লড়াই: অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুরে চলছে মেয়েদের ফুটবল লিগ।
লা লিগা মানে কী?
আম জনতার কাছে লা লিগা মানে সেই চিরাচরিত এল ক্লাসিকো। রিয়াল মাদ্রিদ বনাম বার্সেলোনা। লা লিগা মানে সেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো বনাম লিওনেল মেসি। লা লিগা মানে বিশ্ব ফুটবলের সর্বসেরা সব তারকার ঝলসে ওঠার মঞ্চ।
কিন্তু এর পাশেও একটা লা লিগা আছে। লা লিগার যে মুখ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আড়ালেই রয়ে যায়। যে মুখ মানবিকতার। যে মুখ স্বপ্ন দেখায় হাজার হাজার খুদে চোখে।
যে মুখের পরিচয় পাচ্ছে অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুরের কিশোর-কিশোরী ফুটবলাররা। অনন্তপুরের একটি স্প্যানিশ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কিশোর এবং কিশোরী ফুটবলার তুলে আনার প্রচেষ্টায় নেমেছে মেসি-রোনাল্ডোদের এই লিগ। স্বপ্ন দেখাচ্ছে দারিদ্রের মধ্যে স্বপ্নের ফুল ফোটানোর।
কিন্তু কেন ভারত? কেন এই অনন্তপুর?
লা লিগার তরফে ভারতীয় প্রোজেক্টের দায়িত্বে থাকা হোসে কাশাজা ফোনে আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘আমাদের লা লিগার একটা রীতি হচ্ছে যে সব দেশে কোনও স্প্যানিশ সংগঠন কাজ করে, সে সব দেশে আমরা সব সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই। বিশেষ করে যারা খেলা নিয়ে কাজ করে, তাদের জন্য তো বটেই।’’ জানা গেল, অনন্তপুরে স্প্যানিশ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ভিসেন্তে ফেরার বছর পঞ্চাশ ধরে কাজ করছে। বেশ কিছু বছর ধরে তারা অনন্তপুর ফুটবল লিগ চালাচ্ছে। যেখানে অংশ নিচ্ছে কয়েক হাজার ছেলে-মেয়ে। স্প্যানিশ সংস্থার এই কাজেই আকৃষ্ট হয়ে এ বার ময়দানে নেমেছে লা লিগা। এ বছরেই এই সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ শুরু করছে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ফুটবল লিগ।
ঠিক কী ভাবে আপনারা সাহায্য করতে চান এই খুদে ফুটবলারদের? হোসের কথা থেকে যে নীল নকশাটা উঠে আসছে, তা এ রকম:
এক, কোচেদের ট্রেনিং দেওয়া। অর্থাৎ স্থানীয় কোচেদের বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে যাতে তারা সেই ট্রেনিং ছড়িয়ে দিতে পারে খুদে ফুটবলারদের মধ্যে।
দুই, ভিডিও ট্রেনিং। ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ। আবার সরাসরি ভিডিও ক্লাসও নেওয়া হবে।
তিন, আর্থিক সাহায্য। অনন্তপুর ফুটবল লিগ চালানোর এবং ছেলে-মেয়েদের ফুটবল শিক্ষার খরচের ব্যাপারে অনুদান।
আরও একটা ব্যাপার পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে লা লিগার কর্তার কথায়। তাঁরা মূলত জোর দিচ্ছেন মেয়ে ফুটবলারদের উন্নতির ওপর। কেন এই সিদ্ধান্ত? হোসে বলছেন, ‘‘স্পেনে আমাদের কাছে মেয়েদের ফুটবল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। আমরা তাই মেয়েদের ফুটবলের প্রসারের ওপর সব সময় বেশি জোর দিই। আমরা চাই, অনন্তপুরের ছেলেরা বুঝতে শিখুক মেয়েরাও ফুটবল খেলে।’’ হোসে জানাচ্ছেন, তাঁরা সমীক্ষা করে দেখেছেন, ভারতীয় ফুটবল দর্শকদের মধ্যে সত্তর শতাংশের বেশি পুরুষ দর্শক। তাই মেয়েদের আরও বেশি করে ফুটবলে আকৃষ্ট করা একটা লক্ষ্য।
হোসে বলে দিচ্ছেন, ‘‘লা লিগার কাছে মহিলা ফুটবল সব সময় গুরুত্ব পায়। আমাদের প্রকল্পে সব সময় মেয়েদের জন্য একটা আলাদা জায়গা থাকে। ভারত নিয়ে আমরা যখন আগ্রহী হয়েছিলাম, তখন থেকেই মেয়েদের ফুটবলের ব্যাপারটা আমাদের কাছে অগ্রাধিকার পেয়েছে।’’ লা লিগার প্রতিনিধি আরও একটা ব্যাপার পরিষ্কার করে দিতে চান— ‘‘আমরা এটা একটা সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ হিসেবেই দেখছি। আমরা চাই সমাজের সব স্তরেই মেয়েরা সফল হোক। এই প্রোগ্রামটা মূলত গ্রামের পিছিয়ে পড়া ছেলে-মেয়েদের জন্য।’’ জানা গিয়েছে, অনন্তপুর ফুটবল লিগে চারশোর বেশি মেয়ে এখন বিভিন্ন দলে খেলছে।
কাঠামোগত ছাড়া আর কী ভাবে ফুটবল প্রসারে নামতে চান? লা লিগা ইতিমধ্যেই আইএসএল এবং রিলায়্যান্স ফাউন্ডেশনের সঙ্গে কাজ করছে। ফাউন্ডেশনের বেশ কিছু খুদে ফুটবলারকে স্পেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কিছু দিন আগে বলে জানালেন হোসে। তবে অনন্তপুর লিগ নিয়ে এই মুহূর্তে সে রকম কোনও ‘এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম’-এর পরিকল্পনা তাঁদের নেই। হোসের বক্তব্য, ‘‘অনন্তপুরে আমরা এখন সবে কাজ শুরু করলাম। এটা হাই পারফরম্যান্স প্রোগ্রাম নয়। এটা মূলত সামাজিক ব্যাপার, যেখানে আমরা পিছিয়ে পড়া সমাজের ছেলে-মেয়ের জন্য কাজ করছি। এই মুহূর্তে তাই ফুটবলারদের স্পেনে নিয়ে গিয়ে ট্রেনিং করানোর কোনও পরিকল্পনা নেই। তার চেয়ে মনে হয়, কোচেদের স্পেনে নিয়ে গিয়ে ট্রেনিং দিলে বেশি কাজ হবে। তবে যদি সত্যিই কোনও ভাল ফুটবলার উঠে আসে, তখন তো তার জন্য স্পেনের দরজা খোলা থাকবেই।’’
লা লিগার হাত ধরে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে কোনও ফুটবল বিপ্লব শুরু হয় কি না, সেটাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy