় সংহতি। রয়েছে অফুরন্ত ধৈর্য।

সোমবার খুব সম্ভবত টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরা ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ের উদাহরণ দিয়ে গেল হনুমা বিহারী ও আর অশ্বিন। শেষ পর্যন্ত লড়াই করার এই তাগিদ একমাত্র দেখা যায় টেস্ট ক্রিকেটেই। যে ছেলেটা পায়ের যন্ত্রণায় একটি গোটা সেশন দৌড়তে পারল না, শুধুমাত্র ইচ্ছাশক্তি এবং হার না মানা মনোভাব ধরে রেখে প্রমাণ করে দিয়ে গেল, এ ভাবেও দলের মানরক্ষা করা যায়।

পঞ্চম দিন ভারত ব্যাট করতে নামে ৯৭ ওভার ব্যাট করার লক্ষ্য নিয়ে। হাতে আট উইকেট। দিনের শুরুতেই অজিঙ্ক রাহানের উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ভারত। সেই পরিস্থিতি থেকে ম্যাচের হাল ধরে ঋষভ পন্থ ও চেতেশ্বর পুজারা। পন্থের দুরন্ত ৯৭ রানের ইনিংস জেতার আশা ফেরালেও এই জুটি ভাঙতেই ভারতীয় শিবিরে গ্রাস করে হারের আতঙ্ক। ৮৯তম ওভারে হনুমা বিহারীর সঙ্গে যোগ দেয় অশ্বিন। দ্বিতীয় নতুন বলে জশ হেজলউড, কামিন্স, স্টার্কের বাউন্সার বৃষ্টি সামলানোই ছিল বড় পরীক্ষা। অশ্বিন ক্রিজে আসার আগেই দৌড়তে গিয়ে হ্যামস্ট্রিংয়ে আঘাত পায় হনুমা। তার পর থেকেই জেতার ‌পরিকল্পনা বদলে ড্রয়ের জন্য লড়াই শুরু করে ভারত। রবীন্দ্র জাডেজার বাঁ-হাতের বুড়ো আঙুল ভেঙে গিয়েছে। বেশি ওভার বাকি থাকতে ওকে নামতে হলে এই ম্যাচ সামলানো যেত না। ব্রিসবেন পৌঁছনোর আগেই সিরিজে ১-২ পিছিয়ে যেতে পারত ভারত। হনুমা ও অশ্বিনের উপরেই দায়িত্ব ছিল শেষ ম্যাচ পর্যন্ত সিরিজের উত্তাপকে টিকিয়ে রাখার। দু'জনের দুর্দমনীয় লড়াই থামানো যায়নি দিনের শেষ পর্যন্ত। ৪২.৪ ওভার ব্যাট করে এই জুটি। ২৫৯ বলে যোগ করে ৬২ রান। এক ওভার বাকি থাকতেই ড্রকে সম্মান জানিয়ে হাত বাড়িয়ে দিল বিপক্ষ অধিনায়ক টিম পেন।

কী করে সম্ভব হল এই লড়াই? পঞ্চম দিনের উইকেটে স্পিনারদের সামলানো সব চেয়ে কঠিন। তাদের বলে কখনও জোরে ডিফেন্ড করতে নেই। গ্রিপ হাল্কা ভাবে ধরে বলের উপরে বসাতে হয় ব্যাট। যদিও বা ব্যাটে লাগে, সামনে দাঁড়ানো ফিল্ডারের কাছে যেন ক্যাচ না যায়, সেটাই নিশ্চিত করা উচিত। হনুমা ও অশ্বিন সে ভাবেই সামলেছে নেথান লায়নকে। কোনও ঝুঁকিপূর্ণ শট তো খেলেইনি, এমনকি বাইরের বলেও ব্যাট বাড়ায়নি। শরীরের দিকে বলকে আহ্বান জানিয়েছে দু'জনে। অনেক দেরিতে ডিফেন্ড করার ফলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ফিল্ডারের হাতেও ক্যাচ যায়নি।

হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট নিয়ে পা নড়াচড়া করাই কঠিন। সেখানে ১৬১ বল টিকে থাকা মানে অবিশ্বাস্য এক যুদ্ধ। ১২৮টি বল টিকেছিল অশ্বিনও। ওর স্ত্রীর টুইট থেকে জানতে পারি, কোমরের ব্যথায় সোমবার সকালেও সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিল না। অথচ দেশের সম্মান রক্ষার লড়াইয়ে এক মুহূর্তের জন্যও পিছিয়ে যায়নি।

অশ্বিন ও হনুমার সফল হওয়ার অন্যতম কারণ কিন্তু সিডনির এই উইকেট। চেন্নাই ও হায়দরাবাদে সারা বছর এ ধরনের মন্থর ও ঘূর্ণি উইকেটে খেলতে হয়। স্পিনারদের বিরুদ্ধে লড়াই করার অভিজ্ঞতা ওদের রয়েছে। ঘূর্ণি ও মন্থর পিচে কী ধরনের টেকনিক ব্যবহার করে সফল হওয়া যায়, তার আন্দাজও ছিল সম্পূর্ণ। সিডনিতে যার প্রমাণ পাওয়া গেল হাতেনাতে।

অশ্বিন ও হনুমার মধ্যে এই লড়াইয়ের বিজ যদিও পুতে দেয় পন্থ-পুজারা জুটি। কনুইয়ে চোট পাওয়া পন্থকে পাঁচ নম্বরে নামানো হয় এ দিন। ওদের ইনিংস সাজানোর ভঙ্গি দেখেই বুঝেছি, জেতার শেষ চেষ্টা করছিল ভারত। একদিক ধরে রেখেছিল পুজারা। অন্য দিক থেকে রানের গতি বাড়াচ্ছিল পন্থ। তিন রানের মাথায় লায়নের বলে ওর ক্যাচ পড়ার পরে কিছুটা সতর্ক হয়ে যায় পন্থ। প্রথম পাঁচ রান করে ৩৩ বলে। কিন্তু উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকার ছেলে ও নয়। লায়নের মাথার উপর দিয়ে একের পর এক বল পাঠাতে থাকে বাউন্ডারিতে। ফের ৫৬ রানের মাথায় লায়নের বলেই পন্থের ক্যাচ ফেলে দেয় টিম পেন। বোঝা যায়, ভাগ্য সঙ্গ দিচ্ছে ভারতেরই। পুজারা ও পন্থের সৌজন্যে ১৪৮ রান যোগ করে ভারত। ৯৭ রান করে ফিরে যায় পন্থ। ৭৭ রান করে পুজারা। ধীরে ধীরে নিজেদের আয়ত্তে আসতে থাকে ম্যাচ। অশ্বিন ও হনুমারও সহজ ক্যাচ ফেলে অস্ট্রেলিয়া। মাঠের লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখে তাই স্লেজিংয়ের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয় পেনরা। তাতেও কোনও লাভ হল না। কারণ, দলকে বাঁচানোর অদম্য ইচ্ছাশক্তি ভর করেছিল হনুমাদের উপরে। ভারত ড্র করলেও জিতেছে ক্রিকেট। বাঁচিয়ে রেখেছে সিরিজের উত্তেজনা।

যাও রাহানে, ব্রিসবেন জয় করে ফেরো!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy