রবিবারের মহারণে আমনা-ডুডু যুগলবন্দি ভরসা ইস্টবেঙ্গলের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
কী আশ্চর্য পরিবর্তন দুই শিবিরে।
আই লিগে প্রথম পর্বের ডার্বির আগে সনি নর্দে, দিপান্দা ডিকা ও আনসুমানা ক্রোমার আতঙ্কে কার্যত রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল কোচ খালিদ জামিলের। ম্যাচের আগে পাঁচ-ছয় দিন ধরে অনুশীলনে তিনি সব চেয়ে ব্যস্ত ছিলেন মোহনবাগান ত্রিফলাকে আটকানোর মহড়ায়। অথচ দ্বিতীয় লেগের ডার্বির আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে সম্পূর্ণ উল্টো ছবি। সবুজ-মেরুন শিবিরে এখন আতঙ্ক ইস্টবেঙ্গলের ফরোয়ার্ডদের নিয়ে। নেপথ্যে লাল-হলুদের নতুন স্ট্রাইকার ডুড ওমাগবেমি। যাঁর প্রভাবে বদলে গিয়েছে খালিদের স্ট্র্যাটেজিও!
আই লিগের প্রথম ম্যাচ থেকেই উইলিস প্লাজাকে সামনে রেখে এক স্ট্রাইকার স্ট্র্যাটেজিতে দলকে খেলিয়ে চলেছেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। শত সমালোচনাতেও সিদ্ধান্ত বদলাননি। শুক্রবার সকালে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন সংলগ্ন মাঠে অনুশীলনে দেখা গেল অন্য খালিদকে। প্র্যাক্টিস ম্যাচে প্লাজার সঙ্গে ফরোয়ার্ডে খেলালেন ডুডু-কে। অর্থাৎ, ৪-৪-২ ফর্মেশনে আক্রমণের ঝড় তোলার ইঙ্গিত। নাইজিরীয় স্ট্রাইকার জোড়া গোল করে স্বস্তিও দিলেন খালিদকে। ঘণ্টা দু’য়েকের অনুশীলনে মাত্র একবারই শুধু ডুডুকে এক স্ট্রাইকার হিসেবে খেলালেন তিনি। প্র্যাক্টিসের পরে ডুডু বললেন, ‘‘এর আগেও যখন ইস্টবেঙ্গলে এসেছিলাম, সে বারও প্রথম ম্যাচটাই ছিল ডার্বি। তাই আমার উপর কোনও চাপ নেই।’’
মোহনবাগানকে হারিয়ে ডার্বি জিততে শুধু সতীর্থরা নন, সমর্থকরাও তাকিয়ে ডুডু-র দিকে। লাল-হলুদ স্ট্রাইকার অবশ্য বলছেন, ‘‘আমি গোল করার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামব। কিন্তু আমার গোলের চেয়েও মূল্যবান দলের জয়।’’ আর ক্লাবের ওয়েবসাইটে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কাতসুমি ইউসা বলেছেন, ‘‘প্রথম ডার্বিতে জিততে পারিনি। এই ম্যাচে তিন পয়েন্ট দরকার।’’
ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের এই আগুনে মেজাজই যে সবুজ-মেরুন শিবিরে উদ্বেগ বাড়িয়েছে, তা অনুশীলনেই স্পষ্ট। প্রথম লেগের ডার্বির আগে খালিদের যা স্ট্র্যাটেজি ছিল, এ দিন বিকেলে যুবভারতী সংলগ্ন মাঠে সেটাই দেখা গেল শঙ্করলাল চক্রবর্তীর অনুশীলনে।
৩ ডিসেম্বরের ডার্বিতে মোহনবাগানের জয়ের নায়ক ছিলেন কিংগসলে ওবুমনেমে। সবুজ-মেরুন ডিফেন্ডার সনির কর্নার থেকে গোল করেছিলেন। রবিবারের ম্যাচে তাঁর সেই স্বাধীনতা পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ, এ দিন কিংগসলে, অরিজিৎ বাগুই, কিংশুক দেবনাথ ও রিকি লাল্লাওমাওমা— চার ডিফেন্ডারকে নিয়েই ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণের ঝড় থামানোর মহড়া দিলেন মোহনবাগান কোচ। সদ্য যোগ দেওয়া লেবাননের আক্রম মোঘরাবি ও ডিকা ছিলেন ডুডু-প্লাজার ভূমিকায়। কিংগসলেকে যত বার রক্ষণে ছেড়ে ওঠার চেষ্টা করছেন, বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন শঙ্করলাল। তিনি খোলাখুলি বললেন, ‘‘সেট পিস থেকে যাতে ওরা গোল করতে না পারে, তার জন্যই এই অনুশীলন।’’ আর কিংগসলের কথায়, ‘‘আগের ডার্বিতে আমি গোল করেছি। কিন্তু তা অতীত। এই মুহূর্তে শুধু রবিবারের ডার্বি নিয়েই ভাবতে চাই।’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলের পুরো দলটাই ভয়ঙ্কর। তবে ডুডুর বিরুদ্ধে আমি এর আগে খেলেছি কলকাতা লিগে।’’
মোহনবাগান কোচ অবশ্য সতর্ক। ডার্বিতে তিনি এগিয়ে রাখছেন প্রতিপক্ষকেই। শুক্রবার বিকেলে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব তাঁবুতে সাংবাদিক বৈঠকে শঙ্করলাল বললেন, ‘‘সব দিক থেকেই এগিয়ে ইস্টবেঙ্গল। প্রথমত লিগ টেবলে ওরা আমাদের চেয়ে উপরে। তার উপর ইস্টবেঙ্গলের কোচ খালিদ জামিল অভিজ্ঞতায় আমার চেয়ে অনেক এগিয়ে। মুম্বই এফসি-র হয়ে আই লিগে ১০-১১ বছর কোচিং করিয়েছে। গত মরসুমে ওর কোচিংয়েই আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আইজল এফসি।’’ খালিদ যদিও শঙ্করলালের প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত নন। বললেন, ‘‘মোহনবাগানের মতো দলকে হাল্কা ভাবে নেওয়ার প্রশ্নই নেই। তা ছাড়া এই লড়াই দুই কোচের নয়। ইস্টবেঙ্গল খেলবে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে।’’
প্রথম পর্বের ডার্বির আগেও ইস্টবেঙ্গলকে ফেভারিট অ্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ম্যাচ জিতে মাঠ ছেড়েছিলেন সনি-রা। সেই দলের অনেকেই রবিবার নেই। চোটের জন্য সনিকে ছেড়ে দিয়েছে মোহনবাগান। পেটের সমস্যায় কাবু এক নম্বর গোলরক্ষক শিল্টন পাল। শুক্রবার তাঁকে হাসপাতালেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। যদিও রাতের দিকে ছেড়ে দেওয়া হয় সবুজ-মেরুন গোলরক্ষককে। মাঝমাঠের অন্যতম ভরসা ইউতা কিনোয়াকি এখনও পুরো সুস্থ নন। উদ্বিগ্ন শঙ্করলাল হয়তো সেই কারণেই বলছিলেন, ‘‘প্রথম ডার্বিতে আমাদের কাছে হারের পরে কিন্তু ইস্টবেঙ্গল জিতেছে এবং ড্র করেছে। ওরা আর কোনও ম্যাচ হারেনি। যা প্রমাণ করছে, ওরা ধীরে ধীরে উন্নতি করেছে। আমরাই বরং পিছিয়ে গিয়েছি। ঘরের মাঠে হেরেছি, ড্র করেছি। তবে আমি চ্যালেঞ্জ নিতে ভয় পাই না।’’
আক্রম, ডিকা-রা কি শুনলেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy