Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Teen age swimmer

দিনের পর দিন যৌন হেনস্থা, গোয়ায় কোচের দুষ্কর্মের ভিডিয়ো তুলল বাংলার কিশোরী সাঁতারু

ফাঁস হওয়া সেই ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, আগে থেকেই ঘরের একটা জায়গায় ভিডিয়ো রেকর্ডার অন করে একটি মোবাইল রেখে দিচ্ছে ওই কিশোরী। তার পর সে এগিয়ে যায় ঘরের দরজার দিকে।

ফাঁস হওয়া সেই ভিডিয়ো থেকে নেওয়া ছবি।

ফাঁস হওয়া সেই ভিডিয়ো থেকে নেওয়া ছবি।

কৃশানু মজুমদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৯:১১
Share: Save:

নিজের কোচের বিরুদ্ধেই যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলল বাংলার এক প্রতিশ্রুতিমান কিশোরী সাঁতারু। গত ছ’মাস ধরে বাংলার নামী সেই কোচ জাতীয় পর্যায়ে অংশ নেওয়া ওই সাঁতারুর সঙ্গে অশালীন আচরণ করতেন বলে অভিযোগ। শেষে উপায় না দেখে ওই কিশোরী নিজের লুকিয়ে রাখা মোবাইলে কোচের যৌন হেনস্থার ভিডিয়ো তুলে তা প্রকাশ্যে এনে ‘সাহায্য’ চাইল। এই ঘটনায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ বাংলার ক্রীড়া মহল।

ফাঁস হওয়া সেই ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, আগে থেকেই ঘরের একটা জায়গায় ভিডিয়ো রেকর্ডার অন করে একটি মোবাইল রেখে দিচ্ছে ওই কিশোরী। তার পর সে এগিয়ে যায় ঘরের দরজার দিকে। খোলা দরজা দিয়ে এর পর ওই কোচকে ঢুকতে দেখা যায়। কিশোরীর ডান পায়ে ক্রেপ ব্যান্ডেজ বাঁধা। কোচ এসে প্রথমে সেই চোটের জায়গাটা দেখেন। তার পর নানা ভাবে কিশোরীর গায়ে হাত দেন। কিছু ক্ষণ পর তিনি ঘর থেকে বেরিয়েও যান। এর পর মোবাইলের ভিডিয়ো রেকর্ডার অফ করতে দেখা যায় কিশোরীকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিয়োর সত্যতা যদিও আনন্দবাজার যাচাই করেনি।

মঙ্গলবার ওই কিশোরীর বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তাঁর মেয়ে বর্তমানে চূড়ান্ত হতাশ এবং মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। কারও সঙ্গেই মেয়ে কথাও বলছে না বলে তাঁর দাবি। যদিও অন্য একটি ভিডিয়ো বার্তায় ওই কিশোরীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘গোয়ায় আসার পর থেকেই স্যার আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছিলেন। আমি প্রতিবাদ জানালে বলতেন, কাউকে বলবে না। তোমার ভবিষ্যৎ রয়েছে। আমি ভয়ে কাউকে কিছু বলতাম না। কিন্তু, এই নোংরামি আমার পক্ষে আর সহ্য করা সম্ভব হচ্ছিল না। সে কারণেই সব কিছু ফাঁস করার সিদ্ধান্ত নিই। এখন আমি সাহায্য চাইছি।’’

আরও পড়ুন: চেয়েছিলেন নৃত্যশিল্পী হতে, এখন তাঁর ব্যাটেই রাতের ঘুম ওড়ে বোলারদের

যে কোচের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে ওই কিশোরী, সাঁতারের সার্কিটে তাঁর যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। কিশোরীর পরিবারের মতে তিনি রীতিমতো প্রভাবশালী। সে কারণেই ভয় পাচ্ছেন তাঁরা। ওই কিশোরীর বাবার দাবি, কোচের ডাকে বাংলা ছেড়ে মেয়েকে নিয়ে তাঁরা সপরিবারে চলতি বছরের মার্চে চলে গিয়েছিলেন গোয়ায়। আর্থিক অবস্থা ভাল নয় তাঁদের। কিশোরীর বাবা একটি স্কুলের গাড়ি চালাতেন। মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সেই গাড়ি বিক্রি করেই গোয়ায় গিয়েছিলেন তাঁরা। ওই কিশোরীর বাবা এ দিন আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘আমরা সব বিক্রি করে গোয়া চলে গিয়েছিলাম। প্রথমটায় তো কিছুই বুঝতে পারিনি, জানতামও না। মেয়েকে দেখতাম কেমন যেন ভয়ে ভয়ে থাকত। প্র্যাকটিসেও মন ছিল না ওর। এক দিন আমি খুব বকাবকি করি। তখন আমাদের কাছে কান্নাকাটি করে সব বলে দেয় মেয়ে। বুদ্ধি করে একটা ভিডিয়োও তুলে রেখেছিল। সেই ভিডিয়ো দেখে তো আমরা ভয় পেয়ে যাই। কোচের উপরে আমাদের শ্রদ্ধা নষ্ট হয়ে যায়। ওকে ভগবানের আসনে বসিয়েছিলাম!’’

গোয়া থেকে ফিরে তাঁরা সোমবার রাতে রিষড়া থানায় অভিযোগ জানাতে যান বলে দাবি করেন ওই কিশোরীর বাবা। থানার কর্মীরা অভিযোগ না নিয়ে তাদের গোয়ায় গিয়ে অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দেন বলে দাবি। এ ব্যাপারে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের ডেপুটি কমিশনার (শ্রীরামপুর) ঈশানী পালের সঙ্গে আনন্দবাজারের তরফে যোগাযোগ করা হয়। ঘটনার কথা শুনে তিনি পরে বলেন, ‘‘রিষড়া থানাকে আমি গোটা ঘটনার কথা জানিয়েছি। ওই কিশোরী যদি অভিযোগ জানাতে চান, তা হলে তিনি যেন রিষড়া থানায় যান। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করা হবে। কেন থানা প্রথমে অভিযোগ নেয়নি, সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি।’’

ইতিমধ্যেই বিষয়টি ছড়িয়ে পড়েছে গোটা ক্রীড়ামহলে। অভিযুক্ত কোচের শাস্তিতে সরব অনেকেই। এ ব্যাপারে এশিয়ান অল স্টার খ্যাত গোলকিপার অতনু ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘যদি ঘটনা সত্যি হয়, তা হলে ওই কোচের দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি হওয়াই উচিত। উনি কোচের কলঙ্ক।’’

বিশ্ব তিরন্দাজিতে সোনা জেতা দোলা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘একটা ঘটনার প্রেক্ষিতে বলা যায় না সবাই খারাপ। আজকাল টিভি, খবরের কাগজ খুললেই তো এ ধরনের ঘটনা আমাদের চোখে পড়ে। এটা একজনের মনোবৃত্তির ব্যাপার।’’

বাংলার সাঁতার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক স্বপন আদক বলেন, ‘‘ওই ভিডিয়ো আমিও পেয়েছি। আমি স্তম্ভিত। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। কোচ তো শিক্ষক। এক জন শিক্ষক এটা করতে পারেন! ভাবতেই পারছি না। ঘটনা যদি সত্যি হয়, ওই কোচের চরম শাস্তি চাইছি।’’

রাজ্যের মন্ত্রী তথা প্রাক্তন ক্রিকেটার লক্ষ্মীরতন শুক্ল ঘটনার কথা শুনে বলেন, ‘‘এই ধরনের কথা শুনলে মনটা খারাপ হয়ে যায়। তবে এক জনের জন্য সকলকে খারাপ ভাবার কোনও কারণ নেই। বিশ্বাস হারালে চলবে না। ওই কোচ দোষী হলে তাঁর উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত।’’

তবে যে কোচের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনেছে কিশোরী সাঁতারু, তাঁর সঙ্গে এ দিন একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাঁর দু’টি মোবাইলই সুইচড অফ ছিল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE